বঙ্কু রাজোয়াড়। —নিজস্ব চিত্র।
শ্বশুরবাড়ির গ্রামে গাজনের মেলা। পেশায় দিনমজুর হলেও গাজনের মেলায় সঙ সাজা তাঁর অনেক দিনের শখ। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত এই শখ নিয়ে গর্বও ছিল বঙ্কু রাজোয়াড়ের। হনুমান সেজে সেই খেলা দেখাতে গিয়েই আগুনে পুড়ে মৃত্যু হল ৫৫ বছরের বঙ্কুবাবুর।
মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে পুরুলিয়া মফস্সল থানার সুরুলিয়া গ্রামে। মৃত ব্যক্তি সুরুলিয়ারই বাসিন্দা। এই ঘটনা উস্কে দিচ্ছে বছর দুয়েক আগে এই থানা এলাকারই বাঘড়া গ্রামের ঘটনার স্মৃতি। সেখানেও গাজনের মেলায় এই ভাবেই হনুমান সেজে খেলা দেখাতে গিয়ে আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয়েছিল ভীম রাজোয়াড় নামে এক সঙ শিল্পীর।
বৈশাখ মাসের ১৮ থেকে ২০ তারিখ অবধি তিন দিনের বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হয় সুরুলিয়ায়। মেলার শেষ দিনে সঙ সাজা এখানকার গাজনের অনেক দিনের রীতি। স্থানীয় বাসিন্দা রঞ্জিত রাজোয়াড় জানান, শেষ দিনে অনেকেই সঙ সাজেন। বঙ্কুবাবুও হনুমান সেজেছিলেন। বঙ্কুবাবুর শ্যালক আনন্দ রাজোয়াড় বলেন, “জামাইবাবু দিনমজুরি করেই দিন চালাতেন। কিন্তু, এলাকায় কোথাও গাজন হলে তিনি সঙ সাজতেন।” বঙ্কুবাবু আদতে এই থানা এলাকারই রাঘবপুরের বাসিন্দা। আনন্দবাবু বলেন, “সুরুলিয়ায় জামাইবাবুর শ্বশুরবাড়ি। বছর খানেক ধরে এখানেই থাকতেন। ওঁর বাবাও সঙ সাজতেন। রবিবার দুপুরে হনুমান সেজে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন।” সঙরা গ্রামের রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ঘুরে বিকেলের দিকে মেলা প্রাঙ্গণে আসেন।
স্থানীয় সূত্রের খবর, কোনও খেলা দেখানোর জন্য দেশলাই জ্বালতে গিয়েই আগুন ধরে যায় বঙ্কুবাবুর পোশাকে। কেউ কিছু বোঝার আগেই দাউদাউ জ্বলতে থাকেন তিনি। প্রথমে দূর থেকে প্রত্যক্ষদর্শীরা ভেবেছিলেন, বঙ্কুবাবু খেলা দেখাচ্ছেন। কিন্তু তাঁর আর্ত চিৎকারে ভুল ভাঙে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে গাড়িতে চাপিয়ে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে তিনি মারা যান। শরীরের বেশির ভাগ অংশই পুড়ে গিয়েছিল বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।
বঙ্কুবাবুর একমাত্র সন্তান, স্থানীয় স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র বিশ্বনাথের কথায়, “বাবা শনিবারই শহর থেকে হনুমানের পোশাক ভাড়ায় নিয়ে এসেছিল। আমাকে বলেছিল, লোকজন আনন্দ পাবে।” স্বামীকে হারিয়ে শোকে ভেঙে পড়েছেন ডাক্তারিদেবী। এ দিন বাড়ির উঠোনে বসে বলছিলেন, “ও চাইত লোকে আনন্দ পাক। তাহলেই ও খুশি। রবিবার কাজে বেরিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানেই শুনি ওর পোশাকে আগুন লেগেছে। যখন ফিরলাম তখন ওকে হাসপাতালে নিয়ে চলে গিয়েছে। একটা আশা ছিল, মানুষকে আনন্দ দিতে চেয়েছিল। নিশ্চয়ই ভাল হয়ে ফিরবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy