Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Water crisis

বালি সরানোয় জলে টান, দাবি

এ বার গ্রীষ্মের আগেই পানীয় জলের সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে পড়েছে পুরুলিয়া শহরে। জলের দাবিতে অবরুদ্ধ হয়েছে পুরুলিয়া-বাঁকুড়া (৬০-এ) জাতীয় সড়ক এবং পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়ক।

পাচার: পুরুলিয়া শহর লাগোয়া শিমুলিয়ায় পুরুলিয়া-জামশেদপুর জাতীয় সড়কের কংসাবতী সেতুর নীচ থেকে তোলা হচ্ছে বালি। এখানেও একাধিক পাম্প রয়েছে।

পাচার: পুরুলিয়া শহর লাগোয়া শিমুলিয়ায় পুরুলিয়া-জামশেদপুর জাতীয় সড়কের কংসাবতী সেতুর নীচ থেকে তোলা হচ্ছে বালি। এখানেও একাধিক পাম্প রয়েছে। ছবি: সুজিত মাহাতো।

প্রশান্ত পাল 
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২১ ০৭:০৭
Share: Save:

গরমের মরসুম শুরুর আগেই জলসঙ্কট দেখা দিয়েছে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলার সদর শহরে। সরকারি বিভিন্ন পদক্ষেপের পরেও ভোগান্তির ছবি ফিরে ফিরে আসছে। কেন এই আকাল? উত্তর খুঁজল আনন্দবাজার।

সম্প্রতি জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছে পুরুলিয়ার ‘এমইডি’ (মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিরেক্টরেট)। তাতে দাবি করা হয়েছে, শহরের উপকন্ঠে কংসাবতী নদীর তেলেডি ঘাট থেকে নির্বিচারে বালি তুলে নেওয়ায় পানীয় জলের উৎস শুকিয়ে যাচ্ছে। টান পড়ছে জলের ভাঁড়ারে। অবিলম্বে পদক্ষেপ না করা হলে, আগামী পাঁচ-ছ’ বছরের মধ্যে পুরুলিয়ায় ভয়ানক জলসঙ্কট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা ‘এমইডি’র আধিকারিকদের।

রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে, পুরুলিয়া শহরের পানীয় জলের সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ করা হয়েছিল। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যুগ্ম আর্থিক বরাদ্দে ৭০ কোটি ৬ লক্ষ ২২ হাজার টাকা খরচ করে নতুন পানীয় জল প্রকল্প গড়ে তোলা হয়। প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ‘এমইডি’-কে। শহরকে পাঁচটি জ়োনে ভাগ করে পাঁচটি নতুন ওভারহেড ট্যাঙ্ক গড়া হয়। ষাটের দশকে গড়ে ওঠা নলবাহিত পানীয় জল প্রকল্পের লাইনের পাশাপাশি নতুন করে ১৫০ কিলোমিটার পাইপ পাতা হয়। প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়েছিল ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে। ২০১৮ সালের গোড়া থেকে তার জল মিলতে শুরু করে। গরমের দিনগুলিতে হাহাকার সেই থেকে অনেকটাই মিটে গিয়েছিল। পরে, সংস্থানের ভিত্তিতে বাড়ি বাড়ি জলের সংযোগও দেওয়া শুরু হয়।

‘এমইডি’ সূত্রে জানা গিয়েছে, নদীর নীচে ‘ইনফিলট্রেশন গ্যালারি’ তৈরির মাধ্যমেই জলের জোগান বাড়ানো সম্ভব হয়েছিল। কী ভাবে? ‘এমইডি’র এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘নদীর বালির স্তরেই জল সঞ্চিত থাকে। উপর থেকে নদী শুকনো দেখা গেলেও বালির তলা দিয়ে জল নীচের দিকে প্রবাহিত হয়। নীচে জলের সেই স্রোত আটকে জোগান বাড়ানো সম্ভব হয়েছিল।’’ তিনি জানান, বালির নীচে আড়াআড়ি কংক্রিটের বাঁধ দিয়ে জল ধরে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। ফলে, গরমে উপর উপর নদী শুকিয়ে গেলেও প্রকল্প চালুর পরে বালির তলার জল গ্রীষ্মের চাহিদা মিটিয়েছে।

কিন্তু এ বার গ্রীষ্মের আগেই পানীয় জলের সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে পড়েছে পুরুলিয়া শহরে। জলের দাবিতে অবরুদ্ধ হয়েছে পুরুলিয়া-বাঁকুড়া (৬০-এ) জাতীয় সড়ক এবং পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়ক। কোনও কোনও এলাকায় টানা দু’-তিন দিন ধরে জল যায়নি। ‘এমইডি’র এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সুবীর নাগ বলেন, ‘‘প্রকল্পের উৎস, মানে কংসাবতীতেই জলের ভাণ্ডার তলানিতে ঠেকেছে। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে যে বৃষ্টি হয়েছিল, তার ভরসায় এত দিন চলেছে। উৎস শুকিয়ে গেলে, আমাদের কী করার আছে?’’ সুবীরবাবু জানান, বর্ষা ও পরবর্তী হাতে গোনা কয়েকমাস বাদ দিলে কংসাবতী দিয়ে জল বয় না। জল থাকে বালির স্তরে। নদীর বুক থেকে সেই বালিই নির্বিচারে তুলে নেওয়ায় সমস্যা বলে দাবি তাঁর। সুবীরবাবু বলেন, ‘‘বালি উধাও হয়ে গেলে, কোথা থেকে জল মিলবে? বিষয়টি আমরা পুরসভাকে জানিয়েছি। জেলা প্রশাসনকেও চিঠি দিয়েছি।’’

পানীয় জলের ঘাটের ধারে-কাছে বালি তোলা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তেলেডি ঘাটের কাছেও ভূমি দফতর অনুমোদিত কোনও বালিঘাট নেই। তার পরেও আকছার বালি তোলা ও পাচারের অভিযোগ প্রায়ই সেখান থেকে উঠে আসে। পুরুলিয়া পুরসভার প্রশাসক মৃগাঙ্ক মাহাতো বলেন, ‘‘বালি চুরি রোখা পুরসভার পক্ষে সম্ভব নয়। এমইডি আমাদের জানিয়েছে। আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি।’’ জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘বিষয়টা নজরে এসেছে। দেখা হচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Water crisis Sand Mining
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy