সিউড়ির তৃণমূল কার্যালয়ে ছবিটি তুলেছেন তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।
দলের কর্মী-সমর্থকেরা দিনভর নজর রেখেছিলেন টিভির পর্দায়। কিন্তু যাঁর জন্য এই উৎকণ্ঠা, তাঁর এ সব নিয়ে হেলদোল নেই। বুধবার মঙ্গলকোটে মুখ্যমন্ত্রীর সভার ধকলে ঘুম ভেঙেছিল একটু দেরিতে। তবে বিছানা ছেড়ে তৈরি হয়ে প্রচারসভায় ছুটতে দেরি করেননি।
বৃহস্পতিবার পাড়ুই-কাণ্ডের শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্ট কী বলল, কর্মীদের মধ্যে যাবতীয় আলোচনা ছিল সে নিয়েই। কিন্তু মামলায় অভিযুক্ত তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল সারা দিনই ছিলেন চেনা ছন্দে। শুনানির পরে বিকেলে মুরারইয়ের পাইকরে যখন শুনলেন, বৃহস্পতিবারও তদন্ত নিয়ে হাইকোর্ট অসন্তোষ প্রকাশ করেছে, অনুব্রতর সেই এক প্রতিক্রিয়া, “আইন আইনের পথে চলবে।”
দলীয় সূত্রে খবর, বুধবার মঙ্গলকোটের সভা সেরে সোজা গিয়েছেন বোলপুরের দলীয় কার্যালয়ে। সেখানে জেলার নেতাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসে পড়েন। ছিলেন বোলপুরের বিধায়ক তথা রাজ্যের মৎস্য মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ। ভোট নিয়ে হওয়া ওই বৈঠক প্রায় রাত দেড়টা পর্যন্ত চলে। ক্লান্তির জেরে মাঝে অসুস্থ বোধ করায় বাড়িতে ঘুমোতে চলে যান অনুব্রত। এ দিন অন্য দিনের তুলনায় তাই আধ ঘণ্টা দেরিতে সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ ঘুম থেকে উঠলেন। মুখ ধুয়ে সুগারের ওষুধ নিয়েই দলীয় কর্মী-সমর্থকদের ফোন ধরতে শুরু করলেন। জেলার দুই লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থীদের প্রচার নিয়ে নানা নির্দেশ দিতে দিতেই শরীর চাঙ্গা করতে মুখে দিলেন বাসব পাতার রস। এর পরেই স্নান করে পুজা সেরেছেন। প্রায় দু’ঘণ্টা দোতলার ঘরে কাটানোর পরে ১২টা ৪০ মিনিট নাগাদ নীচে নেমে এলেন। তত ক্ষণে বাড়ির উঠোনে গাড়ি হাজির। দুপুরের আহার সারলেন মুড়ি, পেপে ও রুই মাছের ঝোলে। তারই মধ্যে বাড়িতে আসা কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কথাবার্তাও চলল। ঠিক দুপুর ১টা নাগাদ মাকে প্রণাম করে গাড়ি ছোটালেন মুরারইয়ের পাইকরের দিকে। সামনে পাইলট ভ্যান।
এ দিন অবশ্য সকাল থেকেই জেলায় তৃণমূলের পার্টি অফিসগুলিতে কর্মী-সমর্থকদের বাড়তি ভিড় লক্ষ করা গিয়েছে। অধিকাংশেরই নজর ছিল পার্টি অফিসের টিভি পর্দায়। বোলপুরের দলীয় কার্যালয়ে অবশ্য রোজদিনের মতো কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি ভিড় করেছিলেন অসুস্থ রোগী থেকে বিচার প্রার্থী, জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। দলের জেলা যুব সভাপতি সুদীপ ঘোষের মতো অন্যান্য জেলা নেতারা তাঁদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছিলেন। সকাল থেকে টিভি পর্দায় উদ্বিগ্ন চোখ ঘোরা ফেরা করলেও আত্মবিশ্বাসী মুখে তাঁরা বলছিলেন, “যে যাই বলুক, কেষ্টদার কিছু হবে না।” একই চিত্র ছিল দলের সিউড়ি কার্যালয়েও। তবে, সকালে অন্য চিত্র দেখা গেল মুরারই ১ ব্লকের পার্টি অফিসে। পার্টি অফিসে জনা দশেক কর্মী নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন দলের শ্রমিক সংগঠনের নেতা মহম্মদ রফিউদ্দিন। বললেন, “কেষ্টদার কিচ্ছু হবে না। ওঁর নাম তো প্রথম এফআইআর-এ ছিলই না।” বিকেলে হাইকোর্টে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তর মন্তব্যের পরে অবশ্য কেউ-ই কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাইলেন না। দিনের শেষে নেতা-কর্মীদের চোখেমুখে ‘স্বস্তি’ ফিরলেও তাঁরা যে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন, তা স্পষ্টই নজরে পড়ল। এক জন বলেই ফেললেন, “ফাঁসটা তো মনে হচ্ছে আরও জোরাল হল। এটা কেটে কেষ্টদা এখন কী ভাবে বেরোয়, সেটাই দেখার!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy