সাপের ছোবলে নেতিয়ে পড়া এক বছরের শিশুটিকে দেখেই চিকিৎসক জানিয়ে দিয়েছিলেন, সে আর বেঁচে নেই। কিন্তু মন মানেনি পুরুলিয়ার বোরো থানার রামপুর গ্রামের সাহেবরাম মান্ডির। পড়শিদের কথায় সোমবার সন্ধ্যা থেকে ছেলে সমুকে বাঁচানোর আশায় দু’দিন ধরে মৃতদেহ নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ওঝা-গুণীনদের কাছে যান, বাড়িতে পুজোপাঠও হয়। এই ভাবে দেরি করতে থাকায় শেষ পর্যন্ত শিশুটির দেহে পচনও ধরে যায়। ওই ঘটনার পরে এলাকার বাসিন্দা তথা জেলা পরিষদের সদস্য তৃণমূলের প্রতিমা সোরেন বলছেন, “এমন ঘটনা ঘটেছে বলে জানতাম না। তবে এলাকায় এখনও ডাক্তারের বদলে ওঝা, কবিরাজের উপর কিছু মানুষের ভরসা রয়েছে।” ওই গ্রাম থেকে এক কিলোমিটার দূরে মানবাজার ২ ব্লক অফিস। বিডিও পার্থ কর্মকারও বলেন, “এখনও এই জেলার অনেক এলাকায় নানা কুপ্রথা রয়েছে। শীঘ্রই ওই এলাকায় সচেতনেতা প্রচার চালাব।”
সাহেবরামবাবুর ছেলের হাতে সাপ ছোবল দেওয়ার পরে কোথায় চিকিৎসা করাতে নিয়ে যাবেন, তা নিয়েই কিছুক্ষণ দোলাচলে ছিলেন পরিবারের লোকজন। শেষে ভাড়া গাড়িতে করে শিশুটিকে নিয়ে ১২ কিলোমিটার দূরে মানবাজার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান, ততক্ষণে দু’ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। শিশুটি ততক্ষণে মারাও গিয়েছে। তখন পড়শিরা সাহেবরামবাবুকে পরামর্শ দেন, পুঞ্চার বুধপুর গ্রামে এক জন গুণীন রয়েছেন। শিশুর দেহ আঁকড়ে সটান গাড়িতে বুধপুরে যাওয়া হয়। তাঁর কেরামতিতেও শিশু নড়েনি। তিনি হাল ছেড়ে দেন। তখন বান্দোয়ান থানার চিরুডি গ্রামে আর এক ওঝার কাছে যাওয়া হয়। তিনিও এক সময় হাল ছেড়ে দেন।
কিন্তু সেখানেই শেষ নয়। মঙ্গলবার বেলার দিকে সাহেবরামবাবুর বাড়িতে হাজির হন আরও দুই ওঝা। তাঁরা বান্দোয়ান থানার কড়মো ও বোরো থানার গোয়ালাপাড়ার বাসিন্দা। শিশুটি ও থেঁতলে মারা সাপটির দেহ পাশাপাশি রেখে শুরু হয় মন্ত্র পাঠ। সাঁওতাল পাড়ার বেশিরভাগ বাসিন্দা মঙ্গলবার কার্যত উপবাস করেন। শেষ অবধি শিশুটির শরীরে পচন ধরতে শুরু করেছে বুঝতে পেরে দুই কবিরাজ রাতেই বিদায় নেন। বুধবার সকালে শিশুটিকে মাটি চাপা দেওয়া হয়।
মানবাজারের বিএমওএইচ অরুণাভ ঘোষ বলছেন, “একে দেরি হয়েছে। তার উপরে হাতে বাঁধন দিয়ে নিয়ে এলে চিকিৎসায় হয়তো শিশুটা বেঁচে যেত।” পেশায় কৃষিমজুর সাহেবরাম বলছেন, “কী করব? ওইসময় যে যা পরামর্শ দিয়েছেন সব মেনেছি। একমাত্র ছেলে মারা গেলে কি কারও মাথা ঠিক থাকে?”
ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক মধুসূদন মাহাতো বলেন, “কুসংস্কার দূর করতে আমরা তো প্রচার চালাব। কিন্তু প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলগুলিকেও এগিয়ে আসতে হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy