Advertisement
০৭ জানুয়ারি ২০২৫
Explosion

‘কাজের দরকার নেই, ওঁরা সুস্থ হয়ে ফিরুক’

দাহেজের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের (এসইজ়েড) একটি রাসায়নিক কারখানায় বিস্ফোরণে বুধবার দুপুরে মৃত্যু হয়েছে জয়ন্তর।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

সুশীল মাহালি
শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২০ ০৫:২১
Share: Save:

রানিবাঁধের অম্বিকানগর থেকে রাইপুর যাওয়ার পাকা রাস্তার ধারেই বাড়িটা। সিন্দুরপুর গ্রামের এই বাড়ির বড় ছেলে, চব্বিশ বছরের জয়ন্ত মাহাতোর দেহ গুজরাতের দাহেজ থেকে ফিরেছে শনিবার বিকেলে। টিনের ছাউনির ছোট বাড়িটায় থাকেন জয়ন্তর ছোট ভাই প্রশান্ত ও বাবা বিবেকবাবু। বিবেকবাবুর মানসিক ভারসাম্যের কিছু অভাব রয়েছে। রবিবার অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করেও কাউকে পাওয়া গেল না।

দাহেজের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের (এসইজ়েড) একটি রাসায়নিক কারখানায় বিস্ফোরণে বুধবার দুপুরে মৃত্যু হয়েছে জয়ন্তর। গুরুতর জখম অবস্থায় সেখানকার নার্সিংহোমে ভর্তি তাঁর খুড়তুতো ভাই জগন্নাথ ও সমীর মাহাতো আর সিন্দুরপুরেই সুদর্শন মাহাতো, শক্তিপদ মাহাতো। রবিবার বেলা ১০টা নাগাদ সিন্দুরপুর গ্রাম থমথম করছে। কাছাকাছিই বাড়িগুলি। সমীরদের বাড়ির সামনে যেতেই দেখা হল তাঁর বাবা সত্যেন্দ্রনাথ মাহাতোর সঙ্গে। জানা গেল, শনিবার রাতে কংসাবতী নদীর ধারের শ্মশানঘাটে জয়ন্তর সৎকার হয়েছে।

সিন্দুরপুরের ওই পাঁচ জন আর ইঁদপুরের সাতামির মাধব সর্দার মাস চারেক আগে ঠিকার শ্রমিকের করতে গুজরাতের ভরুচের দাহেজে গিয়েছিলেন। ঠিকাদারের অধীনে একটি কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতেন। ‘লকডাউন’-এ কাজ চলে গিয়েছিল সবার। কিছু দিন বসে থাকার পরে বুধবার সকালে রসায়নিক তৈরির নতুন একটি কারখানায় কাজ শুরু করেছিলেন। আর দুপুরে হঠাৎ বয়লার ফেটে একের পরে এক রাসায়নিক-ভর্তি ট্যাঙ্কে বিস্ফোরণ হতে থাকে। বেরিয়ে আসতে গিয়ে জখম হন সবাই। নিয়ে যাওয়া হয় নার্সিংহোমে। বৃহস্পতিবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় জয়ন্তর।

সত্যেন্দ্রনাথবাবু জানান, সকাল ৮টা নাগাদ ছেলের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। জানিয়েছে, কিছুটা ভাল আছে। বলেন, ‘‘ছেলেকে বলেছি, সেরে উঠলেই যেন তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসে। আমরা দিনমজুরি করি। গরিব মানুষ। এলাকায় কাজ না পেয়ে ছেলেটা বাইরে গিয়েছিল। এ বার ফিরলে আর কখনও পাঠাব না।’’ আশপাশের বাড়ির আরও কিছু লোকজন বেরিয়ে এসেছিলেন। দেখা হল সুদর্শন মাহাতোর বাবা রঞ্জিত মাহাতো এবং শক্তিপদ মাহাতোর স্ত্রী মমতা মাহাতোর সঙ্গে। মমতাও বলছিলেন, ‘‘ছেলেমেয়েকে নিয়ে খুবই টানাটানির মধ্যে দিন কাটে। ভাঙা ঘরটা মেরামত করার টাকাটুকুও নেই। অভাবের জন্য ঘর ছাড়তে হয়েছিল। এখন মনে হচ্ছে, এমন কাজের থেকে কষ্টে থাকাও অনেক ভাল।’’

গ্রামের রাস্তা দিয়েই বাড়ি ফিরছেন জয়ন্তর ভাই প্রশান্ত। গ্রামেই দিনমজুরি করেন তিনি। ‘লকডাউন’-এ তাঁরও কাজ নেই। বললেন, ‘‘বাবাকে নিয়ে কী করব কোথায় যাব, কিছু জানি না। তার আগে দাদার পৌরলৌকিক কাজগুলো করতে হবে। এর মধ্যে কী ভাবে কী করা যায়, তা নিয়ে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলতে হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

GUjarat explosion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy