(বাঁ দিকে) কাজল শেখ। অনুব্রত মণ্ডল (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
ফি বছর বীরভূমের নানুরে মিলনমেলায় প্রধান অতিথি হয়ে যেতেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। মেলায় তাঁর জন্য বিশেষ উপহার রাখতেন আয়োজকেরা। দু’বছর পর জেল থেকে জেলায় ফিরেছেন তৃণমূলের ‘কেষ্ট’। কিন্তু এ বার মিলনমেলায় তিনি অনুপস্থিত। বুধবার বছরের প্রথম দিন তৃণমূলের প্রতিষ্ঠাদিবস উপলক্ষে নানুরের বাসপাড়া এলাকায় আয়োজিত সেই মিলনমেলায় পাঁচ কেজির একটি রুপোর মুকুট পরানো হল বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখকে। প্রশ্ন উঠছে, জেলায় থেকেও কেন দলের প্রতিষ্ঠাদিবস উপলক্ষে মেলায় নেই কেষ্ট? বীরভূমে তৃণমূলের অন্দরে কেষ্ট বনাম কাজলের ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’ কি আরও স্পষ্ট হল?
তৃণমূলের প্রতিষ্ঠাদিবস উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এ বারও শুরু হয়েছে মিলনমেলা। আগে ১০ দিন হত ওই মেলা। এ বার সাত দিনের মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও রয়েছে। সেখানে নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরা হবে। বুধবার ওই মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কাজল। যে ভাবে কেষ্টর মাথায় কখনও রুপোর মুকুট, কখনও হাতে রুপোর তলোয়ার তুলে দেওয়া হত, সে রকম ভাবেই কাজলের মাথায় পরানো হল একটি মুকুট। তৃণমূল সূত্রে খবর, ওই মুকুটটিও রুপোর। ওজন প্রায় পাঁচ কিলোগ্রাম। দাম পড়েছে প্রায় ৪ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা।
বীরভূমের রাজনীতিতে কাজল বনাম অনুব্রতের ‘দ্বন্দ্ব’ তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে সুবিদিত। গত কয়েক মাসে সেই ‘দ্বৈরথ’ বার বার প্রকাশ্যে এসেছে। প্রকাশ্যে দুই নেতা পরস্পরকে সম্মান জানান। নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, বীরভূমে তৃণমূলে কোনও গোষ্ঠীকোন্দল নেই। কিন্তু ঘটনাপরম্পরা ঠিক অন্য কথা বলে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে কেষ্ট তিহাড় থেকে বীরভূমে ফেরার পরে যখন দলে দলে নেতা এবং কর্মীরা তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন, কথা বলেছেন। সেই তালিকায় ছিলেন না কাজল। কারাবাসের সময়ে অনুব্রতকে জেলা তৃণমূলের সভাপতি পদ থেকে না-সরালেও জেলার রাজনীতি পরিচালনার জন্য একটি কোর কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই কমিটি এত দিন বীরভূমের সাংগঠনিক কাজকর্ম দেখার পাশাপাশি পঞ্চায়েত এবং লোকসভা ভোট পরিচালনারও কাজ করেছে। অনুব্রতকে ছাড়াই কোর কমিটির নেতারা ওই দু’টি ভোটে বীরভূমে তৃণমূলের ‘আধিপত্য’ বজায় রেখেছেন। বস্তুত, লোকসভা ভোটে ২০১৯ সালের চেয়ে জয়ের ব্যবধান বেড়েছে তৃণমূলের দুই সাংসদের। তাই বীরভূমের রাজনীতিতে অনুব্রত নিজের পুরনো জায়গা ফিরে পাবেন কি না, তা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই। অনুব্রতকে ওই কোর কমিটিতে জায়গা দেওয়ার প্রেক্ষিতে নাম না-করে একই প্রশ্ন তোলেন কাজলও। সোমবার তাঁর মাথায় মুকুট ওঠা নিয়ে কাজল বলেন, ‘‘এই এলাকার আমি জনপ্রতিনিধি। এখান থেকেই আমি জেলা পরিষদের সদস্য হয়েছি, জেলা সভাধিপতি হয়েছি। স্বাভাবিক ভাবেই কর্মীদের কাছে সেটা গর্বের এবং আবেগের বিষয়। সেখান থেকে তাঁরা আমায় উপহার দিয়েছেন। আমিও গ্রহণও করেছি।’’
অনুব্রত মেলায় কেন অনুপস্থিত, তা নিয়ে জেলা তৃণমূলের কেউ মুখ খোলেননি। মিলনমেলায় কাজলের ‘শিরোপা প্রাপ্তি’ নিয়ে কেষ্টকে প্রশ্ন করা হলে গম্ভীর গলায় তিনি বলেন, ‘‘শুনলাম। কী বলব! আমার কিচ্ছু বলার নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy