বিক্ষোভ রামনগর গ্রামে।— সুজিত মাহাতো।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বিক্ষোভের মুখে এই নিয়ে তিন বার পিছু হটে ফিরে এসেছে পুলিশ ও প্রশাসন। বুধবার সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের জল প্রকল্পের জট কাটাতে পুরুলিয়া ১ ব্লকের রামনগর গ্রামে গিয়েছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী ও স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রধান। ফিরতে হল তাঁদেরও। সব মিলিয়ে প্রকল্পের পাইপ পাতার কাজ এখনও বিশ বাঁও জলেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জল প্রকল্পের জন্য রামনগর গ্রামে পাইপ পাতার কাজ দীর্ঘ দিন ধরে আটকে রয়েছে। প্রকল্প শেষ করা যাচ্ছে না শুধু ওই গ্রামে মেরেকেটে ছ’শো মিটার পাইপ না বসাতে পারায়। কংসাবতী থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত মোট সাড়ে ছ’কিলোমিটার পাইপলাইনের কাজ বাকি সমস্ত এলাকায় শেষ। ওই গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, গ্রামে নলবাহিত পানীয় জল সরবরাহ না করলে তাঁরা সেখান দিয়ে পাইপলাইন নিয়ে যেতে দেবেন না। জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর ওই প্রকল্প রূপায়ন করছে। দফতরের কর্তারা বিক্ষোভকারীদের আশ্বাস দিয়েছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প থেকে কিছু করা না গেলেও ওই গ্রামের জন্য একটি পৃথক প্রকল্প তৈরি করে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ মিললেই কাজ শুরু হবে। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা গোঁ ধরে থাকেন। সোমবারও পুলিশি নিরাপত্তায় কাজ শুরু করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত বাধার মুখে পিছু হঠতে হয়।
গত অগস্টে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলায় প্রশাসনিক বৈঠকে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের জলপ্রকল্প নিয়ে খোঁজখবর করেছিলেন। তার পরে, সেপ্টেম্বর থেকেই কাজ শুরু করে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর। শীঘ্রই মুখ্যমন্ত্রী জেলায় বৈঠক করতে আসতে পারেন বলে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে গুঞ্জন রয়েছে। তার আগেই এই কাজ শেষ করে ফেলতে তাই উঠে পড়ে লেগেছেন দফতরের কর্তারা।
কিন্তু সেই সমস্ত উদ্যোগ হোঁচট খাচ্ছে রামনগরে। চলতি মাসেই দু’বার কাজ মুলতুবি রেখে ফিরতে হয়েছে ঠিকাদারকে। প্রকল্পের জট খোলার জন্য বুধবার পুরুলিয়া ১ ব্লকে একটি বৈঠক ডাকা হয়। কিন্তু কার্যকালে দেখা যায়, দফতরের প্রতিনিধি এবং জনপ্রতিনিধিরা থাকলেও বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে সেখানে কেউ নেই। সিদ্ধান্ত হয়, সবাই মিলে গ্রামে গিয়ে কথা বলা হবে। পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী পদ্মাবতী মাহাতো ও সোনাইজুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শম্পা বাউরি রামনগর গ্রামে যান। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সুকুমার মাহাতোও। তাঁরা গ্রামে পৌঁছনোর আগেই পুলিশ সেই খবর নিয়ে গ্রামে গিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দেয়।
কিন্তু জন প্রতিনিধিদের গাড়ি গ্রামে পৌঁছতেই ঘিরে দাঁড়িয়ে পড়েন কয়েকশো মহিলা। তাঁদের আশ্বাস দেওয়ার চেষ্টা করেন পদ্মাবতীদেবী ও শম্পাদেবী। কিন্তু বিক্ষুব্ধদের গোঁ ভাঙে না। ভিড় মধ্যে থেকে মন্তব্য উড়ে আসে, ‘‘গ্রামে জল সঙ্কটের কথা জানতেন না? এত দিন আসেননি কেন?’’ জনপ্রতিনিধিরা জল সরবরাহের ব্যাপারে লিখিত প্রতিশ্রুতি দেওয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের থেকে লিখিত প্রতিশ্রুতি দাবি করে বসেন বিক্ষোভকারীরা। শেষ পর্যন্ত আলোচনা ভেস্তে যায়।
প্রধান শম্পাদেবী বলেন, ‘‘আমরা তো আলোচনা চাই। কিন্তু আমাদের কথা না শুনে গ্রামের লোকজন যদি এ ভাবে গোলমাল করেন তাহলে কী ভাবে আলোচনা হতে পারে! তাই ফিরে এসেছি।’’ তবে পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সুকুমার মাহাতো বলেন, ‘‘গ্রামের লোকজনের কিছু ক্ষোভ রয়েছে। সেটারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। তবে আমরা ফের আলোচনা করব।’’ তাঁর আশ্বাস ওই গ্রামে পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া হবে।
বিডিও (পুরুলিয়া ১) দিব্যজ্যোতি দাস বলেন, ‘‘প্রকল্পের জট কাটাতে গ্রামের লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করতে সভানেত্রী নিজেই গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা বৈঠকে বসেননি। প্রশাসন সদর্থক দৃষ্টিতে গোটা সমস্যাটি দেখতে চায়। কিন্তু তার জন্য বিক্ষুব্ধদের আলোচনায় বসতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy