আয়োজন: চলছে খাবার বিতরণ। ছবি: কল্যাণ আচার্য
শুরু হয়েছিল ১২০ জনকে নিয়ে। দু’সপ্তাহের মাথায় সেই সংখ্যা বাড়তে বাড়তে হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। বীরভূমের কীর্ণাহার তরুণ সমিতির সদস্যরা লকডাউনের মাঝে এলাকার সাতটি গ্রামের সহস্রাধিক মানুষকে রান্না করা খাবার খাইয়ে চলেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৩৬ সালে স্থাপিত এই ক্লাব শুরু থেকেই নানা সেবামূলক কাজে যুক্ত। টানা লকডাউনের মাঝে অসহায় মানুষের কথা ভেবে ১৫ এপ্রিল থেকে একবেলা রান্না করা খাবার দেওয়া শুরু হয়। বসে খেতে চাইলে ক্লাব চত্বরেই প্যান্ডেল করে সামাজিক দূরত্ব মেনে খাওয়ানো হয়। বাকিরা টিফিন কৌটোয় করে খাবার বাড়ি নিয়ে যান। ত্রাণের খাবার মানে শুধু পেট ভরানোর ভাত, ডাল কিংবা কুমড়োর ঘ্যাঁট নয়। অতিথির পাতে নিত্যনতুন সব্জির পাশাপাশি নিয়মিত দেওয়া হয় মাছ, ডিমও।
ভোর থেকেই ক্লাব চত্বরে শুরু হয়ে যায় ব্যস্ততা। স্থানীয় গৃহবধূরা এসে মাছ-আনাজ কেটে, মশলা বেটে দিয়ে যান। ১৬ জন সহকারীকে নিয়ে বিনা পারিশ্রমিকে রান্না করেন তিন জন রাঁধুনি। তাঁদেরই অন্যতম বনমালী দাস, সঞ্জয় দাস এবং রাম দাসরা বলছেন, ‘‘রান্না করাই আমাদের জীবিকা। কিন্তু, এমন একটা উদ্যোগের কথা শুনে পারিশ্রমিকের কথা মনেই আসেনি। ক্লাবে যত দিন খাওয়ানো চলবে, তত দিন রান্না করে যাব।’’
প্রথম দিন থেকেই ক্লাবে খাওয়া-দাওয়া করছেন বিহারের পটনার বৈশাখীনগরের হাসেম শেখ, চন্দন শেখরা। স্থানীয় একটি গ্যারাজে কাজ করতে এসেছিলেন। লকডাউনের জেরে গ্যারাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রুটি-রুজি বন্ধ। ফিরতেও পারেননি। ক্লাব কর্তৃপক্ষ তাঁদের একবেলা বসে খাওয়ানোর পাশাপাশি রাতের খাবারও টিফিন কৌটোয় দিয়ে দেন। তাঁরা বলছেন, ‘‘হাতের টাকা শেষ হয়ে গিয়েছিল। ক্লাব খাবার না দিলে অনাহারে থাকতে হত।’’ স্থানীয় রামকৃষ্ণপুরের লক্ষ্মী হেমব্রম, ডাঙ্গাপাড়ার আনন্দ দাসেরা বলছেন, ‘‘সুসময়ে আমরা বাড়িতেও ওই সব খাবার রান্না করে খেতে পারি না। খাবারও অনেকটা দেওয়া হয়।’’
ক্লাবের এমন উদ্যোগে স্বেচ্ছায় পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন অনেকেই। সামর্থ্য মতো তুলে দিয়েছেন অর্থ, রান্নার জিনিস। ক্লাবের সভাপতি বুদ্ধদেব কর্মকার, সম্পাদক চন্দন রায় বলছেন, ‘‘এখন দৈনিক খরচ প্রায় ৪৫ হাজার টাকা। প্রথম দিকে যখন শুরু করি তখন টানা চালিয়ে যেতে পারব কিনা সংশয় ছিল। সবাই পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন বলে যত দিন লকডাউন চলবে, তত দিনই খাবার জুগিয়ে যেতে পারব বলেই মনে হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy