Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

বিয়ের ঢাল মুণ্ডন, ধরিয়ে দিল জনতা

সবাইকে বলা হয়েছে, অনুষ্ঠানটা মুণ্ডনের। নিমন্ত্রণপত্রেও সে রকমই লেখা। তবু সন্দেহ হওয়ায় পুলিশ এক বার এসে দেখে গিয়েছিল। তখনও ধরা পড়েনি কিছুই। শেষ অবধি পাড়াপড়শির সচেতন নজরই জিতল।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
ঝালদা শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৭ ১৪:২০
Share: Save:

সবাইকে বলা হয়েছে, অনুষ্ঠানটা মুণ্ডনের। নিমন্ত্রণপত্রেও সে রকমই লেখা। তবু সন্দেহ হওয়ায় পুলিশ এক বার এসে দেখে গিয়েছিল। তখনও ধরা পড়েনি কিছুই। শেষ অবধি পাড়াপড়শির সচেতন নজরই জিতল। তাঁরাই আবিষ্কার করলেন, নিমন্ত্রণপত্রের ভাঁজের ছোট্ট একটা অ়ংশে প্রায় চোখে না পড়ার মতো করে লেখা— ‘দ্বারিকা ওয়েডস বেবি’।

পুরুলিয়ার ঝালদায় পুস্তি পঞ্চায়েত এলাকার ঘটনা। মেয়ের বাবাকে থানায় ডেকে জেরা করতেই তিনি স্বীকার করলেন সব। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা ঠিক সময়ে নিমন্ত্রণের কার্ডটা পুলিশের হাতে তুলে না দিলে যে বিয়েটা আটকানো যেত না, সে কথা স্বীকার করছেন জেলা পুলিশের কর্তারাই।

এ জেলাতেই নাবালিকার বিয়ে রুখে সাড়া জাগিয়েছিল রেখা কালিন্দি, বীণা কালিন্দি, আরও অনেকেই। পুলিশ-প্রশাসন কন্যাশ্রী ক্লাব গড়ে স্কুলে স্কুলে তথ্যচিত্র দেখিয়ে নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করার প্রচার চালাচ্ছে। ভুক্তভোগী মেয়েরা বাড়ি বাড়ি গিয়েও কমবয়সে বিয়ের বিরুদ্ধে জনমত
গড়ে তোলার কাজ করছেন। রাজ্য জুড়েই ক্রমাগত বিয়ে রোখার ঘটনা নিয়ে প্রচারে অভিভাবকরা সাড়া দিন বা না দিন, কিশোরীদের অনেকের মধ্যেই সচেতনতা যথেষ্ট বেড়েছে। কয়েক মাস আগে পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটে চাইল্ড লাইনকে ফোনে জানিয়ে বান্ধবীর বিয়ে রোখে এক কিশোরী।
ঝালদার ঘটনা দেখাল, সচেতনতা ছ়ড়াচ্ছে সাধারণ মানুষের মধ্যেও।

নাবালিকার বিয়ে হতে চলেছে বলে খবর পেয়ে পুলিশ কিন্তু প্রথমে পৌঁছেছিল। কিন্তু অভিভাবকেরা দাবি করেন, বিয়ে নয়, হচ্ছে মুণ্ডনের অনুষ্ঠান। যে বালিকার মুণ্ডন তাকেও হাজির করানো হয়। বিভ্রান্ত হয়ে পুলিশ আধিকারিকেরা ফিরে আসেন। তার পরেই স্থানীয় বাসিন্দাদের সৌজন্যে হাতে আসে ওই কার্ড। ঝালদা থানার আইসি ত্রিগুণা রায় জানান, শুক্রবার ওই পরিবারের লোকজনকে থানায় ডেকে পাঠানো হয়। মেয়ের বাবার সামনে কার্ডটি রাখতেই তিনি স্বীকার করে নেন, সতেরো বছরের মেয়েটির বিয়ে ঠিক হয়েছে পুস্তির পাশের পঞ্চায়েত নয়া়ডিতে বছর আঠাশের এক যুবকের সঙ্গে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পরে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মেয়েটি এখন বাড়িতেই থাকে বলে জানান তাঁরা। থানায় ডেকে পাঠানো হয় পাত্রের পরিবারকেও। দু’পক্ষই মুচলেকা লিখে প্রতিশ্রুতি দেন, আঠেরোর আগে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন না।

জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, ক্রমাগত প্রচারের ফলে সচেতনতা বেড়েছে। অনেকেই পুলিশের চোখ এড়িয়ে মেয়ের বিয়ে দিতে আত্মীয়স্বজনের বাড়ি চলে যাচ্ছেন বা নানা ফন্দিফিকির আঁটছেন। কিন্তু সেটা ধরে ফেলাটাই পুলিশের কাজ। স্থানীয় মানুষ এগিয়ে এসে সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Marriage Minor Girl Neighbor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE