পাকা রাস্তার পাশে বাঁধানো নালায় সার দিয়ে বসে প্রাকৃতিক কাজ সারছে কিছু বালক। তাদের সামনে দিয়েই নাক ঢেঁকে পার হচ্ছেন পথচারীরা। বাঁকুড়া জেলার তিন পুরশহরেরই এই দৃশ্য আকছার চোখে পড়ে। ছবিটা এ বার বদলাতে চলেছে। স্বচ্ছ ভারত বা নির্মলবাংলা প্রকল্পে পুরশহরে বাড়ি বাড়ি এ বার শৌচালয় গড়তে উদ্যোগী হয়েছে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর ও সোনামুখী পুরশহরকে নির্মল করতে বেশ কয়েক কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। যার মধ্যে বাঁকুড়া পুরসভাকে প্রায় সাত কোটি ১২ লক্ষ টাকা, বিষ্ণুপুর পুরসভাকে প্রায় চার কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা এবং সোনামুখী পুরসভাকে প্রায় এক কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
পুরসভাগুলি সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁকুড়া শহরে আট হাজার ৬৯১, বিষ্ণুপুরে পাঁচ হাজার ৩২৫ ও সোনামুখী পুরসভায় দু’হাজার ১১০টি শৌচালয় বিহীন বাড়ি রয়েছে। এই প্রকল্পে সব কটি বাড়িতেই শৌচালয় গড়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি শৌচালয় গড়ার জন্য ১০ হাজার ৯০০ টাকা করে বরাদ্দ করা হবে। যার মধ্যে প্রকল্প থেকে মিলবে ৭ হাজার ৯০০ টাকা, পুরসভা দেবে দু’হাজার ও গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া হবে এক হাজার টাকা।
বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলেন, “শৌচালয় তৈরির জন্য শীঘ্রই বোর্ড মিটিং করেই আমরা ই-টেন্ডার করব। আগামী ছ’মাসের মধ্যেই এই প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়েছি আমরা।” সোনামুখীর পুরপ্রধান সুরজিৎ মুখোপাধ্যায় জানান, পুরসভার তহবিল থেকেই সোনামুখী শহরের বহু মানুষকে ইতিমধ্যেই শৌচালয় গড়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যাঁরা সরকারি প্রকল্পে বাড়ি তৈরির সুযোগ পাচ্ছেন, পুরসভা তাঁদেরও শৌচালয় গড়ে দিচ্ছে। তাঁর দাবি, “পুরসভার সাধ্য মতো সোনামুখী শহরকে নির্মল করার লক্ষ্যে আমরা বহু আগে থেকেই কাজ শুরু করেছি। এ বার নির্মল বাংলা প্রকল্পের সাহায্যে এই কাজে আরও গতি আসবে।”
সম্প্রতি খোলা মাঠে শৌচ করতে গিয়ে বিষ্ণুপুরের ১ নম্বর ওয়ার্ডে তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় এক ছাত্রের। খবর নিয়ে জানা যায়, ওই ওয়ার্ডের খোদ কাউন্সিলরের নিজের বাড়িতেই শৌচালয় নেই। ঘটনা হল, গত মার্চেই নির্মলবাংলা প্রকল্প নিয়ে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্তাদের একটি বৈঠকে রাজ্য পঞ্চায়েত দফতরের কমিশনার দিব্যেন্দু সরকার নিদান দিয়েছিলেন, সাধারণন মানুষকে সচেতন করতে হলে সবার আগে জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতে শৌচালয় গড়তে হবে। প্রশাসনের ওই কর্তার নির্দেশের পরেও নিচুতলার জনপ্রতিনিধিরা কতটা সচেতন হয়েছেন, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে বিষ্ণুপুরের এক নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের বাড়িতে শৌচালয় না থাকায়।
দিব্যেন্দুবাবু এ দিন ফোনে বলেন, “একটা জেলাকে নির্মল করতে গেলে গ্রামাঞ্চলের সঙ্গে সঙ্গে শহরাঞ্চলকেও নির্মল করতে হবে। বাড়ি বাড়ি শৌচালয় গড়লেও খোলা মাঠে শৌচকর্ম রুখতে না পারলে এই প্রকল্প সফল হবে না।” এই দিকটিও জনপ্রতিনিধিদের সমান ভাবে দেখতে হবে বলেই অভিমত তাঁর। বাড়ি বাড়ি শৌচালয় তো হবে, তবে তিনটি পুরসভা প্রকৃতই নির্মল হবে কি না, সেটাই এখন দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy