Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪

দুর্গামণ্ডপই এখন আস্তানা মিঠুদের

৭৮ বছরে পা দিয়ে সাহাপুরে পরিবর্তন এনেছেন ওঁরা। ওঁরা মানে ফাল্গুনি দাস, হাসি দাসরা। পুরুষদের থেকে ছিনিয়ে এই প্রথম এলাকার বীণাপানি ক্লাবের সর্বজনীন দুর্গাপুজোর আয়োজনের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন ওই গ্রামের মেয়েরা।

পুজোর হিসেবে ব্যস্ত সাহাপুরের মহিলারা। —সব্যসাচী ইসলাম

পুজোর হিসেবে ব্যস্ত সাহাপুরের মহিলারা। —সব্যসাচী ইসলাম

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
তারাপীঠ শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৬ ০২:২৭
Share: Save:

৭৮ বছরে পা দিয়ে সাহাপুরে পরিবর্তন এনেছেন ওঁরা।

ওঁরা মানে ফাল্গুনি দাস, হাসি দাসরা। পুরুষদের থেকে ছিনিয়ে এই প্রথম এলাকার বীণাপানি ক্লাবের সর্বজনীন দুর্গাপুজোর আয়োজনের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন ওই গ্রামের মেয়েরা। পুরোহিত ঠিক করা থেকে প্রতিমা বায়না দেওয়া— কোমর বেঁধে ময়দানে নেমে পড়েছেন গ্রামের ‘এ-টু-জেড মহিলা বাহিনী’।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৩৮ সালে এলাকার বাসিন্দা রামতোরণ পালের দেওয়া ২ শতক জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় তারাপীঠ থানার সাহাপুরের এই ক্লাব। ওই একই বছর থেকে এলাকার প্রথম সর্বজনীন দুর্গাপুজোও ক্লাবের পরিচালনায় হয়ে আসছে। এত দিন সেই পুজোর ভার মূলত গ্রামের পুরুষেরাই নিতেন। এই প্রথম শুধু মাত্র মহিলারাই তা পরিচালনার দায়িত্বে আছেন। মহিলা বাহিনীর প্রধান তথা সম্পাদক দেবযানী দে জানান, ভাদ্র মাসের শুরুতেই ক্লাবের পুরুষ সদস্যদের কাছ থেকে রীতিমতো রেজোলিউশন করে গ্রামের মহিলারা দুর্গাপুজোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। তার পর থেকেই মহিলারা বাঁশ কেটে, খড় এনে, সুতলি দিয়ে কাঠামো তৈরি করেন। পরে মজুর লাগিয়ে মাঠ থেকে প্রতিমা তৈরির মাটিও জোগাড় করেন। পাশের গ্রাম কড়কড়িয়ার এক শিল্পীকে প্রতিমার বায়নাও দেওয়া হয়। এ সবের পরেই রোজ দল বেঁধে ভাগ ভাগ করে বিকাল ৪টে থেকে সন্ধে ৭টা পর্যন্ত পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে চাঁদা সংগ্রহে নামেন বাহিনীর ৩৩ জন মহিলা সদস্যেরা।

চাঁদা সংগ্রেহ শেষে সদস্যেরা ফিরে এলে পুজো কমিটির হিসারক্ষক মিঠু দাস সাহানার বাড়িতে ঘণ্টাখানেক ধরে হিসাব নিকাশ করা হয়। সেখানেই পুরোহিত, ঢাকি, আলো, মাইক বুক করা থেকে ফলের বাজার, দশকর্মার বাজার, মণ্ডপসজ্জার কাজ নিয়েও আলোচনা হয়। আলোচনা সেরে বাড়ি ঢুকে আবার ঘর সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন বাহিনীর সদস্যেরা। সে ক্ষেত্রে রাতের রান্না অনেক সময় দিনের বেলাতেই সেরে নিতে হচ্ছে তাঁদের। আর গৃহিনীদের এমন উৎসাহ দেখে রাতে বাসিরান্না খেয়েও অন্য রকম আনন্দের স্বাদ পাচ্ছেন স্বামীরা। এক মহিলা সদস্যের স্বামী, পেশায় শিক্ষক অরুণ দাসের কথায়, ‘‘এ ক’দিনে কাণ্ডকারখানা দেখে বুঝেছি, ওদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে আমাদের।’’

পুজোর আর দিন বাকি নেই। মহালয়ার দিনই উত্তেজনায় ফুটছে ওই মহিলা বাহিনী। হিসাবরক্ষক মিঠুদেবী বলছেন, ‘‘মা দুর্গা বছরে একবার বাপের বাড়ি আসেন। আর আমরা বছরে দু’তিন বার বাপের বাড়ি যাই। পুজোর দায়িত্ব পেয়ে দুর্গামণ্ডপই এখন আমাদের আস্তানা হয়ে উঠেছে।’’ দেবযানীদেবী জানালেন, পুজো উপলক্ষে চার দিন ধরে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করা হয়েছে। দশমীর সকালে গ্রামের প্রাচীন ঐতিহ্য মেনে মণ্ডপ চত্বরে বিজয়ার প্রীতি শুভেচ্ছা বিনিময়ের অনুষ্ঠানও হবে।

মহিলাদের মধ্যে এমন উদ্দীপনা দেখে এই পুজোর পাশে দাঁড়িয়েছে পুলিশ-প্রশাসনও। এক কর্তা বলেন, ‘‘ওঁদের উৎসাহ দেখে আমরাও একটি অভিনব পরিকল্পনা নিয়েছি। ওই পুজোয় ভিড় সামলাতে সেখানে চার দিনই মহিলা পুলিশ এবং সিভিক ভলান্টিয়ার রাখা হবে।’’

আর এত দিন যাঁরা পুজো সামলেছেন, দ্বায়িত্ব চলে গিয়ে তাঁরা কী ভাবছেন? ক্লাবের অন্যতম সদস্য তথা রামপুরহাট হাইস্কুলের শিক্ষক অপূর্ব দাসের কথায়, ‘‘আয়োজক হিসাবে যে কোনও ভাবেই পিছিয়ে নেই, তা ইতিমধ্যেই ওরা প্রমাণ করে ছেড়েছে। আমরা ওদের থেকে সত্যিই অন্য রকমের অনুপ্রেরণা পাচ্ছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Durga puja Women
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy