প্রতীকী চিত্র।
বছর-বছর উচ্চ মাধ্যমিকে রাজ্যের সেরার তালিকায় থাকেন বাঁকুড়া জেলার ছেলেমেয়েরা। অথচ, সে জেলাতেই সর্বভারতীয় মেডিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং প্রবেশিকা পরীক্ষার কোনও কেন্দ্র নেই। পরীক্ষা কেন্দ্র নেই পাশের জেলা পুরুলিয়াতেও। এ নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে দুই জেলার পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক ও শিক্ষকদের মধ্যে। চেষ্টা করেও পরীক্ষার আয়োজক সংস্থার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার মূলত দুই পরীক্ষার কেন্দ্র দেওয়া হয় দুই বর্ধমান জেলার বিভিন্ন শহরে। দক্ষিণ বাঁকুড়ার কিছু এলাকার পরীক্ষার্থীদের আবার মেদিনীপুরেও পরীক্ষা নেওয়া হয়। এই অবস্থায় দুই জেলাতেই পরীক্ষা কেন্দ্রের দাবি জোরাল হয়ে উঠেছে।
আগামী বছর জেইই-মেন পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে রঘুনাথপুর ১ ব্লকের বেড়োর শ্রীরামচন্দ্র আর্দশ বিদ্যালয়ের ছাত্র বেলডাঙা গ্রামের বিশ্বজিৎ চৌবে। সে বলে, ‘‘বাড়ি থেকে আসানসোল যেতে হলে বাসে প্রথমে রঘুনাথপুর। সেখান থেকে বাসে আসানসোল, না হয় বেড়ো স্টেশনে গিয়ে আসানসোলের ট্রেন ধরতে হয়। একে জেইই-মেন যথেষ্ঠ কঠিন পরীক্ষা। সেখানে বাস-ট্রেন বদলে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার ঝক্কিতে বাড়তি মানসিক চাপ পড়ে। জেলাতেই পরীক্ষাকেন্দ্র হলে সরাসরি একটা বাসেই পুরুলিয়ায় যাওয়া যেত।’’
রঘুনাথপুরের এক অভিভাবক সৈকত রক্ষিতের কথায়, ‘‘প্রথমার্ধে পরীক্ষা হলে রঘুনাথপুর থেকেই আসানসোল যাওয়াটা বেশ সমস্যার হয়ে দাঁড়ায়। ফলে, দক্ষিণ পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডি বা বান্দোয়ানের মতো ব্লক থেকে প্রথমার্ধে আসানসোলের পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছনো খুবই কঠিন।” এ বছর জেইই-মেন পরীক্ষা দিচ্ছেন সোনামুখীর মানিকবাজার গ্রামের পরীক্ষার্থী ইন্দ্রজিৎ রুইদাস। তিনি বলেন, ‘‘আগের দিন গিয়ে হোটেল থাকতেও অনেক খরচ। আত্মীয়ের বাড়িতে থাকাও এই সময়ে সমস্যার। আমার পক্ষে গাড়ি ভাড়া করে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়া ব্যয়বহুল।’’
রঘুনাথপুরের বাসিন্দা শিক্ষক নন্দদুলাল চক্রবর্তী জানান, প্রতি বছর পুরুলিয়ার অন্তত শতাধিক ছাত্রছাত্রী জেইই-মেন পরীক্ষায় বসেন। তাঁর মতে, ‘‘জেইই-মেন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য পরীক্ষার্থীদের মানসিক স্থিতি শান্ত থাকা প্রয়োজন। দীর্ঘ রাস্তা পরিশ্রম করে যেতে হলে সেই মানসিক স্থিতি নষ্ট হয়। তাই পুরুলিয়া শহরে পরীক্ষাকেন্দ্র হওয়াটা
একান্তই জরুরি।”
সিমলাপাল মদনমোহন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামরঞ্জন সিংহ জানান, ব্যক্তিগত ভাবে গাড়ি ভাড়া করে অনেক ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষা দিতে যাওয়া খুবই সমস্যার। বিষ্ণুপুরের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে রাহুল রায় জানান, তাঁর দু’দিন পরীক্ষা রয়েছে বর্ধমানে। তাঁর কথায়, ‘‘দু’দিন গাড়ি ভাড়া করে বর্ধমানে যাওয়া সম্ভব নয়। বাড়ির কাছাকাছি কেন্দ্র হলে চিন্তা থাকত না। প্রয়োজনে একটি পরীক্ষা না দেওয়ার কথা ভাবছি।’’
সোনামুখী বি জে হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জন চোংরে বলেন, ‘‘অ্যাডমিট কার্ডে পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবে আশপাশের জেলা দেখে অনেকেই দুশ্চিন্তায় পড়েছে। এই অবস্থায় প্রতিটি জেলায় পরীক্ষাকেন্দ্র হওয়া জরুরি ছিল।’’
সোনামুখীর পাথরমোড়ার বিনয়কৃষ্ণ পাল, সিমলাপালের জয়দীপ মান্নারাও বলেন, ‘‘দুর্গাপুরের পরীক্ষা কেন্দ্রে রিপোর্টিং টাইম সকাল ৭টা। আগের দিন না গেলে পৌঁছতে পারব না। কী যে হবে জানি না!’’
একই আশঙ্কা রয়েছে নিট-ইউজির পরীক্ষা (১৩ সেপ্টেম্বর) নিয়েও। পাত্রসায়রের দুঃস্থ পরিবারের শেখ শরিফের মেডিক্যালের নিট পরীক্ষার কেন্দ্র পড়েছে আসানসোলের কুলটিতে। তাঁর বাড়ি থেকে প্রায় ১২০ কিমি দূরে। তিনি বলেন, ‘‘গাড়ি ভাড়া করে বা হোটেল ভাড়া করে থেকে পরীক্ষা দেওয়ার আর্থিক সঙ্গতি নেই। কাছাকাছি সেন্টার পড়লে সুবিধা হত।’’
মল্লভূম ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির অফিসার ইনচার্জ বুদ্ধদেব ঘোষ বলেন, ‘‘বছর পাঁচেক আগে পর পর দু’বছর আমাদের কলেজে জেইই-মেন পরীক্ষার কেন্দ্র হয়েছিল। কিন্তু তারপরে যে বেসরকারি সংস্থা পরীক্ষা পরিচালনা করে, তারা আর এই জেলায় কেন্দ্র করছে না। দিল্লিতে খোঁজ নিয়ে জেনেছিলাম, এই জেলায় একটি পরীক্ষা কেন্দ্র করার জন্য যত পরীক্ষার্থীর প্রয়োজন, তা পাওয়া যায় না। কিন্তু সে কথা ঠিক বলে মনে হয় না। দুঃখের বিষয় আবেদনপত্রে হোম সেন্টারের উল্লেখ থাকলেও পরীক্ষার্থীদের সে অনুরোধ গ্রাহ্য হয় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy