(বাঁ দিক থেকে) জলিতা, পূজা, শেফালি ও তাপসী শবর। নিজস্ব চিত্র।
স্মার্টফোন ছিল না। করোনা-পর্বে তাই অনলাইন ক্লাসের সুযোগ জোটেনি। ছিল না গৃহ শিক্ষকও। তবে সে সব না-পাওয়াকে আমল না-দিয়ে মনের জোর আর পরিশ্রমে ভর করে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছে শবর টোলার চার ছাত্রী। পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের বাধুডাবর শবর টোলার চার মেয়ে— তাপসী শবর, শেফালি শবর, জলিতা শবর ও পূজা শবরের এই সাফল্যে খুশির হাওয়া এলাকা জুড়ে।
বান্দোয়ান গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী তাপসীরা পঞ্চম শ্রেণি থেকে হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করেছে। তবে লকডাউনের জেরে হস্টেল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাড়িতে ফিরে আসতে হয় তাদের। তার পরে থেকে, বাড়িতেই চলেছে মাধ্যমিকের প্রস্তুতি। সম্পর্কে দুই বোন, তাপসী ও শেফালি বলে, “স্কুল বন্ধ থাকার সময়ে স্মার্টফোন না থাকায় অনলাইনে ক্লাস করতে পারিনি। কোনও টিউশন ছিল না। হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করলে রেজাল্ট আরও ভাল হত।” একই কথা জানিয়েছে জলিতা ও পূজাও।
তবে এই প্রথম নয়, কয়েক বছর আগে গ্রাম থেকে প্রথম মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছিল তাপসী, শেফালিদেরই দিদি আদরি শবর। এ বারেও দুই মেয়ের সাফল্যে তাদর মা আরটি শবর বলেন, “ওদের বাবা দিনমজুরের কাজ করে। মেয়েদেরও বাড়িতে কাজ করতে হয়। পরীক্ষায় পাশ করতে পেরেছে, খুব ভাল লাগছে।” পূজার বাবা সুভাষ শবরও বলেন, “লকডাউনে বাড়িতেই ছিল। অনলাইনে ক্লাস করতে পারেনি। নিজের মনের জেরে মেয়েগুলো উত্তীর্ণ হয়েছে।” চার কন্যার সাফল্যকে কুর্নিশ জানিয়ে ‘পশ্চিমবঙ্গ খেড়িয়া শবরকল্যাণ সমিতির অধিকর্তা প্রশান্ত রক্ষিত জানান, এ বছরে শবর মেয়েদের মধ্যে পাশের হার বেশ বেশি।
বান্দোয়ান গার্লস হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সোমা পাণ্ডে বলেন, “এক সঙ্গে শবর গ্রামের চার ছাত্রী উত্তীর্ণ হয়েছে। খুবই আনন্দের খবর। ওরা আরও এগিয়ে যাক। স্কুলে আলোচনা চলছে, যাতে ওদের হস্টেলে বিনা খরচে রাখা যায়। পড়াশোনাতেও আর্থিক সাহায্য করা হবে।”
বিডিও (বান্দোয়ান) কাসিফ সাবিরও জানান, শবর মেয়েদের এই সাফল্য অনুপ্রেরণা জোগাবে। সব ধরনের সাহায্য করা হবে। পূজারাও বলে, “এখানেই থামতে চাই না। নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি, এলাকার শিশুদের স্কুলমুখী করতে চাই।”
জেলায় শবর কন্যাদের মধ্যে প্রথম স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করা রমণিতা শবর বলেন, “খুব ভাল লাগছে যে, পড়াশোনায় শবর মেয়েদের আগ্রহ বাড়ছে। তারা যেন এ ভাবেই পড়াশোনা আরও এগিয়েনিয়ে যায়।”
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy