উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। —ফাইল চিত্র।
রবীন্দ্র ভাবাদর্শের শিক্ষাপ্রাঙ্গন শান্তিনিকেতনকে রবিবার সন্ধ্যায় ‘বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্র’ হিসাবে চিহ্নিত করেছে ইউনেস্কো। সোমবার এই স্বীকৃতির উদ্যাপনের মধ্যেই বিশ্বভারতীর আশ্রমিক ও প্রাক্তনীদের ‘জঞ্জাল’ বলে মন্তব্য করলেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। অতীতেও একাধিক বার আশ্রমিক ও প্রাক্তনীদের একাংশকে প্রকাশ্যে আক্রমণ করতে দেখা গিয়েছে উপাচার্যকে। নাম না করে তাঁদের ‘অশিক্ষিত’, ‘অল্পশিক্ষিত’, ‘বুড়ো খোকা’ বলতে শোনা গিয়েছে তাঁকে। কিন্তু শান্তিনিকেতনের এই খুশির দিনেও উপাচার্যের এমন মন্তব্য নিয়ে সমালোচনায় সরব বিভিন্ন মহল।
বিশ্বভারতীর শিক্ষাপ্রাঙ্গণের যা ‘কোর এরিয়া’, তার ৩৬ হেক্টর জমিকেই ঐতিহ্যক্ষেত্রের স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। এর মধ্যে শান্তিনিকেতনের আশ্রম, উত্তরায়ণ, কলাভবন, সঙ্গীতভবন প্রাঙ্গণ রয়েছে। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক এবং দেশের পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের হয়ে শান্তিনিকেতনের জন্য দাবিপত্রটি তৈরি করেছিলেন সংরক্ষণ স্থপতি আভা নারায়ণ লাম্বাহ এবং মণীশ চক্রবর্তী মিলে। সুসংবাদ আসার পরেই রবিবার রাতে আলোয় সেজে উঠেছিল বিশ্বভারতীর উপাসনাগৃহ। শান্তিনিকেতনে নানা জায়গায় মিষ্টিমুখ, আবির খেলাও হয়। শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন উপাচার্য। তার পর সোমবার সকালে বিশ্বভারতীর শ্রীনিকেতনে বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষে শিল্প উৎসব পালিত হয়। সেই উৎসবে বক্তৃতা করতে গিয়ে আশ্রমিক ও প্রাক্তনীদের আবারও আক্রমণ করলেন বিদ্যুৎ। তিনি বলেন, ‘‘আজ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যদি বেঁচে থাকতেন, তা হলে তিনি প্রথমেই আশ্রমিক এবং প্রাক্তনীদের তাড়াতে। তার কারণ, তাঁরা হচ্ছেন এই বিশ্বভারতীর পক্ষে জঞ্জাল।’’
উপাচার্যের এই মন্তব্যের নিন্দা করেছেন প্রাক্তনী এবং আশ্রমিকদের একাংশ। প্রাক্তনী নুরুল হোক বলেন, ‘‘এই উপাচার্যের মুখে এই মন্তব্যই কাম্য।। উনি আগেও বার বার এ সব বলেছেন। আগামী দিনেও বলবেন। আমরা এখনও বলছি, এতে ওঁর কোনও কৃতিত্ব নেই। তাই উনি কী বলছেন, সে নিয়ে আমাদের ভেবে লাভ নেই।’’
ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলেও ঐতিহ্যক্ষেত্রের স্বীকৃতি বছর-বছর খতিয়ে দেখে ইউনেস্কো। স্বীকৃতি দেওয়ার পর তালিকা থেকে বাদ পড়ার কিছু নজিরও রয়েছে। প্রথম বার শান্তিনিকেতনকে ইউনেস্কোর দরবারে পেশ করার অন্যতম পুরোধা, তৎকালীন কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি সচিব (বর্তমানে তৃণমূল সাংসদ) জহর সরকারের মত, এই স্বীকৃতি ধরে রাখতে গেলে রবীন্দ্র ভাবাদর্শের পরিপন্থী পদক্ষেপ এড়িয়ে চলতে হবে বিশ্বভারতীকে। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরম্পরা কতটা সুরক্ষিত, তা নিয়ে প্রবীণ আশ্রমিক তথা রবীন্দ্র অনুরাগী গবেষক, পণ্ডিত মহলেও নানা সংশয় রয়েছে। রবীন্দ্র অগ্রজ সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রপৌত্র সুপ্রিয় ঠাকুর বলেছেন, ‘‘খুব আনন্দের বিষয়। কিন্তু আমার মনে হয়, এর সঙ্গে একটি দায়িত্বের দিক রয়েছে। যা বর্তমান কর্তাব্যক্তিরা কতটা পালন করতে পারবেন, সে সম্বন্ধে একটু সন্দেহ জাগে। তবে এই স্বীকৃতি যেন বজায় থাকে, তার অনুরোধ থাকবে।’’
সোমবার এ নিয়েও কটাক্ষ করেছেন উপাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘সবে তকমা মিলেছে। তার মধ্যেই কেউ কেউ সংশয় প্রকাশ করে বলছেন, বিশ্বভারতী এই তকমা ধরে রাখতে পারবে তো? অর্থাৎ প্রথমেই নেগেটিভিটি!’’ শিল্পোৎসবের মঞ্চ থেকে নাম না করে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকেও আক্রমণ করেন বিদ্যুৎ। তিনি বলেন, ‘‘আপনারা জানেন বিশ্বভারতীর এক প্রাক্তনী ৭২ শতক জমি ও বাড়ি দান করেছেন বিশ্বভারতীকে। আর সাড়ে ছ’কাঠা জমির জন্য আমাদের বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী তথাকথিত আশ্রমিক কুম্ভীরাশ্রু বর্ষণ করছেন প্রত্যেক দিন!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy