Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Death

যুবকের মৃত্যুতে পুলিশের বিরুদ্ধে নালিশ

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের রক্ষাকালীতলার বাসিন্দা তন্ময় দাস (২৭) নামে এক যুবকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় বাড়ি থেকে।

Death of youth

মৃত তন্ময় দাসের (ইনসেটে) শোকার্ত পরিজন। রবিবার। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:১১
Share: Save:

এক যুবকের অস্বাভাবিক মৃত্যুকে ঘিরে রবিবার সকালে উত্তপ্ত হয়ে উঠল সিউড়ি শহরের রক্ষাকালীতলা। ওই যুবকের মৃত্যুর জন্য পুলিশকে ‘দায়ী’ করে পথ অবরোধ করলেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। অবরোধ তুলকে দিয়ে জনতা-পুলিশ সংঘাত বাধল। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠল। পাল্টা পুলিশ লাঠি চালিয়েছে বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও এলাকায় বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। পাঁচ জনকে আটক করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের রক্ষাকালীতলার বাসিন্দা তন্ময় দাস (২৭) নামে এক যুবকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় বাড়ি থেকে। তাঁর বিরুদ্ধে ২০২০ সালে অবৈধ অনলাইন লটারি চালানোর একটি মামলা রয়েছে। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ছিল। গ্রেফতারি এড়াতে সিউড়ি জেলা জজের কাছে জামিনের আর্জি জানিয়েছিলেন তন্ময়। কিন্তু, আর্জি নামঞ্জুর হয়। দিন দশ-বারো আগে তাঁর আগাম জামিন নামঞ্জুর করে কলকাতা হাই কোর্টও। পুলিশের দাবি, জানা গিয়েছে, গ্রেফতারি এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন তিনি। অন্য দিকে, পরিবার ও প্রতিবেশীদের একাংশের বক্তব্য, তন্ময় প্রবল মানসিক চাপে ছিলেন। শনিবার মাঝরাতে বাড়ি ফিরেছিলেন। সে রাতেই কোনও এক সময় তিনি আত্নঘাতী হন বলে প্রাথমিক ধারণা পুলিশের।

মৃতের বাবা প্রদীপ দাসের দাবি, ‘‘ছেলে নির্দোষ। সে মুরগির মাংসের ব্যবসা করত। অভিযোগের এফআইআরে ছেলের নাম ছিল না। বাড়ি থেকে কোনও কিছু মেলেনি।’’ তাঁর অভিযোগ, পুলিশ তন্ময়ের নাম মামলায় যুক্ত করায় তিনি জামিন পাচ্ছিলেন না। হাই কোর্ট থেকে জামিন না-মেলায় আরও ভেঙে পড়েন। শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করলেন। স্থানীয়েরা জানান, এলাকায় পরোপকারী হিসাবে পরিচিত ছিলেন তন্ময়। তাঁদের অভিযোগ, ওই মামলা নিয়ে পুলিশ তাঁকে বারবার ভয় দেখিয়েছে। টাকাও চাওয়া হয়েছে মামলা থেকে বের করার জন্য। তদন্ত না-করেই নাম মামলায় জুড়ে দেওয়ায় মানসিক চাপ সহ্য করতে পারেননি শিক্ষিত (ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার) যুবক তন্ময়। তাই তিনি চরম পথ বেছে নিয়েছেন। পুলিশ অবশ্য সে অভিযোগ মানেনি।

স্থানীয় সূত্রের খবর, পুলিশের বিরুদ্ধে সেই ‘ক্ষোভ’ থেকেই এ দিন তন্ময়ের দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানোর আগে সিউড়ি-সাঁইথিয়া বাইপাস অবরোধ করে উত্তেজিত জনতা। অবরোধ তুলতে ডেপুটি পুলিশ সুপার (ডি অ্যান্ড টি ) অয়ন সাধু এবং সিউড়ি থানার আই সি শেখ মহম্মদ আলির নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে এলে দু’পক্ষের মধ্যে কথাকাটাকাটি শুরু হয়। ভাঙচুর হয় পুলিশের গাড়ি।

পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি শুরু হয় বলেও অভিযোগ। এর পরেই জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠি চালায় বলে অভিযোগ। স্থানীয়দের দাবি, বিনা প্ররোচনায় লাঠি চালানো হয়েছে। মার খেয়েছেন বয়স্ক থেকে মহিলা। বেশ কয়েক জনকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ।

বীরভূমের পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘যে মামলায় হাই কোর্ট জামিন নামঞ্জুর করে, সেই মামলা নিয়ে কিছু বলার নেই।’’ লাঠি চালানো প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা অবরোধ তুলতে গেলে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে যেটুকু শক্তিপ্রয়োগ প্রয়োজন, সেটাই করা হয়েছে।’’

পুলিশের আরও দাবি, ২০২০ সালে বৈধ লটারি সংস্থার তরফে বেআইনি ভাবে সিউড়তে অনলাইন লটারি চালানোর অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। তদন্ত বেশ কয়েক জনের নাম উঠে আসে। সেই তালিকায় ছিলেন তন্ময়ও। মানসিক চাপ দেওয়ার অভিযোগ ও টাকা চাওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। গত এক মাস তন্ময়ের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়নি বলেও পুলিশ জানিয়েছে। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘জামিন নামঞ্জুর হওয়ার পিছনেও আমাদের কোনও হাত নেই। সেটা আদালতের সিদ্ধান্ত।’’

তন্ময়ের বাবা প্রদীপ দাস, মা কল্পনা দাস কিংবা সদ্য স্বামীহারা রিমা সে কথা মানতে রাজি নন। তাঁদের বক্তব্য, পুলিশের জন্যই তন্ময়কে মরতে হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Death Suri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy