সংঘর্ষের পরে দু’পক্ষই থানায় অভিযোগ জানিয়েছে। অথচ রাজ্যে শাসকদল তৃণমূলের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে বিজেপির ৫ জন কর্মীকে গ্রেফতার করল পুলিশ। রবিবার রাত পর্যন্ত তৃণমূলের কাউকে গ্রেফতার তো দূরের কথা আটকও পর্যন্ত করেনি পুলিশ। ঘটনাস্থল ইলামবাজার। স্বাভাবিক ভাবেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠেছে। বিরুদ্ধে সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের কটাক্ষ, এটা নতুন কিছু নয়।
এলাকার রাস্তা সংস্কার এবং চুরি, ছিনতাই, সন্ত্রাস-সহ দিনের পর দিন বাড়তে থাকা অসামাজিক কাজকর্ম বন্ধ করা ও পুলিশ প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকার দাবিতে বিজেপির ইলামবাজার ব্লক কমিটির উদ্যোগে এ দিন সকালে মিছিল হয়। ইলামবাজার বাসস্ট্যান্ডে একটি সভাও করে বিজেপি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইলামবাজারের ওপর দিয়ে যাওয়া ৬০ নম্বর জাতীয় সডকের বেশ কিছু জায়গা বেহাল। তা ছাড়া ইলামবাজার সংলগ্ন আশপাশের শহরগুলিতে যাওয়ার রাস্তাও শোচনীয়। রাস্তা বেহালের জন্য ইলামবাজার থেকে কয়রা যাওয়ার রুটের একাধিক বাস অনিয়মিত হচ্ছে বলে দাবি বাসিন্দাদের। তাঁরা জানান, ইলামবাজার-কয়রা রাস্তার উপর নানাশোল, মঙ্গলডিহি, বাতিকার এবং বিলাতি পঞ্চায়েতের লোকজন নির্ভরশীল। এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা বেহালের জন্য সমস্যা হচ্ছে।
অভিযোগ, মিছিল ও পথসভা সেরে দুপুর দেড়টা নাগাদ বাড়ি ফিরছিলেন বিজেপি কর্মী তন্ময় চক্রবর্তী। রাস্তায় তাঁকে একা পেয়ে তৃণমূলের কিছু নেতাকর্মী মারধর করেন। বিজেপির কিছু নেতাকর্মী ঘুড়িষা চিড়ে মিলের কাছে শেখ ইয়াকুব নামে এক তৃণমূল কর্মীকে পাল্টা পাল্টা মারধর করে। ওই ঘটনার খবর তৃণমূল ফের বিজেপির দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে শেখ আব্বাসউদ্দিন নামে আর এক কর্মীকে মারধর করে, কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। এর জেরে ইলামবাজারে বাসস্ট্যান্ডে জড়ো হন উভয় দলের নেতাকর্মীরা। খবর পেয়ে এসডিপিও (বোলপুর) সূর্যপ্রতাপ যাদব পুলিশ ও কমব্যাট ফোর্স এলাকায় নিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন। পুলিশ জানায়, এলাকায় উত্তেজনা থাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বসানো হয়েছে পুলিশ পিকেটও।
বিজেপি জেলা কমিটির অন্যতম সম্পাদক তথা ইলামবাজার ব্লক পর্যবেক্ষক চিত্তরঞ্জন সিংহের অভিযোগ, “শান্তিপূর্ণ ভাবে দলীয় কর্মসূচি সেরে বাড়ি ফেরার পথে আমাদের কর্মীসমর্থকের উপরে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা আক্রমণ করে। আমাদের দু’জন কর্মী আহত হয়েছেন। এমনকী দলীয় কার্যালয়ে তৃণমূল হামলা চালিয়েছে। ইলামবাজার থানায় তাদের ১৫ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি।” বিজেপির অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের ইলামবাজার ব্লক সভাপতি জাফারুল ইসলাম বলেন, “আমাদের কর্মীকে আটকে মারধর করেছে ওরা। এলাকায় সন্ত্রাস করার জন্য বহিরাগতদের জড়ো করেছে। আমরা ২৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি।”
উভয় দল একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও পুলিশ শুধুমাত্র বিজেপির কয়েকজন কর্মী-সমর্থককে গ্রেফতার করেছে। বিজেপির জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডলের প্রতিক্রিয়া, “পুলিশের এই আচরণে মোটেও অবাক হচ্ছি না। ওরা তো বহু দিন থেকে শাসক দলের হয়েই কাজ করছে। এ দিনের ঘটনায় ফের তা প্রমাণিত হল। আমাদের নিরপরাধ কর্মীদের পুলিশের এই গ্রেফতারির প্রতিবাদ করছি।”
এসডিপিও বলেন, “তৃণমূলের এক কর্মীকে মারধরের অভিযোগে ঘটনাস্থল থেকে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের হেফাজত থেকে তির-ধনুক, লাঠি উদ্ধার হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।” কিন্তু তৃণমূলের কাউকে গ্রেফতার করা হল না কেন? এর স্পষ্ট উত্তর অবশ্য মেলেনি। এসডিপিও শুধু বলেন, “গোটা ঘটনার তদন্ত চলছে। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy