জলমগ্ন: বাঁকুড়ার জয়পুর ব্লকের জরকা এলাকা। বুধবার। নিজস্ব চিত্র।
ভোরে সেচখালের পাড় ভেঙে প্লাবিত হল বাঁকুড়ার জয়পুর ব্লকের উত্তরবাড় পঞ্চায়েতের জরকা গ্রাম। বুধবারের ঘটনা। পড়িমড়ি করে বাসিন্দারা ঘর ছেড়ে আশ্রয় নেন গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে। ভেঙে পড়ে কয়েকটি মাটির বাড়ি। ডুবে যায় কয়েক বিঘা জমির ধান।
অতিরিক্ত জেলাশাসক (বাঁকুড়া) অসীমকুমার বিশ্বাস বলেন, “খবর পাওয়ার পরেই উদ্ধার কাজ শুরু হয়। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে ত্রাণশিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়। বাড়ি মেরামতিতে সাহায্যের জন্য ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।’’
বিষ্ণুপুরের বাসুদেবপুর থেকে কংসাবতী ক্যানাল জরকা হয়ে ঘাটালের দিকে গিয়েছে। বিডিও (জয়পুর ) বিট্টু ভৌমিক বলেন, “খবর পেয়েই বাসুদেবপুরের ক্যানালের গেট বন্ধ করা হয়। জরকার ভেঙে যাওয়া ক্যানালের পাড় বালির বস্তা দিয়ে মেরামত করা হয়েছে।’’
বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে মেরামত ও পর্যবেক্ষণের অভাবেই এ দিন দুর্ঘটনা ঘটে। যদিও সে অভিযোগ মানতে নারাজ সেচ দফতরের এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (বিষ্ণুপুরের কংসাবতী ক্যানাল ৩ বিভাগ) সুব্রত দে। তিনি দাবি করেন, “খবর পেয়েই আমরা ক্যানালের পাড়ের ভেঙে যাওয়া অংশ মেরামত করে দিয়েছি। কোনও কারণে ক্যানালের পাড়ে গর্ত হয়ে যাওয়ায় এই দুর্ঘটনা হতে পারে। ক্যানাল পর্যবেক্ষণ করা হয় না, তা নয়। তবে দফতরে পর্যাপ্ত কর্মী নেই।”
জরকা গ্রামে প্রায় ৭০টি পরিবারের বাস। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশ তফসিলি জাতির। দিনমজুরের কাজ করেই তাঁদের সংসার চলে। বাসিন্দারা জানান, এ দিন ভোর ৫টা নাগাদ তাঁদের একাংশ দেখেন, ক্যানালের পাড় দিয়ে জলের স্রোত গ্রামের দিকে এগিয়ে আসছে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা চিৎকার করে অন্যদের সতর্ক করে দেন। অধিকাংশই মাটি ও চিটেবেড়ার ঘরে বাস করেন। ঘর ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় ছেলেপুলেদের ঘুম থেকে তুলে, বাবা-মায়েরা গ্রামের পাকা স্কুলের দিকে দৌড় লাগান।
ত্রাণ শিবিরে প্রায় ১০০ জন বাসিন্দা আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানাচ্ছেন বিডিও। সেখানে তাঁদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ত্রাণ শিবিরে বসে ফেলে আসা সংসারের জন্য আক্ষেপ করছিলেন রেখা মহাদণ্ড, লক্ষ্মী মহাদণ্ড, দামোদর মহাদণ্ড, রাজু রুইদাসেরা। তাঁরা বলেন, ‘‘অল্প অল্প করে সঞ্চয় করে থালা-বাসন, লেপ-কম্বল, জামা-কাপড় কিনেছিলাম। ছিল সংসারের নানা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। কিন্তু তাড়াহুড়ো করে বাড়ি থেকে বেরোতে গিয়ে কিছুই নিয়ে আসা হয়নি। জলে ঘর ভেঙে গেলে সব শেষ হয়ে যাবে!’’
বাড়িঘর হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অনেকেই। স্থানীয় বাসিন্দা অজয় মহাদণ্ড বলেন, ‘‘সারা বছরের মজুত করা চাল ভেসে গেল জলের তোড়ে। খাবার থালাটাও নেই। দেওয়াল চাপা পড়ে পোশাক-আশাক নষ্ট হয়েছে বেশির ভাগ মানুষের।” কাঞ্চন মহাদণ্ড আক্ষপ করছিলেন, “সামনেই শীত। কাপড়চোপড় সবই জলে ভেসে গিয়েছে। হাঁস-মুরগিগুলো কি আর আছে? বাচ্চাদের নিয়ে কোথায় থাকব, কী খাব জানি না!”
ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, এ দিন পর্যন্ত পাঁচটি মাটির ঘর ভেঙে পড়েছে। রোদ বাড়লে আরও ঘর ভাঙার আশঙ্কা রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে সরকারি প্রকল্পে বাড়ি মেরামতের আবেদনপত্র নেওয়া হচ্ছে। উদ্ধারে হাত লাগান উত্তরবাড় পঞ্চায়েতের স্থানীয় সদস্য জাকির খান। তিনি বলেন, “গভীর রাতে এই দুর্ঘটনা ঘটলে কী যে হত!’’ সেখানে যান তৃণমূলের জয়পুর ব্লক সভাপতি ইয়ামিন সেখ ও ব্লক নেতা দিলীপ খাঁ ।
বিডিও বলেন, ‘‘গ্রাম থেকে জল বার করে দেওয়া হয়েছে। তবে আরও ঘর ভাঙার আশঙ্কা থাকায়, পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হচ্ছে। ধানের কেমন ক্ষতি হয়েছে, তা কৃষি দফতরকে দেখতে বলা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy