প্রতীকী ছবি।
‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ সদ্যোজাতকে ডাস্টবিন বা ঝোপ-ঝাড়ে ফেলে দেওয়া রুখতে প্রতিটি সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একটি বিশেষ জায়গা (পালনা) বা ক্রেডেল বেবি রিসেপশন সেন্টার তৈরির সুপারিশ করেছিল ‘সেন্ট্রাল অ্যাডপশন রিসোর্স অথরিটি’ সংক্ষেপে ‘কারা’। কিন্তু, আক্ষেপের বিষয় জেলার বহু হাসপাতালে শুধু ‘পালনা’ তৈরি না হওয়াই নয়। স্বাস্থ্য আধিকারিক ও প্রশাসনিক আধিকারিক থেকে চাইল্ড লাইন, এমন অনেকেই রয়েছেন যাঁরা নির্দেশটা আদতে কী ছিল সেটাই ভুলতে বসেছেন।
জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক নিরুপম সিংহ বলছেন, ‘‘নির্দেশ পালিত হওয়ার কথা। কী হয়েছে খোঁজ নিতে হবে।’’ বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার সিএমওএইচ হিমাদ্রি আড়ি জানিয়েছেন, সিউড়ি জেলা হাসপাতাল ও বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল ছাড়া ‘পালনা’ তৈরি হয়নি। বাকি প্রতিটি ব্লক হাসপাতালকে পালনা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার কোনও হাসপাতালে আদৌ এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে কিনা তা জানাতেই পারেননি স্বাস্থ্যকর্তারা।
গত বছর অক্টোবরে দুবরাজপুর গ্রামীণ হাসপাতালের শৌচাগারে রাখা ডাস্টবিন থেকে উদ্ধার হয়েছিল সদ্যোজাত শিশুপুত্র। বিষয়টি নিয়ে বিস্তর হৈ চৈ হয়েছিল। হয়েছিল তদন্তও। কিন্তু, কোন প্রসূতি কী ভাবে তাঁর সদ্যোজাতকে ডাস্টবিনে ফেলে গেলেন সেটা জানা যায়নি। শুধু ওই ঘটনা নয়, শিশুর লালন-পালনে অক্ষম হলে বা অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে কোনও শিশুর জন্ম হলে বা একাধিক কন্যাসন্তানের জন্মের পর ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ সদ্যোজাতকে ঝোপে বা ব্যাগে ভরে ফেলে যাওয়ার ঘটনা ঘটেই থাকে। চলতি বছরে এই পর্যন্ত আট জন সদ্যোজাতকে উদ্ধার করা হয়েছে। সেগুলির মধ্যে কয়েকটি ক্ষেত্রে শিশুর জন্মের পরেই তাকে হাসপাতালে ফেলে উধাও হয়ে গিয়েছেন প্রসূতি। দুটি ক্ষেত্রে সদ্যোজাতের দেহ উদ্ধার হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, বছর দুই আগে সরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোম, মন্দির, মসজিদ এবং অনাথালয় লাগোয়া এলাকায় ‘পালনা’ গড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। একটি ঘরের মধ্যে দোলনা থাকবে। থাকবে সেন্সরও। লোকচক্ষুর আড়ালে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ সদ্যোজাতকে রেখে গেলে একদিকে যেমন শিশুর জীবন বাঁচানো যায়, অন্য দিকে ভবিষ্যতে দত্তক দিতে ইচ্ছুক দম্পতিরা আইন মেনে শিশুকে দত্তক নিতে পারেন। প্রশাসনের সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি শিশু যে ভাবেই উদ্ধার হোক না সেটা পুলিশ, চাইল্ড লাইন, শিশু সুরক্ষা দফতর, শিশু কল্যাণ কমিটি জানবে। শিশুর চিকিৎসার প্রয়োজন হলে হাসপাতালে ভর্তি করা হবে। সুস্থ হলে হোমে পাঠানো হবে।
যে ভাবে পালনা গড়তে বলা হয়েছে হাসপাতালের মধ্যে তেমন জায়গা খুঁজে পাওয়া সমস্যার হচ্ছে। কোভিড পরিস্থিতিতেও কাজটা পিছিয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের দত্তক সংক্রান্ত পরামর্শদাতা কমিটির সদস্য জয়দেব মজুমদার বলছেন, ‘‘কোনও শিশুকে তার পরিজন যখন ছেড়ে দিয়ে যাচ্ছে, তখন তাঁরা চান গোপন থাকুক। হাসপাতালের মধ্যে তেমন নির্জন জায়গা পাওয়া সমস্যার ঠিকই। কিন্তু, একটি সুরক্ষিত জায়গায় শিশুটিকে রেখে যেতে হবে যাতে তার জীবন রক্ষা পায়।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘হাসপাতাল বা নার্সিংহোমেই দাবিহীন শিশু পড়ে থাকার সম্ভবনা রয়েছে। এমন হলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ, চাইল্ড লাইন, সিডব্লুউসি, ডিসিপিওকে জানাতে হবে। তাই সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। ঘাটতি সেখানেও।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy