এই জায়গায় ঘটনাটি ঘটে বলে অভিযোগ। ছবি: শুভ্র মিত্র।
জমিতে ধান কাটার সময়ে হাতির হানায় মৃত্যু হল এক মহিলার। রবিবার বিকেল ৩টে নাগাদ বাঁকুড়ার সোনামুখীতে জঙ্গল লাগোয়া বুড়িআঙ্গারি গ্রামে লক্ষ্মী সোরেন (৫৫) নামে ওই মহিলার উপরে আচমকা একটি দাঁতাল চড়াও হয় বলে আশপাশের বাসিন্দাদের অভিযোগ। এলাকায় শনিবার সন্ধ্যা থেকে হাতির আনাগোনা চললেও বন দফতর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেনি, এই অভিযোগে বিষ্ণুপুর-সোনামুখী রাস্তা অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
বাঁকুড়া উত্তর বন বিভাগের আধিকারিক কল্যাণ রাই বলেন, ‘‘যে হাতিটি এই কাণ্ড ঘটিয়েছে, সেটি রেসিডেন্ট হাতি বলে মনে করা হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী, মৃতের পরিবারকে ৩ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। তার মধ্যে ৭৫ শতাংশ সোমবারই দিয়ে দেওয়া হবে। বাকি অংশ তদন্তের পরে দেওয়া হবে।’’
ওই গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, শনিবার সন্ধ্যা থেকে গ্রামের পাশ দিয়ে দফায়-দফায় হাতির পাল পেরিয়ে যায়। রবিবার দুপুরে বড় মেয়ে সুখী সোরেনকে নিয়ে জমিতে ধান কাটতে গিয়েছিলেন লক্ষ্মী। তাঁরা এক বিঘা জমিতে লালস্বর্ণ চাষ করেছিলেন বলে পরিবার সূত্রে জানা যায়। সুখী জানান, বিকেল ৩টে নাগাদ তিনি খেয়াল করেন, জঙ্গলের দিক থেকে একটি দাঁতাল বেরিয়ে আসছে। সেটি তাঁদের দিকে ধেয়ে আসছে। সুখী বলেন, ‘‘আমি দ্রুত ছুটে পালিয়ে আসি। কিন্তু মা কাদাজমিতে পা আটকে পড়ে যান। হাতিটা এসে মাকে লাথি মারে। তার পরে শুঁড়ে তুলে আছাড় মারে।’’
গ্রামবাসী দুর্গাচরণ সোরেন, মঙ্গল সোরেনরা জানান, চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে তাঁরা ছুটে আসেন। হাতিটিকে তাড়ানো হয়। তার পরে জমিতে গিয়ে দেখা যায়, লক্ষ্মীর নিথর দেহ পড়ে রয়েছে। বিষ্ণুপুর-সোনামুখী রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে সোনামুখী গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সেখানে চিকিৎসকেরা মৃত বলে জানান। দেহ ময়না-তদন্তে বিষ্ণুপুরে পাঠানো হয়।
খবর পেয়ে পুলিশ এবং বনকর্মীরা পৌঁছন। ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের অনেকের প্রশ্ন, ‘‘শনিবার থেকে দফায়-দফায় হাতিরা এলাকা দিয়ে পেরিয়েছি। তবু বন দফতর কেন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিল না?’’ গ্রামের মহিলাদের দাবি, হাতির ভয়ে রাতে বাড়ি থেকে বেরনো নিয়ে আশঙ্কা ছিলই। এ বার দিনে কী ভাবে জমিতে গিয়ে ফসল তুলবেন, সে চিন্তায় পড়েছেন। দ্রুত হাতির পালকে এলাকা থেকে সরানোর দাবিতে বিষ্ণুপুর-সোনামুখী রাস্তা অবরোধ করা হয়। পুলিশ বাসিন্দাদের বুঝিয়ে অবরোধ তোলার চেষ্টা করে। ‘বাঁকুড়া জেলা হাতি সমস্যা স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে সংগ্রামী গণমঞ্চ’-এর মুখপাত্র শুভ্রাংশু মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘বন দফতর এসএমএস করেই দায় সারছে। মাইকে প্রচার জরুরি। তা হচ্ছে না। সে কারণে এ ভাবে প্রাণ যাচ্ছে।’’
সোনামুখীর বিডিও দেবলীনা সর্দার বলেন, ‘‘হুলা পার্টি নেমেছে। ওই হাতিটিকে গ্রামের পাশ থেকে সরানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’ বাঁকুড়া উত্তর বন বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব বর্ধমান থেকে ফেরা প্রায় ৪০টি হাতি সোনমুখীর ওই গ্রামের পাশ দিয়ে গিয়ে এ দিন বেলিয়াতোড় রেঞ্জের লাদুনিয়া জঙ্গলে ছিল। সোনামুখী রেঞ্জের ভুলা গ্রামে ১৫টি এবং ইন্ডকাটা বিটের তেঁতুলবাঁধেও একটি হাতি রয়েছে বলে বন দফতর সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy