গাছের গুঁড়ি ফেলে। নিজস্ব চিত্র
একাধিকবার আবেদন করেও পরিষেবা না পাওয়ার অভিযোগে বান্দোয়ানের একটি শবরপাড়ার বাসিন্দারা দুয়ারে সরকারের ভ্রাম্যমাণ শিবিরের গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখালেন। বুধবার পুরুলিয়ার বান্দোয়ানে জারা শবরপাড়ার ঘটনা। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক ধরে তাঁরা প্রশাসনের আধিকারিকদের গাড়ির দু’পাশে কাঠের গুঁড়ি, খাটিয়া ফেলে রাখেন।
খবর পেয়ে সেখানে যান বান্দোয়ানের যুগ্ম বিডিও সুপ্রিয়া মণ্ডল-সহ আরও কয়েকজন আধিকারিক। সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের আশ্বাসে বিক্ষোভ থামে। তবে এ দিন আর সেখানে শিবির হয়নি। ব্লক প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, আজ, বৃহস্পতিবার শবরপাড়ার বাসিন্দাদের ব্লক অফিসে এনে তাঁদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে। তবে পঞ্চায়েত ভোটের মুখে জঙ্গলমহলের শবরদের সরকারি পরিষেবা না পাওয়ার এই অভিযোগকে ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে।
ওই গ্রামে ৩০টি শবর পরিবারের বাস। তাঁরা জানান, প্রতিবার তাঁদের এলাকায় দুয়ারে সরকারের শিবির হয়। ভ্রাম্যমাণ শিবিরের গাড়িও আসে। ওই গ্রামের যুবক ভিক্টর শবর, দেবাঞ্জন শবর, জয়দেব শবরদের দাবি, “গ্রামে তিনবার দুয়ারে সরকারের শিবির হয়েছে। জাতিগত শংসাপত্র, রেশন কার্ড, বয়স্ক পেনশনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু বার বার আশ্বাস দেওয়া হলেও অধিকাংশ বাসিন্দা পরিষেবা পাননি। আমরা চাইছি, এ বার আমাদের জমা দেওয়া কাগজপত্র প্রশাসন ফিরিয়ে দিক।’’
বয়স্ক কৃষ্ণ শবর, লক্ষ্মীকান্ত শবরেরও দাবি, বেশ কয়েকবার তাঁরা শিবিরে জাতিগত শংসাপত্রের জন্য আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু এখনও তা হাতে পাননি। পানমনি শবরের আক্ষেপ, ‘‘বিধবা ভাতার জন্য কাগজপত্র জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু এখনও ভাতা পাইনি।’’ গ্রামের বধূ শেফালি শবর ও সুমিত্রা শবরের অভিযোগ, “জাতিগত শংসাপত্র না থাকায় লক্ষ্মীর ভান্ডারে অর্ধেক টাকা পাচ্ছি। অনেকবার আবেদন করেছি। কিন্তু এখনও জাতিগত শংসাপত্র পাইনি।’’ পাড়ায় পাকা রাস্তা থাকলেও গ্রামে যাওয়ার দু’দিকে রাস্তা কাঁচা থাকা নিয়েও এ দিন তাঁরা বিক্ষোভ দেখান।
মানবাজারের মহকুমাশাসক অনুজপ্রতাপ সিং বলেন, ‘‘এ দিন কী ঘটেছে জানি না। তবে দুয়ারে সরকারের শিবির থেকে অনেককে সরকারি পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। কারও এ সংক্রান্ত অভিযোগ থাকলে শিবিরে রাখা অভিযোগ বাক্সে তা লিখিত ভাবে জানাতে পারেন। তা দেখা হবে।’’ বান্দোয়ান বিধানসভার বাসিন্দা তথা জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান হংসেশ্বর মাহাতো বলেন, ‘‘ঘটনার কথা শুনেছি। বিশদে খোঁজ নেব।’’
এই ঘটনাকে ঘিরে শাসকদলের বিরুদ্ধে কটাক্ষ শুরু করেছেন বিরোধীরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রথু সিং বলেন, ‘‘দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে দুয়ারে সরকারের শিবিরে নথিপত্র জমা করছেন মানুষজন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই জাতিগত শংসাপত্র পাচ্ছেন না। জমির মিউটেশন করাতে পারছেন না। শুধুই প্রচার, কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। তাই মানুষজনের মধ্য তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি বিবেক রঙ্গার অভিযোগ, ‘‘ভোটের আগের এদের দুয়ারে সরকার মনে পড়ে যায়। ভোট শেষে খুব দূরে সরকার হয়ে যায়। এটাই এদের নীতি।’’
বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে বান্দোয়ানের তৃণমূল বিধায়ক রাজীবলোচন সরেন বলেন, ‘‘অনেকেরই আধার কার্ড, ভোটার কার্ড ছিল না। বিশেষ অভিযান করে সে সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারি পরিষেবা তাঁরা পাচ্ছেন না, এমনটা নয়। কারও উস্কানিতে করে থাকলে খুব দুঃখজনক। সরকার শবর সম্প্রদায়ের মানুষজনের জন্য আলাদা চিন্তাভাবনা করেছে। আমিও শবর সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। তাঁরা কী চাইছেন, খতিয়ে দেখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy