পুরুলিয়ার ব্যবসায়ীর ঘোষণা, কেউ যদি পণ না নিয়ে বিয়ে করেন, সেটা নিমন্ত্রণপত্রেও উল্লেখ করতে হবে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
‘‘করেছি পণ নেব না পণ বউ যদি হয় সুন্দরী। কিন্তু আমায় বলতে হবে স্বর্ণ দেবে কয় ভরি।’’ পণপ্রথাকে ব্যঙ্গ করে সেই কবে লিখেছিলেন অন্নদাশঙ্কর রায়। কিন্তু শতাব্দীপ্রাচীন সেই প্রথা আজও চলছে বহাল তবিয়তে। এই পুরুলিয়া জেলাতেই প্রতি সপ্তাহে তার প্রমাণ মেলে। পণের জন্য বধূর উপর অত্যাচার, এমনকি খুনের অভিযোগও উঠে আসে। ওই সামাজিক ব্যাধি নিয়ে সমাজকে বার্তা দিতে অভিনব উদ্যোগ এক কার্ড ব্যবসায়ীর। ওই গ্রাম্য যুবক ঘোষণা করেছেন, কেউ যদি পণ না নিয়ে বিয়ে করেন, তবে তাঁর দোকান থেকে বিনামূল্যে নিমন্ত্রণপত্র ছাপানো যাবে। তবে শর্ত আছে।
পুরুলিয়া জেলার জয়পুর থানার শ্রীরামপুর গ্রামের বাসিন্দা অভিরাম মাহাতো। এলাকাতেই একটি ছোট মনিহারি দোকান রয়েছে তাঁর। একই সঙ্গে বিভিন্ন রকম কার্ড ছাপানোর কাজ হয় দোকানে। বিয়ে, অন্নপ্রাশনের জন্য নিমন্ত্রণপত্র কিনতে দোকানে ভিড়ও বেশ ভালই হয়। সেই অভিরাম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, কোনও পাত্র যদি পণ না নিয়ে যায় বিয়ে করেন, তবে তাঁর বিয়ের নিমন্ত্রণপত্র একেবারে বিনামূল্যে তৈরি করে দেবেন তিনি। সে যত সংখ্যক নিমন্ত্রণপত্রই হোক না কেন।
কোন ঘটনা থেকে এমন সিদ্ধান্ত নিলেন? আনন্দবাজার অনলাইনকে অভিরাম জানান, যে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন, সেখান থেকেই তাঁর এই পদক্ষেপ। তিনি বলেন, ‘‘মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে অনেক বাবাকে দেখেছি সর্বস্বান্ত হতে। তাই আমি মনস্থির করেছি এই পণপথার মতো সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব।’’ তবে এই অভিনব ‘অফার’ পেতে হলে দোকানে এসে শুধু বললেই হবে না, কার্ডেও উল্লেখ করতে হবে যে কোনও পণ নিচ্ছেন না পাত্র। এটাই তাঁর শর্ত। অভিরামের কথায়, ‘‘পাত্রপক্ষ যে পণ নিচ্ছেন না, সেটা হলফ করে জানান দিতে হবে বিয়ের কার্ডে। আসলে এই বার্তা যেন আরও অনেকের কাছে ছড়িয়ে পড়ে যে, পণ নেওয়া এবং দেওয়া অপরাধ।’’ ব্যবসায়ীর সংযোজন, ‘‘আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে দিন দিন যে ভাবে পণের দাবি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে, তা রোধে অন্যরাও যদি এগিয়ে আসেন তা হলে খুব ভাল হয়।’’
অভিরামের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে অনেকেই তাঁর পাশে থাকার আশ্বাস দিচ্ছেন। যেমন অভিরামের এক পরিচিত রবীন্দ্রনাথ মাহাতো জানাচ্ছেন মাহাতো সম্প্রদায়ের কোনও যুবক পণ ছাড়া বিয়ে করলে তিনি বরের গাড়িভাড়া বাবদ ২,০০০ টাকা ‘উপহার’ দেবেন। তিনি বলেন, ‘‘পণের কারণে অনেকের বিয়ে ভেঙে যায়। দেখে খুব খারাপ লাগে। তাই আমি এই সিদ্ধান্ত নিলাম।’’ পেশায় ফার্মাসিস্ট রবীন্দ্রনাথের মতো পুরুলিয়া মফস্সল থানার চাকড়া গ্রামের যুবক ভোলানাথ রাজোয়ারও বলেছেন, তিনিও পণ না নেওয়া যুবককে উপহার দিতে চান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy