রেশনে জিনিসপত্রের পরিমাণ লেখা ফ্লেক্স টাঙানো হচ্ছে পুরুলিয়ায় ডিএম অফিসের কাছে। ছবি: সুজিত মাহাতো
বিলিবণ্টনে কোনও অনিয়ম হবে না বলে রেশন ডিলারদের মুচলেকা নিয়েছে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। বাঁকুড়া জেলাতেও স্বচ্ছতা বজায় রাখতে ডিলারদের দেওয়া হয়েছে কড়া নির্দেশ। এই ভাবে আটঘাট বেঁধেই আজ, শুক্রবার, মে মাসের প্রথম দিন থেকে তিন মাসের জন্য বিশেষ প্যাকেজে রেশন বণ্টন শুরু হতে চলেছে দু’জেলায়। যেখানে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন ও রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনার আওতায় থাকা সমস্ত ধরনের গ্রাহকেরাই বিনামূল্যে রেশন দ্রব্য পাবেন। বরাদ্দের পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে।
করোনা-সঙ্কটে রেশন প্রকল্পে বাড়তি সুবিধা চালু করেছিল রাজ্য। তবে প্রথম থেকেই রাজ্যের অন্য জেলার মতো বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলাতেও নানা অভিযোগকে ঘিরে প্রশাসনকে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয়। এই পরিস্থিতিতে অতীতের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতেই এ বার বেশ কিছু পদক্ষেপ করছে দুই জেলার প্রশাসন।
রেশন নিয়ে ঝামেলা এড়াতে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। তাঁরা ঠিক পরিমাণে মাল পেয়েছেন কি না, সে মালের গুণগত মান কেমন— এ সব লিখিত ভাবে ডিলারদের জানাতে হচ্ছে। পাশাপাশি, কোনও উপভোক্তাকে তাঁর প্রাপ্য খাদ্যসামগ্রী থেকে বঞ্চিত করা হবে না— তা-ও মুচলেকায় উল্লেখ করতে হচ্ছে ডিলারদের।
পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, “রেশন ডিলারেরা উপযুক্ত পরিমাণে এবং ঠিক গুণমানের মালপত্র পেয়েছেন। রেশনের জিনিসপত্র রাখার ক্ষেত্রে তাঁদের কোনও অসুবিধা নেই, এই মর্মে একটি ঘোষণাপত্রও নিচ্ছি। পাশাপাশি, তাঁরা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নিয়ম মেনে গ্রাহকদের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করবেন বলে অঙ্গীকারপত্রে উল্লেখ করতে হচ্ছে।”
ঘটনা হল, ‘লকডাউন’ পর্বের শুরুতেই মানবাজার ২ ব্লকের আঁকরো গ্রামে রেশন বিলিকে ঘিরে গ্রাহকদের সঙ্গে রেশন ডিলারের গোলমাল বাধে। জড়িয়ে যায় পুলিশও। দুই জেলার আরও কিছু এলাকাতেও রেশনে নানা গোলমাল হয়। কয়েকজন ডিলার সাসপেন্ডও হন।
যদিও ‘মুচলেকা’ লেখানোর বিষয়টি নিয়ে কিছুটা হলেও আপত্তি রয়েছে ‘ওয়েস্টবেঙ্গল এমআর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর পুরুলিয়া জেলা নেতৃত্বের। সংগঠনের জেলা সম্পাদক প্রভাশিসলাল সিংহদেও বলেন, “ঘোষণাপত্রে রেশনপণ্যের গুণগত মানের বিষয়ে আমাদের সই করতে বলা হয়েছে। গুণগত মান তো পরীক্ষা করা হয় পরীক্ষাগারে। আটার নমুনা কলকাতায় পাঠানো হয় গুণগত মান যাচাইয়ের জন্য। আমাদের পক্ষে খালি চোখে মালের গুনমাণ জানা সম্ভব? তবে নিয়ম মেনেই আমরা খাদ্যদ্রব্য বিলি করব।’’ তিনি জানান, তাঁরা এ বিষয়ে খাদ্য দফতরকে জানিয়েছেন। এ নিয়ে পুরুলিয়ার জেলাশাসকের বক্তব্য, “আটা প্যাকেট বন্দি থাকে। কিন্তু চালের মান কেমন, তা খালি চোখেই দেখা যায়।”
এ দিকে বৃহস্পতিবারও ‘ওয়েস্টবেঙ্গল এম আর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক গুরুপদ ধক অভিযোগ করেন, “জেলার অধিকাংশ ডিলারই পর্যাপ্ত মাল পেলেও কিছু ডিলারের কাছে এখনও মালপত্র পৌঁছয়নি। প্রশাসনকে জানিয়েছি।” বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) সীমা হালদার বলেন, “জেলায় রেশন দ্রব্যের কোনও অভাব নেই। সর্বত্রই পর্যাপ্ত খাদ্যদ্রব্য মজুত রয়েছে। প্রত্যেকে নিয়ম অনুযায়ী রেশন পাবেন।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, দুই জেলার তরফেই ব্লক স্তরে গ্রাম পঞ্চায়েত পিছু এক-এক জন করে আধিকারিককে গণবণ্টন ব্যবস্থা তদারকি করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং জেলা স্তরে এক জন করে আধিকারিককেও প্রতি ব্লকে নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রেশনে গ্রাহকদের প্রাপ্য কতটা তা দোকানের বাইরে টাঙানো থাকবে।
পাশাপাশি, প্রতিটি ব্লক অফিস, গ্রাম পঞ্চায়েত ও জেলা স্তরেও এই তালিকা প্রকাশ্যে টাঙানো থাকবে। ‘কমিউনিটি রেডিয়ো’র মাধ্যমে বাংলা ও সাঁওতালি ভাষায় গ্রাহকদের রেশনে প্রাপ্য কতটা, তা নিয়ে পুরুলিয়ায় এ দিন থেকে প্রচারও শুরু হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy