Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

আর কবে পার্টি অফিস খুলবে, প্রশ্ন সিপিএমেই

খেজুরি থেকে রায়না, আরামবাগ থেকে নানুর— ভোটের মুখে রাজ্যের বহু প্রান্তে বছরের পর বছর বন্ধ হয়ে থাকা দলীয় কার্যালয় খুলে লড়াইয়ে ফেরার বার্তা দিয়েছে সিপিএম।

পোড়ো বাড়ির মত পড়ে রয়েছে পাত্রসায়রের পার্টি অফিস। —শুভ্র মিত্র

পোড়ো বাড়ির মত পড়ে রয়েছে পাত্রসায়রের পার্টি অফিস। —শুভ্র মিত্র

দেবব্রত দাস
পাত্রসায়র শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৫৪
Share: Save:

খেজুরি থেকে রায়না, আরামবাগ থেকে নানুর— ভোটের মুখে রাজ্যের বহু প্রান্তে বছরের পর বছর বন্ধ হয়ে থাকা দলীয় কার্যালয় খুলে লড়াইয়ে ফেরার বার্তা দিয়েছে সিপিএম। শুধু ভিন্ জেলা নয়, ভোটের মুখে বাম-কংগ্রেসের বোঝাপড়ার আবহে শক্তি বাড়িয়ে বাঁকুড়ার কিছু এলাকাতেও কার্যালয় খুলেছে সিপিএম। সেই চিত্রে ব্যতিক্রম পাত্রসায়র।

শুধু এই ব্লকেই সিপিএমের জোনাল, লোকাল ও শাখা মিলিয়ে ২০টিরও বেশি কার্যালয় বন্ধ রয়েছে। টিমটিম করছে কেবল জামকুড়ি লোকাল কমিটির অফিস। তবু বন্ধ কার্যালয় খোলার ব্যাপারে হেলদোল নেই দেখে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে পাত্রসায়রের নীচু চলার কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। এঁদের অনেকেরই প্রশ্ন, এখনই না হলে আর কবে ঘুম ভাঙবে নেতাদের?

বস্তুত, দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে বুক ঠুকে একের পর এক কার্যালয় ইতিমধ্যেই খুলে ফেলেছে সিপিএম। সেই কর্মসূচির নেতৃত্বে দেখা গিয়েছে স্থানীয় নেতাদেরই। খেজুরির হেঁড়িয়ায় পাঁচ বছর বন্ধ থাকা জোনাল অফিস খোলার নেতৃত্বে ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হিমাংশু দাস। উপস্থিত ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীও। একই ছবি দেখা গিয়েছে রায়নার সেহরাবাজারে। তৃণমূলের একচ্ছত্র দাপট থাকা নানুরেও সম্প্রতি বড়সড় মিছিল করে বন্ধ কার্যালয় খোলে সিপিএম।

তা হলে পাত্রসায়রে তেমনটা দেখা যাচ্ছে না কেন?

সিপিএমের নিচুতলার কর্মীরা অকপটে বলছেন, ‘‘আর কিছুই না! সাহসের অভাব।’’ অন্য জায়গাগুলিতে তো শুধু বুক ঠুকে, সাহসে ভর করেই কার্যালয় খোলা হয়েছে। এখানকার নেতারা সেই সাহসটুকুও দেখাতে পারছেন না।

যার নিট ফল, জোনাল কমিটির কার্যালয়টিও এখনও বন্ধ। পাত্রসায়র থানার কাঁকরডাঙা মোড়ে, পাত্রসায়র থেকে বাঁকুড়া ও বর্ধমান যাওয়ার রাস্তার ধারে পেল্লাই এই সাদা বাড়ি থেকেই এক সময় নিয়ন্ত্রণ করা হত গোটা তল্লাট। ভবনের পোশাকি নাম অনিল বিশ্বাস স্মৃতি ভবন। গত বিধানসভা ভোটের পরে আর কোনও নেতা-কর্মীর পা পড়েনি এই ভবনে। এক সময়ের ‘লালদুর্গ’ পাত্রসায়রের মাটি থেকে ‘লাল’ কার্যত উধাও। রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে সিপিএমের সংগঠনও তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতির সর্বত্র (বালসি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি আসন বাদে) প্রার্থীই দিতে পারেনি সিপিএম। পাত্রসায়র ব্লকের গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৩৪ টি আসনের মধ্যে ১২১টি, পঞ্চায়েত সমিতির ২৮টি আসনের মধ্যে ২৬টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিলেন তৃণমূলের প্রার্থীরা। এই ব্লক থেকে কার্যত ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছে সিপিএম।

অনেকেরই মত, এলাকায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে। ভোটের মুখে তা মারাত্মক আকার নিয়েছে। দুই গোষ্ঠীর মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষ এলাকা উত্তপ্ত হয়েছে। এই আবহে কার্যালয় খুলতে পারলে অন্তত লড়াইয়ের বার্তা দেওয়া যেতে পারত। এক কর্মীর কথায়, ‘‘ভোট চাইতে গেলে প্রশ্ন শুনতে হচ্ছে, তোমরা তো পার্টি অফিসটাই খুলতে পারো না। তৃণমূলের মোকাবিলা কী করে করবে?’’ এই সুযোগ কাজে লাগাতে না পারলে পরে আফশোস করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

সিপিএমের স্থানীয় এক নেতার যুক্তি, ‘‘তৃণমূল যে ভাবে ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করে রেখেছে তাতে পার্টি অফিস খুলতে যাওয়া যথেষ্টই ঝুঁকির।’’ তিনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বিধানসভা ভোটের আগে পরপর খুন হয়েছিলেন সিপিএম কর্মী জলধর বাগদি, তৃণমূল কর্মী বদরে আলম মিদ্যা, জগন্নাথ বাগদি। সিপিএমের জোনাল কমিটির সদস্য রঞ্জিত শ্যাম, মোজ্জাম্মেল হক মণ্ডল, অশোক চট্টোপাধ্যায়-সহ কয়েক জন নেতা আজও ঘরছাড়া। এরই মধ্যে কাঁটাদিঘি গ্রামের খুন হয়ে যান সিপিএম কর্মী লিয়াকত মিদ্যা। সেই ভয়ের বাতাবরণ টেনে আনার সঙ্গেই তিনি বলছেন মিথ্যে মামলার কথা। তাঁর দাবি, তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনায় সিপিএমের জোনাল সম্পাদক লালমোহন গোস্বামী-সহ বেশ কয়েক জন প্রথম সারির নেতাকে ফাঁসানো হয়। তাঁদের জেলও খাটতে হয়। সেই তথ্যের মুখে এক কর্মীর প্রশ্ন, ‘‘তবে কি আর কোমর ভাঙা পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারবে না দল?’’

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমিয় পাত্রের বক্তব্য, “পাত্রসায়রে জোনাল অফিস খোলার মতো কর্মী দলে এখনও অনেক আছে। খুলতেও পারতাম। কিন্তু তৃণমূলের গুণ্ডাবাহিনীর ভয়ে দলীয় কর্মীরা কত দিন সেই অফিস খুলে রাখতে পারত তা নিয়ে সন্দেহ ছিল। তাই আপাতত ওই অফিস না খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

ভোট প্রচারে পাত্রসায়রে কিছুটা কৌশলী পদক্ষেপের কথা শুনিয়েছেন জেলা সিপিএমের এক নেতা। তাঁর কথায়, ওই এলাকায় বড়সড় মিছিলে না গিয়ে বাড়ি বাড়ি প্রচারে জোর দেওয়া হচ্ছে।

এই প্রসঙ্গে উঠে আসছে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন। সিপিএমের পাত্রসায়র জোনাল কমিটির আহ্বায়ক তথা জেলা কমিটির সদস্য লালমোহন গোস্বামীর অভিযোগ, “ভোটের আগে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা দলীয় কর্মীদের মারধর, হুমকি দিয়েই চলেছে। পুলিশও তৃণমূলের দালালি করছে। তার মধ্যে দিয়েই সাধ্যমতো প্রচার কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’’

মারধর, হুমকির অভিযোগ অবশ্য মানতে চাননি তৃণমূলের জেলা কোর কমিটির সদস্য তথা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী। তাঁর টিপ্পনি, “পাত্রসায়রে সিপিএম করে এমন কেউ আছে নাকি?’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy