Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
ফাঁকা মাথা, রাজপথে ছুটছে মোটরবাইক

যমের দুয়ারে কাঁটা হোক হেলমেটই

বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, “যমের দুয়ারে কাঁটা ফেলতে হেলমেটের জুড়ি নেই। তাই চন্দনের ফোঁটা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দিদিরা ভাইদের হেলমেট উপহার দিলে আক্ষরিক অর্থেই বহু প্রাণ বাঁচবে।”

বাঁকুড়া শহরে এ দৃশ্য রোজই দেখা যায়। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

বাঁকুড়া শহরে এ দৃশ্য রোজই দেখা যায়। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

নিজস্ব সংবাদদাতা 
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

ফোঁটা নিতে এক দিদির বাড়ি থেকে অন্য দিদির বাড়িতে মোটরবাইক নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন ভাইয়েরা। বোনেরা যমের দুয়ারে কাঁটা দেওয়ার মন্ত্র পড়ে ভাইয়ের কপালে চন্দনের ফোঁটা দিচ্ছেন। কিন্তু মনে রয়ে যাচ্ছে শঙ্কা। কারণ বহু ভাই হেলমেট পড়ছেন না মোটরবাইক চালানোর সময়। এই প্রসঙ্গ টেনেই বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, “যমের দুয়ারে কাঁটা ফেলতে হেলমেটের জুড়ি নেই। তাই চন্দনের ফোঁটা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দিদিরা ভাইদের হেলমেট উপহার দিলে আক্ষরিক অর্থেই বহু প্রাণ বাঁচবে।”

মঙ্গলবার ভাইফোঁটার দিনে সারা বাঁকুড়া জেলা জুড়েই মোটরবাইক নিয়ে মানুষজনের ছোটাছুটি দেখা গেল। তার মধ্যে বহু চালককেই নিয়মের তোয়াক্কা না করে মোটরবাইকে তিন জন বা তারও বেশি লোক নিয়ে যাতায়াত করতে দেখা গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে অনেকেরই মাথায় হেলমেট ছিল না। তাতেই উদ্বিগ্ন পুলিশ।

পথ দুর্ঘটনা কমাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে রাজ্যে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ কর্মসূচি চালু হয়। সেই সময় হেলমেট ছাড়া পাম্পে পেট্রল দেওয়ায় নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়। বাঁকুড়া জেলা জুড়েও এ নিয়ে কড়াকড়ি শুরু হয়েছিল। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কড়াকড়ির রাশ কিছুটা আলগা হতেই ফের হেলমেট ছাড়া মোটরবাইক চালানোর প্রবণতা বেড়ে গিয়েছে গত কয়েক মাসে।

অতীতে ভাইফোঁটার দিনে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটতে দেখা গিয়েছে জেলার রাস্তায়। যা ভেবে এখনও অনেকেই শিউরে ওঠেন। এই পরিস্থিতিতে ভাইদের মাথায় হেলমেট থাকুক তা চাইছেন বোনেরাও। বাঁকুড়া শহরের বাসিন্দা মানসী দত্ত বলেন, “প্রতি বছর দাদা ওন্দা থেকে ফোঁটা নিতে আসে মোটরবাইকে চড়ে। হেলমেট পরতে চায় না। এ বার বলেই দিয়েছিলাম, হেলমেট না পরে এলে ফোঁটা দেব না। তাই বাধ্য হয়ে পরে এসেছে।”

মানসীদেবীর ইচ্ছে পূরণ হলেও জেলায় এখনও অনেক দাদাই রয়েছেন যাঁদের এ নিয়ে সচেতন করা যাচ্ছে না। রাস্তাঘাটে চোখ মেললেই তা দেখা যাচ্ছে। এ দিন বাঁকুড়া শহরের কেরানিবাঁধ এলাকা দিয়ে একটি মোটরবাইকে এক দম্পতি ও তাঁদের তিন সন্তানকে যেতে দেখা গেল। কারও মাথায় হেলমেট নেই। ওই দম্পতিকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তাঁরা বলেন, “সামনে দু’কিলোমিটারের মধ্যে ধলডাঙা যাচ্ছি। এর জন্য আবার হেলমেট কেন?’’ পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন ওই দম্পতিই।

কিন্তু অল্প ব্যবধানের মধ্যেও দুর্ঘটনার সংখ্যা নেহাত কম নয় জেলায়। বড়জোড়ার এক পুলিশ আধিকারিক মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সম্প্রতি একটি বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠান সেরে মোটরবাইক নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বড়জোড়া-দুর্লভপুর রাস্তায় পড়ে গিয়ে একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। এই ঘটনার পরপরই গঙ্গাজলঘাটির দুর্লভপুর সংলগ্ন এলাকায় বিয়ে বাড়ির দিনে মোটরবাইক নিয়ে মিষ্টি কিনতে গিয়ে ফেরার পথে গাড়ির সঙ্গে ধাক্কায় কনের কাকার মৃত্যু হয়। গত মকর সংক্রান্তিতে তিন বন্ধু মোটরবাইক নিয়ে একটি বাসকে ওভারটেক করতে গিয়ে একটি গরুকে ধাক্কা মেরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসের তলায় পড়ে যান। ঘটনাস্থলেই দু’জনের মৃত্যু হয়। এক্ষেত্রেও কারও মাথায় হেলমেট ছিল না।

জেলা পুলিশের দাবি, বহু দুর্ঘটনার এমন নজিরও রয়েছে যেখানে মোটরবাইক চালকদের মাথায় হেলমেট থাকার জন্যই তাঁরা প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন। বাঁকুড়ার কাটজুড়িডাঙার বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিপদ কোথায়, আগে থেকে কি বোঝা যায়? বাড়ির কাছে রেললাইন পার হতে গিয়ে আমার মাথায় রেল গেটের ধাক্কা লেগেছিল। সে দিন মাথায় হেলমেট না থাকলে কী যে হত!”

পুলিশ সুপারের দাবি, হেলমেট পরা হচ্ছে কি না, তা নিয়ে জেলায় নিয়মিত তল্লাশি চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, “লোকজন যাতে হেলমেট পরেন সে জন্য পুলিশ ধারাবাহিরক ভাবে সচেতন করছে। কিন্তু মোটরবাইক চালকদের বুঝতে হবে, ওঁদের নিরাপত্তার জন্যই হেলমেট পরা দরকার। যত তাড়াতাড়ি এটা তাঁরা বুঝবেন, ততই তাঁদের মঙ্গল।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Helmet Save Drive Safe Life Police Bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy