Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

পাহাড়ি রাস্তা গড়তে পুরুষদের পাশে মহিলারাও

শুধু স্বাস্থ্যকেন্দ্রই নয়, রেশন আনতেও এই পাহাড়ি পথই ভরসা বাসিন্দাদের। বর্ষায় মাটি-পাথর ধুয়ে আরও দুর্গম হয়ে পড়া সেই রাস্তা নিজেরাই সংস্কার করতে হাত লাগিয়েছেন ধানচাটানির বাসিন্দারা। বুধবার থেকে শুরু হয়েছে সেই কাজ।

সংস্কার: ধানচাটানি থেকে নালাকচা যাওয়ার রাস্তা। নিজস্ব চিত্র

সংস্কার: ধানচাটানি থেকে নালাকচা যাওয়ার রাস্তা। নিজস্ব চিত্র

প্রশান্ত পাল
আড়শা শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৯ ০২:১১
Share: Save:

দু’মাসের দুধের শিশুকে বুকে জড়িয়ে অযোধ্যা পাহাড়ের উপরের গ্রাম থেকে নীচে সন্তর্পণে নামছিলেন আড়শার ধানচাটানির বধূ বিজলি সোরেন। অন্য হাতে ধরা ছাতা। তাঁর গন্তব্য পাহাড়ের নীচে ১২-১৩ কিলোমিটার দূরের রাজপতি গ্রাম। সেখানকার উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছেলেকে টিকা দিতে যাচ্ছিলেন তিনি। সঙ্গী তাঁর স্বামী চুনু সোরেন। পথ বলতে দু’পাশের ঝোপের মাঝে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে এক ফালি ফাঁকা জায়গা। সেখানেই এবড়ো খেবড়ো পাথর বেয়ে নেমে যাওয়া।

শুধু স্বাস্থ্যকেন্দ্রই নয়, রেশন আনতেও এই পাহাড়ি পথই ভরসা বাসিন্দাদের। বর্ষায় মাটি-পাথর ধুয়ে আরও দুর্গম হয়ে পড়া সেই রাস্তা নিজেরাই সংস্কার করতে হাত লাগিয়েছেন ধানচাটানির বাসিন্দারা। বুধবার থেকে শুরু হয়েছে সেই কাজ।

বিজলি বলেন, ‘‘আট-নয় কিলোমিটার পথ পুরোটাই এবড়ো-খেবড়ো। বর্ষায় রাস্তা আরও ভয়ঙ্কর হয়েছে। অসাবধান হলেই গড়িয়ে পড়ব।’’ তাঁর স্বামী বলেন, ‘‘প্রতি মুহূর্তে সতর্ক হয়ে পা ফেলতে হচ্ছে।’’

এই পথেরই সংস্কারের কাজ শুরু করেছেন ধানচাটানির বাসিন্দা রাজীবলোচন মান্ডি। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের গ্রামের হাট-বাজার, হাসপাতাল, রেশন সবই পাহাড়ের নীচে। পাহাড়ি এই সঙ্কীর্ণ রাস্তা দিয়েই নালাকোটা পর্যন্ত ন’কিলোমিটার নামতে হয়। তার পরে সমতল। বর্ষার আগে মোটামুটি হাঁটাচলা করা যেত। কিন্তু বর্ষায় মাটি ধুয়ে গিয়ে পাথর বেরিয়ে পড়েছে। প্রায় দিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। ইতিমধ্যেই গ্রামের বেশ কয়েকজন দুর্ঘটনায় আহতও হয়েছেন। তাই আমরা ঠিক করলাম যেহেতু এই রাস্তা দিয়ে আমাদের যাতায়াত করতে হয়, যতটা পারি আমরা নিজেরাই তার সংস্কার করব।’’

তাঁর সঙ্গে হাত লাগিয়েছিলেন সিপাহি মান্ডি, গোরাচাঁদ মুর্মু, রামেশ্বর মুর্মু, রঘুনাথ হাঁসদা, ঘাসিরাম মুর্মুরা। তাঁরা জানান, প্রতি পরিবার থেকে এক জন করে এই কাজে নেমেছেন। বর্ষায় ঝোপঝাড় বেড়ে গিয়েছে। তা সাফ করছেন তাঁরা। পাথর ঠিকমতো বসিয়ে তার উপরে মাটি বিছিয়ে দিচ্ছেন।

মহিলারাও নেমেছেন কাজে। কাজের ফাঁকে প্রমীলা মান্ডি, পার্বতী মুর্মু বলেন, ‘‘এই রাস্তা দিয়ে জীবন হাতে করে পাহাড়ে ওঠানামা করতে হয় আমাদের। তাই নিজেদের কাজ নিজেরাই করছি।’’

সরকারি পরিষেবা প্রত্যন্ত এলাকায় কেমন পৌঁছচ্ছে তা জানতে কয়েক মাস আগে এই গ্রামে এসেছিলেন জেলাশাসক রাহুল মজুমদার। তাঁর কাছে গ্রামবাসী রাস্তার দুরবস্থার কথা জানিয়েছিলেন বাসিন্দারা। তাঁরা রাস্তা তৈরি করে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন।

সে দিন জেলাশাসক ওই গ্রাম থেকে জঙ্গল পথে ভুদা হয়ে ব্লক সদর আড়শার সঙ্গে যোগাযোগের নতুন রাস্তা করা যায় কি না তা বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। এ দিন জেলাশাসক বলেন, ‘‘সে দিন যে রাস্তা তৈরির কথা গ্রামবাসীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল, তা তৈরি করার প্রস্তাব নবান্নে পাঠানো হয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Arsha Roads
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy