দুর্ঘটনা: এই কুয়োতে নামতে গিয়েই বিপত্তি। —নিজস্ব চিত্র।
কুয়ো পরিস্কার করতে নেমে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সঙ্গী। তাঁকে উদ্ধার করতে কুয়োয় নেমে দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হল এক যুবকের। মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটে সিউড়ির বিবেকানন্দপল্লির একটি বাড়িতে। মৃতের নাম ধনঞ্জয় মাল (৩৮)। বাড়ি সিউড়ি ১ ব্লকের নগরী গ্রামে।
সিউড়ির বিবেকানন্দপল্লির বাড়িতে বসবাস করেন সুব্রত রায় নামে বেসরকারি সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। মঙ্গলবার সকালে তাঁর বাড়ির কুয়ো ঝালাইয়ের কাজে আসেন নগরী গ্রামের তিন যুবক ধনঞ্জয় মালা, বন্দিরাম মাল এবং সুব্রত মাল। ঘণ্টাতিনেক পরেই দুর্ঘটনাটি ঘটে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, কুয়োর জল কমাতে একটি কেরোসিন চালিত পাম্পসেট চালানো হয়েছিল। বেশ কিছু সময় পাম্প চালানোর ফলে কুয়োর মধ্যে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়ে থাকতে পারে। অথবা পুরানো কুয়োয় মিথেন জাতীয় গ্যাস জমে যাওয়ার কারণে ঘটনাটি ঘটেছে।
জানা গিয়েছে, জল কমে গেলে সুব্রত নামে বছর কুড়ির এক যুবক প্রথম কুয়োয় নামেন। কিন্তু নীচে নেমেই অসুস্থ বোধ করলে দুই সঙ্গী তাঁকে বাঁচাতে দড়ি ফেলে। কিন্তু সেটা সে ধরতে পারেনি। তখন বন্দিরাম ও ধনঞ্জয় কুয়োয় নামেন। বন্দিরামের কথায়, ‘‘কুয়োয় নামার সময় একমাত্র চিন্তা ছিল সুব্রতকে বাঁচাতে হবে। কিন্তু নীচে নেমে ওকে তুলতে পারছিলাম না। জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল। তখন আমাদের হাঁকডাকে পড়শিরা ছুটে আসেন। তাঁদের সাহায্যে সুব্রতকে কাঁধে চাপিয়ে দড়ি ধরে কোনও মতে উঠে আসি।’’ তখনই সুব্রতকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
সকলেরই নজর সুব্রতর দিকে থাকায় ধনঞ্জয়ও যে অসুস্থ হয়ে পড়েছে সে দিকে খেয়াল করেনি কেউই। পরে সকলের টনক নড়তে পুলিশ ও দমকল এসে অসুস্থ ধনঞ্জয়কে উদ্ধার করে। সিউড়ি জেলা হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই মৃত্যু হয় তাঁর। ধনঞ্জয়ের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে পরিবারে। তাঁর স্ত্রী চূড়ামণি মাল কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘এ বার দুই সন্তান নিয়ে সংসার কী ভাবে চালাব?’’
যাঁর বাড়িতে কাজ চলছিল সেই সুব্রতবাবুও আক্ষেপ করছেন। বলছেন, ‘‘প্রতিবারের মতো এ বারও বর্ষার আগে কুয়ো পরিস্কার করছিলাম। কিন্তু এমন একটা দুর্ঘটনা যে ঘটে যাবে, কল্পনাও করিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy