Advertisement
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
Raghunathpur

প্রশ্ন রেখেই শুরু নয়া পাঠ্যক্রমের প্রস্তুতি

এই শিক্ষানীতির পক্ষে যাঁরা তাঁদের দাবি, এতে এক বছর পরে পড়া ছাড়লেও যেহেতু শংসাপত্র মিলবে, তা দিয়ে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের সুযোগ পাওয়া যাবে।

চার বছরের স্নাতক: আশা, আশঙ্কাও।

চার বছরের স্নাতক: আশা, আশঙ্কাও। — নিজস্ব চিত্র।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল, রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
রঘুনাথপুর, বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৩ ০৯:০৭
Share: Save:

‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০’ মেনে আসন্ন শিক্ষাবর্ষ থেকে চার বছরের স্নাতক ডিগ্রি কোর্স চালু করতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশিকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পাঠিয়েছে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর। জানানো হয়েছে, এক বা দু’বছর পড়ে কলেজ ছেড়ে দিলেও তা বিফলে যাবে না। এক থেকে চার— প্রতি বছরের শেষে যথাক্রমে সার্টিফিকেট, ডিপ্লোমা, ডিগ্রি, অনার্স শংসাপত্র পাওয়া যাবে। স্নাতকস্তরে কলেজেই মিলবে গবেষণার সুযোগও।

কিন্তু শিক্ষা শিবিরের বৃহৎ অংশের প্রশ্ন, তিন বছরের বর্তমান স্নাতক পাঠ্যক্রমকে চার বছরের পাঠে পরিণত করতে যত শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং যে পরিকাঠামো লাগবে, সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে হুট করে কি তার আয়োজন সম্ভব? আবার জাতীয় শিক্ষানীতির পক্ষেও সওয়াল করছেন অনেকে। গড়াচ্ছে বিতর্কের জল।

এই শিক্ষানীতির পক্ষে যাঁরা তাঁদের দাবি, এতে এক বছর পরে পড়া ছাড়লেও যেহেতু শংসাপত্র মিলবে, তা দিয়ে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের সুযোগ পাওয়া যাবে। তাঁদের আর সরাসরি ‘ড্রপ আউট’ বলা যাবে না। তা ছাড়া, শিক্ষকেরাও কলেজেই মেধাবী পড়ুয়াদের গবেষণা করানোর সুযোগ পাবেন। আর প্রথাগত পড়াশোনাই শুধু নয়, নানা স্কিল ডেভেলপমেন্ট ও ভ্যালু অ্যাডেড পাঠ্যক্রম পড়ানো হবে বলেও সূত্রের খবর।

তবে প্রশ্নও রয়েছে অনেক। দক্ষিণ বাঁকুড়ার খাতড়া আদিবাসী মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ নিত্যানন্দ পাত্রের কথায়, ‘‘কলেজে শিক্ষাকর্মীর অভাব চূড়ান্ত। শিক্ষকও পর্যাপ্ত নেই। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অতিথি শিক্ষক আনিয়ে সাম্মানিক দিয়ে ক্লাস করাতে হচ্ছে। পরিকাঠামোর উন্নতি না হলে জাতীয় শিক্ষানীতি কার্যকর করতে গিয়ে সমস্যা আরও বাড়বে।” বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজের অধ্যক্ষ ফটিকবরণ মণ্ডলও বলেন, “কলেজে শ্রেণিকক্ষ, পরীক্ষাগার বাড়ানো-সহ পরিকাঠামোগত সমস্যা আগে মেটানো দরকার।” তবে কয়েকটি কলেজের অধ্যক্ষের দাবি , ‘‘তিন বছর পরে যখন প্রয়োজন পড়বে, তখন শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের খরচের সংস্থান হয়ে যাবে। বিধায়ক বা সংসদেরাও এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে আর্থিক সাহায্য করতে পারেন।’’

চার বছরের পাঠ্যক্রম পড়ার খরচ বাড়ার আশঙ্কায় জাতীয় শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে সরব হয়েছে এসএফআই এবং ডিএসও। এসএফআই-এর বাঁকুড়া জেলা সভাপতি জয়গোপাল কর, পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক সুব্রত মাহাতো, ডিএসও-র পুরুলিয়ার সম্পাদক বিকাশ কুমারের দাবি, ‘‘সিবিসিএস শুরু হওয়ার পরেই প্রতি সিমেস্টারে পড়ার খরচ অনেকটা বেড়েছে। পাঠ্যক্রম চার বছরের হলে খরচ আরও বাড়বে। যদি এক বছর গবেষণা করতে হয়, তাহলে খরচ জোগাড়ে হিমশিম খাবে বহু পড়ুয়া।’’ তাঁদের আশঙ্কা, এতে শিক্ষার গেরুয়াকরণ, বাণিজ্যিকীকরণ করবে কেন্দ্র। তা ছাড়া, অসম্পূর্ণ পড়াশোনাতেই শংসাপত্র মেলার সুযোগ থাকায় অনেকেই পাঠ্যক্রম শেষ করবে কিনা, সেই আশঙ্কাও থাকছে। এতে প্রশ্ন থাকছে শিক্ষার মান নিয়েও।

ডিএসও-র বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অভ্রনীল মণ্ডলের দাবি, রাজ্য সরকার তড়িঘড়ি ও অগণতান্ত্রিক ভাবে কেন্দ্রের নীতি এ রাজ্যে কার্যকরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল! তবে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপির বাঁকুড়া জেলা সভাপতি তীর্থঙ্কর কুণ্ডু যদিও বলছেন, ‘‘জোর করে এই শিক্ষানীতি চাপিয়ে দিচ্ছে কেন্দ্র। আমরা মানছি না।”

ধোঁয়াশায় পড়ুয়াদের একাংশও। এ বছরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সোনামুখীর সাজ্জাদ আলি মিদ্যা, ইন্দাসের অর্পণ ঘোষেরা বলেন, “নতুন শিক্ষানীতির ভাল, মন্দ কিছুই বুঝছি না। এ নিয়ে সুষ্ঠু ধারণা তৈরি করা দরকার।’’

তবে প্রস্তুতি শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। পুরুলিয়ার সিধো কানহো বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দীপককুমার করের উপস্থিতিতে মঙ্গলবার বৈঠক হয়েছে। সূত্রের খবর, চার বছরের স্নাতক পাঠ্যক্রম শুরুর জন্য পরীক্ষা নিয়ামক সুবলচন্দ্র দে-কে মাথায় রেখে বিশেষ কমিটি হয়েছে। বুধবার বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয় জেলার সব ক’টি কলেজের অধ্যক্ষ ও কলেজের প্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনায় বসে। বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দেবনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, নয়া শিক্ষানীতির প্রতিটি ধাপ নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। কলেজের পরিকাঠামোর সঙ্গে নয়া শিক্ষানীতির কী ভাবে খাপ খাওয়ানো যায়, তা নিয়েও কথা হয়েছে।

উপাচার্য জানান, “বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে একটি কোর কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি প্রাথমিক ভাবে পাঠ্যক্রম তৈরির পদ্ধতি ও নিয়মনীতি নির্ণয় করবে। প্রতিটি কলেজের শিক্ষকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কলেজগুলি নিজ দায়িত্বে পড়ুয়াদেরও নয়া পাঠ্যক্রমের ধারণা দেবে।” তাঁর মতে, নয়া পাঠ্যক্রমের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো কঠিন নয়। পড়ুয়াদের জন্যও সুবিধা থাকছে। তাঁর দাবি, “বৈঠকে এ নিয়ে সব কলেজের অধ্যক্ষেরাই একমত হয়েছেন।”

a

অন্য বিষয়গুলি:

Raghunathpur bankura UGC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy