দুর্ভোগের ছবি। —নিজস্ব চিত্র
মেঘ ডাকলেই আতঙ্কে থাকতেন তাঁরা। এই বুঝি বৃষ্টির জমা হাঁটুজলে ডিউটি শুরু করতে হয়!
এমনই করুণ অবস্থা ছিল ঝাঁ চকচকে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল আর সংস্কার হওয়া সদর হাসপাতালের মূল ভবনের মাঝে থাকা রামপুরহাট জেলা হাসপাতালের সংক্রামক বিভাগের। যেখানে প্রায় প্রতি বর্ষাতেই ওয়ার্ডে বৃষ্টির জল ঢুকে নাজেহাল অবস্থা হতো রোগী থেকে স্বাস্থ্যকর্মীর। এ বছর বর্ষাতেও একই দুর্ভোগে পড়ার পরে প্রায় ২৩ লক্ষ টাকা খরচ করে সংস্কার করা হয় গোটা বিভাগ। তার পরেও সঙ্কট কাটেনি রামপুরহাট হাসপাতালের সংক্রামক বিভাগের। কারণ, প্রয়োজনের তুলনায় কম শয্যা থাকায় এই প্রচণ্ড শীতেও ঠান্ডা টাইলসের মেঝেতে পড়ে থাকতে হচ্ছে রোগীদের। তাঁদের সামলাতে গিয়ে গভীর অসুবিধায় পড়ছেন ওয়ার্ডে কর্তব্যরত নার্সেরাও।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, পুরনো ভবনের নীচের তলায় রয়েছে এই সংক্রামক বিভাগ। ৪০ শয্যা (মহিলা ২০, পুরুষ ২০) বিশিষ্ট সংক্রামক বিভাগ। বছর দুয়েক আগেও এই ভবনের ছাদ চুঁইয়ে রোগীর গায়ে জল পড়ত। হাসপাতালে এসএনসিইউ ইউনিট চালু হওয়ার আগে ওই ছাদের সংস্কার করা হয়। কিন্তু, অতিরিক্ত বৃষ্টি হলেই সংক্রামক বিভাগে জল ঢুকে যেত বলে অভিযোগ ছিল। জেলার অন্যতম এই গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালের বেহাল নিকাশি ব্যবস্থার এই ছবি রোগী এভং পরিজনদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি করেছিল। তার পরেই ওই সংস্কার করা হয়। তবে, ওই বিভাগে এখনও প্রায় বর্তমানে ৫ লক্ষ টাকার বিদ্যুতের কাজ বাকি আছে। কর্তব্যরত নার্সেরা বলছেন, ‘‘গত সাত দিন থেকে রোগীর চাপ বেড়ে গিয়েছে। বর্তমান পরিকাঠামোয় রোগীদের শয্যা দেওয়া যাচ্ছে না। শীতকালে মেঝেয় পড়ে সংক্রামক রোগীরা কষ্টা পাচ্ছেন।’’ রোগীর এই হাল দেখে ক্ষোভ ছড়াচ্ছে পরিজনদের মধ্যেও।
অভিযোগ পেয়ে সম্প্রতি (গত সোমবার দুপুরে) হাসপাতাল সুপার সুবোধকুমার মণ্ডল ওই বিভাগ পরিদর্শনও করেছেন। তিনিও মেঝেতে রোগী পড়ে থাকতে দেখে অবাক হন বলে খবর। কর্তব্যরত নার্সেরা সুপারের কাছে সংক্রামক বিভাগে আরও কয়েকটি শয্যা বাড়িয়ে দেওয়ার দাবিও করেন। সুবোধবাবু বলছেন, ‘‘নার্সেরা ইনডেন করলে অবশ্যই বাড়িয়ে দেব।’’ ওই দিনই পেটের রোগের উপসর্গ নিয়ে বিভাগে ১৫ বছরের মেয়ে শ্রীমতিকে নিয়ে এসেছিলেন রামপুরহাটের ভবনীপুরের মাহেশ্বরী মুর্মু। ভর্তি নিলেও শয্যার অভাবে তাঁকে মহিলা বিভাগের এক কোণায় একটি পাতলা চাদর পেতে মেয়ের পাশে বসে থাকতে দেখা গেল। আবার দেড় বছরের শিশুকে কোলে নিয়ে মেঝেয় কাপড় বিছিয়ে বসে আছেন মুরারইয়ের বিশোড় গ্রামের হুমেইরা বিবি। এক বছরের শিশুকে নিয়ে একই অবস্থা নলহাটির নতুনগ্রামের তপতী মণ্ডলেরও।
প্রত্যেকই বলছেন, ‘‘এ রকম ভাবে মেঝেয় পড়ে থাকতে হবে, বুঝতে পারিনি। জানলে ঠান্ডার জন্য সে রকম প্রস্তুতি নিয়ে আসতাম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy