দুমকার শিকারিপাড়ায় মাওবাদী নাশকতা পাল্টে দিল বীরভূমের ভোটের নিরাপত্তার ব্লু-প্রিন্ট। জেলার ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া এলাকায় বাড়তি ২-৩ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী নামানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে মাওবাদী উপদ্রুত এলাকায় ভোটকর্মীদের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে বলে জানাচ্ছে জেলা প্রশাসন। নির্বাচন চলার সময় আকাশ থেকে হেলিকপ্টারে নজরদারি চালানো হবে। জঙ্গলমহলের রাজ্যের তিন জেলায় নির্বাচনে আগে হেলিকপ্টার থেকে নজরদারি শুরু হলেও বীরভূমে এই প্রথম এই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “সুষ্ঠু ভাবে নির্বাচনের জন্য আগে আমরা নিরাপত্তার একরকম পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু শিকারিপাড়ায় মাওবাদী হামলার প্রেক্ষিতে পরিকল্পনা পাল্টাতে হয়েছে। জেলায় আরও ২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে আসা হচ্ছে। সীমানায় নজরদারিও অনেক বাড়ানো হয়েছে।”
বুধবার বীরভূমে ভোট। বস্তুত, তার প্রায় এক সপ্তাহ আগে ঝাড়খণ্ডের ওই হামলা চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশনের। শুক্রবার এই জেলায় নির্বাচনের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে এসে নির্বাচন কমিশন নিযুক্ত রাজ্যের বিশেষ পর্যবেক্ষক সুধীরকুমার রাকেশ জানিয়ে গিয়েছিলেন, মাওবাদী নাশকতার কথা মাথায় রেখে বীরভূমে এ বার নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। রবিবার জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা, অতিরিক্ত জেলাশাসক দেবীপ্রসাদ কর্ণম ও পুলিশ সুপার রশিদ মুনির খান সাংবাদিক বৈঠক করেন। পুলিশ সুপার বলেন, “পর্যাপ্ত পরিমাণে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাওয়া গিয়েছে। একজনকেও বসিয়ে রাখা হবে না। ঝাড়খণ্ড সীমান্তবর্তী থানা এলাকায় বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় ভোটারদের ভয়ভীতি দূর করতে টহলও শুরু হয়ে গিয়েছে।”
এই জেলার ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া কাঁকরতলা, খয়রাশোল, রাজনগর, মহম্মদবাজার, রামপুরহাট, নলহাটি ও মুরারই এবং সরাসরি সীমানা লাগোয়া না হলেও দুবরাজপুর থানা এলাকাতেও একই রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কারণ অতীতে দুবরাজপুর এলাকাতেও মাওবাদী কার্যকলাপ হয়েছে। ভোট কর্মীদের কী ভাবে বুথে নিয়ে যাওয়া হবে এবং ভোট শেষে কী ভাবে তাঁদের ফেরানো হবে, সর্বোপরি কী ভাবে ১০০ ভাগ নির্বিঘ্নে ভোট করা যায়, তা নিয়ে শুক্রবার থেকেই দফায় দফায় বৈঠক শুরু হয়েছে পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্তাদের মধ্যেও। প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, জেলার সীমানাবর্তী কিছু বুথে কর্মীদের হেলিকপ্টারে পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভোট শেষেও তাঁদের হেলিকপ্টারেই ফিরিয়ে আনা হবে।
প্রশাসনের তরফে ওই সাতটি থানার যে সব এলাকাকে অতিস্পর্শকাতর হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল: কাঁকরতলার আড়ং, বাবুইজোড়, গেরুয়াপাহাড়ি, খয়রাশোলের হস্তিকান্দা, লোকপুর, রাজনগরের আবাদনগর, জয়পুর, কুরুলমেটিয়া, শিমলাপাহাড়ি, ভবানীপুর, মম্মদবাজারের চড়িচা জঙ্গল এলাকা, ছাগোলকুরি, শিউলিপাহাড়ি, তানসুলি, নিমদাসপুর, মুরালপুর, মকদাপাড়া, হরিণসিঙ্গা, ঢোলকাটা, বৈদ্যনাথপুর, রামপুরহাটের সুরিচুয়া, নারানপুর, সালবাদরা ইত্যাদি।
জেলার মোট ২৯৬২টি বুথের মধ্যে অতিস্পর্শকাতর ১২৩৫, স্পর্শকাতর ৬৭১ ও মাওবাদী উপদ্রুত এলাকায় ২২৩টি বুথ চিহ্নিত করা হয়েছে। ১১৫টি বুথে ওয়েব ক্যামেরা থাকছে। ওই বুথগুলির ছবি সরাসরি নির্বাচন কমিশন থেকে জেলা প্রশাসনের কর্তারা দেখতে পারবেন। প্রয়োজনে ওই ছবি দেখে তাঁরা পরামর্শও দেবেন। এ ছাড়া জেলার সাধারণ এলাকায় দু’টি লাইভ মনিটরিং ভেহিক্যাল ঘুরবে। সেখান থেকেও ছবি তুলে সরাসরি কর্তাদের কাছে পাঠানো হবে। ১০০০ বেশি মাইক্রো অবজারভার থাকবেন বিভিন্ন বুথে। এ ছাড়া বিশেষ এলাকায় স্যাটেলাইট ফোন দেওয়া হচ্ছে। দুর্গম এলাকায় মোটরবাইকেও টহল চলবে। সীমানায় এখন থেকেই গাড়ি থামিয়ে পরীক্ষা করা শুরু হয়েছে। নির্বাচনের দিন সীমানা সিল করে দেওয়া হবে বলে জেলাশাসক জানিয়েছেন। এক কথায় এ বার বীরভূম জেলায় রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে ঝাড়খণ্ডের ওই ঘটনায় সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করানোই চ্যালেজ্ঞ হয়ে উঠেছে প্রশাসনের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy