Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

কর্মিসভাতেও তৃণমূলের ‘দ্বন্দ্ব’ মিটল না কসবায়

এক দিন আগেই গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব ভুলে ভোটের লড়াইয়ে একজোট হওয়ার ডাক দিয়েছেন দলনেত্রী। কিন্তু সেই বার্তা যে দলের সর্বত্র পৌঁছয়নি, তা ধরা পড়ল ঠিক পরের দিনই। বুধবার পাড়ুইয়ের কসবা পঞ্চায়েতে বোলপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থীর নির্বাচনী কর্মিসভা থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখলেন দলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর একটা বড় অংশই। মাত্র শ’খানেক সদস্য নিয়ে হওয়া ওই কর্মিসভায় ছিলেন কেবল দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল গোষ্ঠীর নেতা-কর্মীরাই।

হাতে গোনা কয়েক জনকে নিয়ে সভা করছেন প্রার্থী অনুপম হাজরা। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

হাতে গোনা কয়েক জনকে নিয়ে সভা করছেন প্রার্থী অনুপম হাজরা। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

মহেন্দ্র জেনা
পাড়ুই শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৪ ০০:২৬
Share: Save:

এক দিন আগেই গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব ভুলে ভোটের লড়াইয়ে একজোট হওয়ার ডাক দিয়েছেন দলনেত্রী। কিন্তু সেই বার্তা যে দলের সর্বত্র পৌঁছয়নি, তা ধরা পড়ল ঠিক পরের দিনই। বুধবার পাড়ুইয়ের কসবা পঞ্চায়েতে বোলপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থীর নির্বাচনী কর্মিসভা থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখলেন দলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর একটা বড় অংশই। মাত্র শ’খানেক সদস্য নিয়ে হওয়া ওই কর্মিসভায় ছিলেন কেবল দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল গোষ্ঠীর নেতা-কর্মীরাই। জেলার রাজনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণ, ভোটের মুখে দলের ‘বিক্ষুব্ধ’ অংশকে কাছে টানতে না পেরে অনুব্রতরই অস্বস্তি বাড়ল। এ দিনের ঘটনায় দলের টিকিট না পেয়ে কসবা পঞ্চায়েতে নির্দল প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা হৃদয় ঘোষের প্রতিক্রিয়া, “দলের জেলা সভাপতি আর তাঁর অনুগামীদের জন্যই ওই এলাকায় সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। তাই এলাকার সাধারণ মানুষ তাঁদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। ফলে কর্মিসভায় যা লোক হওয়ার ছিল, তা-ই হয়েছে।”

এ দিন সকালে প্রথমে সর্পলেহনা-আলবাঁধা পঞ্চায়েতের কোপাই কদমতলায় একটি রোড শো এবং প্রচার সভা ছিল তৃণমূল প্রার্থী অনুপম হাজরার। অনুব্রত না থাকলেও ছিলেন নানুরের বিধায়ক গদাধর হাজরা। প্রচার সভায় কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থকদের মাঝে অনুপম এলাকা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন। দলীয় সূত্রের খবর, বিকেল পাঁচটা থেকে কসবা পঞ্চায়েত এলাকায় নির্ধারিত ওই কর্মিসভা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অনিবার্য কারণ বশত তা এগিয়ে দুপুর দেড়টা থেকে করা হয়। কসবা পঞ্চায়েতের পিছন দিকে রক্ষাকালী মাতা সেবা সমিতির প্রাঙ্গণে হওয়া ওই সভায় প্রার্থী এবং দলের জেলা, যুব ও ব্লক নেতৃত্ব মিলিত হন। প্রথমেই দলের যুব সংগঠনের সভাপতি সুদীপ্ত ঘোষ বলেন, “ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি ঘণ্টা খানেকের নোটিসে এই এলাকায় কর্মিসভা করার জন্য। কীর্ণাহারে অন্য একটি জনসভা থাকায় এই সভা এগিয়ে আনতে হল।” এর পরে একে একে বিধায়ক গদাধর হাজরা, ব্লক সভাপতি রহিম চৌধুরী নিজের বক্তব্যে অনুপমকে বিপুল ভোটে জয়ী করানোর আহ্বান জানান। একই আর্জি ছিল প্রার্থীরও।

বর্তমানে ওই পঞ্চায়েতটি দলের টিকিট না পেয়ে নির্দল হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর দখলেই রয়েছে। এমনকী, পঞ্চায়েতের যিনি উপপ্রধান, তিনি দলীয় প্রতীকেই জিতেছেন। কিন্তু কাউকেই সভাস্থলের ধারেকাছে দেখা যায়নি। মেরেকেটে শ’খানেক কর্মী দেখে একসময় দলের সাত্তোর অঞ্চল সভাপতি লালু মোল্লাকে বলতে শোনা গেল, “কয়েকটি এলাকায় সন্ত্রাসের বাতাবরণ রয়েছে। তাই সব কর্মী-সমর্থকেরা আসতে পারেননি।” সুদীপ্তবাবুর উল্টো সুরে তিনি আবার দাবি করেন, “সন্ত্রাসের কারণেই আমরা এই কর্মিসভা বিকেল বেলা রাখার কথা ভেবেও এগিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছি।”

এ দিকে, যাঁর নেতৃত্বে তৃণমূল কসবা ও সাত্তোর অঞ্চলে মোটের উপরে দলের মুখ রক্ষা করেছিল, সেই সাত্তোর অঞ্চল সম্পাদক তথা পঞ্চায়েত সদস্য শেখ মুস্তফা এখন জেলে। পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে কসবার নির্দল প্রার্থী হৃদয় ঘোষের বাবা সাগরচন্দ্র ঘোষ খুনের ঘটনায় তিনি অন্যতম অভিযুক্ত। এমন দাপুটে নেতার অনুপস্থিতি কি লোকসভা ভোটে দলের ক্ষতি করবে? লালু মোল্লার দাবি, “বাঁধ নবগ্রামের ঘটনাটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। শেখ মুস্তফা না থাকলেও নির্বাচনে তার কোনও প্রভাব পড়বে না।” তা হলে প্রথম কর্মিসভাতেই এত কম লোক কেন? এ বারে তাঁর জবাব, “আমাদের দলে কোনও গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব নেই। সময় এগিয়ে দুপুরে করাতেই এমনটা হয়েছে।”

সভায় না গেলেও কাছে পিঠে থেকেই গোটা বিষয়টি চাক্ষুষ করছিলেন বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর নেতা-কর্মীরা। ওই অংশের কসবা অঞ্চল সভাপতি নিখিল পাল বলেন, “আমাকে সভার কথা বলা হয়নি। কেন এলাকার সব তৃণমূল কর্মী সেখানে গেলেন না, তার উত্তর তো নেতারাই দিতে পারবেন।” তবে, তাঁর সংযোজন, “অনুপম আমাদেরও প্রতিনিধি। তৃণমূল স্তরের মানুষ জনের সঙ্গে মেলামেশা করে ভোট চাইতে এলে হয়তো এমনটা হত না।” এ দিন পঞ্চায়েত অফিসের প্রায় ৫০ মিটার দূরেই যখন ওই সভা হচ্ছিল তখন অফিসে উপস্থিত উপপ্রধান পার্বতী বাগদি। তিনি বলেন, “আমাকে কেউ ওই কর্মিসভায় আমন্ত্রণ জানাননি। করলেও পঞ্চায়েতে সবার সঙ্গে আলোচনা করে তবেই সিদ্ধান্ত নিতাম।” অনুব্রতর ফোন পরিষেবা সীমার বাইরে থাকায় চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

অন্য বিষয়গুলি:

mahendra jena parui anupam hazra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE