Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪

জন্তুর আক্রমণে মৃত্যু, ভয়ে কাঁটা নসিপুর

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সকালে গ্রামের মাঠ থেকে মাশরুম তুলতে গিয়েছিলেন সোনামণি। আচমকা কোনও এক জন্তু তাঁর উপরে আক্রমণ চালিয়ে তাঁকে ক্ষতবিক্ষত করে।

ঠিক কী হয়েছে, জানাচ্ছেন আক্রান্তেরা। নিজস্ব চিত্র

ঠিক কী হয়েছে, জানাচ্ছেন আক্রান্তেরা। নিজস্ব চিত্র

তন্ময় দত্ত
মহেশপুর (ঝাড়খণ্ড) শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:১৬
Share: Save:

বাঘের আতঙ্কে কাঁটা হয়ে রয়েছে ঝাড়খণ্ডের মহেশপুর থানার নসিপুর। সেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে মহেশপুর লাগোয়া বীরভূমের মুরারই ১ ব্লকের কনকপুর-সহ একাধিক গ্রামে। বাঘের আক্রমণে নসিপুরের এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে গ্রামবাসীদের দাবি। মৃতার নাম সোনামণি টুডু (৬০)। কিন্তু, ওই গ্রামে বাঘ আসবে কোত্থেকে, সেই উত্তর মেলেনি। নসিপুর গ্রামের কাছেই রয়েছে আদুয়াপাহাড়ের জঙ্গল। তবে, ওই জঙ্গলে কস্মিনকালেও বাঘের দেখা মেলেনি বলে বন দফতর জানিয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সকালে গ্রামের মাঠ থেকে মাশরুম তুলতে গিয়েছিলেন সোনামণি। আচমকা কোনও এক জন্তু তাঁর উপরে আক্রমণ চালিয়ে তাঁকে ক্ষতবিক্ষত করে। তিনি ভয়ে চেঁচাতে থাকেন। গ্রামবাসীরা উদ্ধার করে গ্রামে নিয়ে আসেন। সোনামণির ঘাড়ে ও গলায় বন্য প্রাণীর কামড়ানো ও আঁচড়ানোর গভীর দাগ দেখা যায়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। নসিপুরের বাসিন্দাদের দাবি, অন্য কিছু নয়, বাঘই মেরেছে সোনামণিকে। সোনামণির ঘটনার পরে ওই প্রাণীকে ধরতে কয়েক জন গ্রামবাসী ওই মাঠে যান। তাঁদের উপরেও হামলা চালায় বাঘ বলে দাবি এলাকাবাসীর। নরেশ হাসদা, মনির মুর্মু, বুদিনাথ মারান্ডি, লক্ষ্মীরাম হাঁসদা, অনেশ সরেন আহত হন।

আহতদের মধ্যে মনির মুর্মুর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে মহেশপুর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো করা হয়। এ দিন ওই গ্রামে গেলে মৃত মহিলার জামাই লক্ষ্মীরাম বলেন, ‘‘আমার শাশুড়িকে কামড়ানোর পরে আমরা মাঠে দেখতে গেলে বাঘ আমাদের উপরেও হামলা চালায়। আমার গলায় কামড় বসায়। আমি প্রাণভয়ে ছুটতে গিয়ে পড়ে যাই। তখন বাঘ আবারও আমার পা কামড়ে ধরে। আমাকে বাঁচাতে গ্রামবাসীর ছুটে এলে অন্যদের উপরে হামলা চালায়।’’

লাঠি-ধনুক হাতে শুরু হয়েছে গ্রাম পাহারা। নিজস্ব চিত্র

ঝাড়খণ্ড বন দফতরের মহেশপুরের রেঞ্জার অনিল সিংহ বলেন, ‘‘গ্রাম গিয়ে আমরা খোঁজখবর করেছি। গ্রামবাসীরা দাবি করেছেন, ওই জন্তুটি বাঘই। গ্রামবাসীদের এ দিন বিভিন্ন বাঘের ছবি দেখানো হয়। তাঁরা যে ছবিটি শনাক্ত করেন, সেটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের। আমরা ওই জন্তুর খোঁজ চালাচ্ছি।’’ তিনি জানান, মৃত মহিলার পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আহতেরাও টাকা পাবেন।

মুরারই থেকে মেরেকেটে ৮ কিলোমিটার দূরত্ব মহেশপুরের। বাসিন্দারা নিত্য প্রয়োজনে যাতায়াত করেন দুই রাজ্যে। বাঘের খবর ছড়িয়ে পড়তে সীমানবর্তী মুরারই থানার কনকপুর, খানপুর এবং অন্য গ্রামগুলিতে আতঙ্ক ছড়ায়। নসিপুর থেকে এই গ্রামগুলির দূরত্ব সামান্যই। কনকপুরের বাসিন্দা মহম্মদ আনোয়ার আলি বলেন, ‘‘আমাদের গ্রাম থেকে মাত্র ছয় কিলোমিটার দূরে নসিপুর। ভয়ে বাচ্চাদের বাইরে বেরোতে দেওয়া হচ্ছে না। রাতপাহারা শুরু হবে কিনা, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। বাঘ বা যে জন্তুই হোক, মহেশপুর বন দফতর সেটিকে ধরতে পারলে আমরা চিন্তামুক্ত হবে।’’

আতঙ্ক দূর করতে নসিপুর গ্রামে ক্যাম্প করেছে বন দফতর এবং পুলিশ। গ্রামবাসীরাও লাঠি, তির-ধনুক, হাঁসুয়া, বল্লম হাতে গ্রাম পাহারা দিচ্ছেন। বন দফতর জন্তুটিকে ধরার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দূর দূর ধান জমি হওয়ায় সেটি ঠিক কোথায় লুকিয়ে রয়েছে, তা জানা যাচ্ছে না। সন্ধ্যে পর্যন্ত তল্লাশিতে জন্তুটির অবস্থান জানতে পারেনি ঝাড়খণ্ডের বন দফতর। ছাগলের টোপ দিয়ে তিন জায়গায় খাঁচা বসানো হয়েছে। টোপের লোভে সেই জন্তু ধরা দেয় কিনা, সেটাই এখন দেখার।

অন্য বিষয়গুলি:

Animal Attack Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy