বার্তা: ক্লাসঘরে মোবাইল নিয়ে সংসদের সেই বিজ্ঞপ্তি। নিজস্ব চিত্র
ক্লাসে পাঠদান নিয়ে একাধিক অভিযোগ কানে এসেছে বীরভূম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের। সেই অভিযোগের তালিকার বড় অংশই ক্লাস চলাকালীন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের মোবাইল ফোন ব্যবহার সংক্রান্ত। এমনকি পড়ুয়াদের সঙ্গে নিজস্বী তোলার মতো অভিযোগও পেয়েছে সংসদ। এ বার ক্লাসে পড়ানোর সময় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মোবাইল ব্যবহার রুখতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের পক্ষ থেকে নির্দেশিকা জারি করা হল। একই সঙ্গে স্কুল প্রাঙ্গণের পরিবেশকে সুস্থ রাখতে এবং সবুজায়নের লক্ষ্যেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার জারি হওয়া ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ক্লাসে মধ্যে শিক্ষক শিক্ষিকারা পড়ুয়াদের উচ্চমানের পাঠদানের জন্যই তাঁদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করেন। কিন্তু কোনও কোনও ক্ষেত্রে মোবাইলে ক্রমাগত ‘রিং’ হয়ে পাঠদান প্রক্রিয়ায় বাধার সৃষ্টি হয়। তাই শিক্ষক-শিক্ষিকারা ক্লাসে মোবাইল ফোন নিয়ে যেতে পারবেন না। তাঁরা স্কুলে মোবাইল ফোন আনতে পারবেন, সেটি ব্যবহারও করতে পারবেন। কিন্তু ক্লাসে নৈব নৈব চ!
প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় প্রায় ২৪০১টি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। আছেন ৮৫০০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে প্রাথমিক স্কুলগুলির পাঠদানের মান ক্রমাগত নিম্নমুখী হচ্ছে বলে অভিভাবকদের বড় অংশের অভিযোগ। অনেক ক্ষেত্রেই অভিভাবকেরা সরকারি প্রাথমিক স্কুল থেকে সন্তানকে সরিয়ে বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের প্রতি আগ্রহও ক্রমশ বাড়ছে। সরকারি স্কুলের প্রতি এই অনাগ্রহের কারণ হিসেবে অনেকেই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ক্লাসে মোবাইল ফোন ব্যবহার করাকেও দায়ী করেছেন। যদিও সেটাই একমাত্র কারণ নয়।
অভিভাবকদের একাংশের দাবি, সরকারি স্কুলে যে নতুন শিক্ষক-শিক্ষিকারা যোগ দিচ্ছেন, তাঁদের কয়েক জন ক্লাসের মধ্যে মোবাইল নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতেই ব্যস্ত থাকেন। যার ফলে পড়ুয়াদের পঠনপাঠন ব্যাহত হয়। প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ এবং জেলার শিক্ষক সংগঠনগুলি সূত্রেই জানা যাচ্ছে, শিক্ষক সংগঠনগুলির হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলতেই দেখা যায় ক্লাসের সময় কোনও না কোনও শিক্ষক সেই গ্রুপে টাইপ করছেন। আবার কোনও শিক্ষকের প্রোফাইল খুললে দেখা যায় ক্লাস নেওয়ার সময়ও ওই শিক্ষক ফেসবুক অথবা হোয়াটসঅ্যাপে অনলাইন রয়েছেন।
এ সবের জেরেই ক্লাস চলাকালীন মোবাইল ফোন ব্যবহার রোখার জন্য নির্দেশ জারি হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি প্রলয় নায়েক বলেন, ‘‘যদি অফিশিয়ালি বলা হয়, তা হলে ৯৮ শতাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকা ক্লাসরুমে ফোন ব্যবহার করেন না। কিন্তু বাস্তব চিত্র ধরা হলে, তা সম্পূর্ণ আলাদা। আমাদের নির্দেশ ঠিকঠাক পালন হচ্ছে কিনা, তা দেখতে আমরা মাঝেমধ্যেই স্কুল পরিদর্শনে যাব।’’ ক্লাস চলাকালীন মোবাইল ব্যবহারের অভিযোগ মানতে নারাজ শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাঁদের দাবি, নিষ্ঠার সঙ্গেই তাঁরা পড়ুয়াদের পড়ান।
সংসদের এই পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়েছেন তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের জেলা সম্পাদক অরিন্দম বসু। তাঁর কথায়, ‘‘সকলে মোবাইল নিয়ে ক্লাসে যান না, এটা ঠিক। তবে, যাঁরা নিয়ে যান, তাঁরা ক্লাস চলাকালীন মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটি করলে বা ফোন এলে পড়াশোনা বিঘ্নিত হয়, পড়ুয়াদের মনোসংযোগেও ব্যাঘাত ঘটে। তাই সংসদের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়।’’
এবিপিটিএ-র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ভরত পালের বক্তব্য, ‘‘এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। তবে, স্কুলগুলির পরিকাঠামোগত উন্নতি হলে এই সিদ্ধান্ত কাজে আসবে। কারণ, শিক্ষকদের কাছে অনেক সময় স্কুল পরিদর্শকদের ফোন আসে। ক্লাসে থাকাকালীন শিক্ষক ফোন ধরবেন কী করে? এই দিকটা ভাবা দরকার।’’
বৃহস্পতিবারের ওই নির্দেশিকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের স্কুল চত্বরকে প্লাস্টিক-মুক্ত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে এবং ক্লাস পিছু চারটি করে গাছ লাগানোর কথা বলা হয়েছে। সেই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে পড়ুয়ারাও যাতে সক্রিয় যোগদান করে, সে দিকেও নজর দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রলয়বাবু বলেন, ‘‘মূলত প্লাস্টিক-মুক্ত সমাজ গড়া এবং বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সবুজায়নের লক্ষ্যে আমাদের এই উদ্যোগ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy