Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Bike Accident

নাবালকের হাতে বাইক, আহত দুই

এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) প্রিয়ব্রত বক্সী জানান, আজ, রবিবার থেকেই তাঁরা মোটরবাইক নিয়ে নিয়মভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামবেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে নাবালক ও নাবালিকা চালকদের সতর্ক করা হবে। পরবর্তীতে মোটরবাইক আটকে অভিভাবকদের ডেকে পাঠানো হবে।’’

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা 
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:৩৫
Share: Save:

অসুস্থ দেড় বছরের শিশুকে ডাক্তার দেখাতে এনেছিলেন বাবা-মা। শিশুটি কাঁদছিল বলে চেম্বারের বাইরে একটি ফাঁকা টোটোয় তাকে বসিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন মা। হঠাৎ বছর পনেরোর এক কিশোর মোটরবাইক নিয়ে এসে সজোরে সেই টোটোয় ধাক্কা মারে বলে অভিযোগ। টোটো থেকে ছিটকে গিয়ে শিশুর মাথায় চোট লাগে। পড়ে গিয়ে মাথা ও দুই পায়ে চোট পান তার মা। বাইকচালকেরও মাথায় অল্প চোট লাগে। শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর কলেজ রোডের বৈলাপাড়া এলাকার এই দুর্ঘটনায় অপ্রাপ্তবয়স্কদের বাইক চালানোর ঘটনা সামনে এসে পড়েছে। সেই সঙ্গে কম বয়েসি ছেলেমেয়েদের বাইক চালানো আটকাতে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।

এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) প্রিয়ব্রত বক্সী জানান, আজ, রবিবার থেকেই তাঁরা মোটরবাইক নিয়ে নিয়মভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামবেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে নাবালক ও নাবালিকা চালকদের সতর্ক করা হবে। পরবর্তীতে মোটরবাইক আটকে অভিভাবকদের ডেকে পাঠানো হবে।’’

খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে আহতদের উদ্ধার করে বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা থানার ফুলবেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা সখিনা খান ও তাঁর শিশুকে সেখানে ভর্তি করা হয়েছে। নাবালক মোটরবাইক চালক প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছে।

হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে সখিনার স্বামী স্বামী সৈফুদ্দিন খান বলেন, ‘‘বেপরোয়া বাইক চালকের জন্যই এত বড় কাণ্ড ঘটে গেল! নাবালক ছেলে বাইক চালিয়ে যে দোষ করছে, তার সমান ভাগিদার বাবা-মায়েরাও। বাবা-মা শাসন করলে, নাবালক ছেলে মোটরবাইক নিয়ে পথে নামার সাহস পেত না।’’

বিষ্ণুপুর থানা জানিয়েছে, মোটরবাইকটি আটক করা হয়েছে। অভিযোগ হয়নি বলে ছেলেটির বাবাকে থানায় ডেকে সতর্ক করা হয়েছে। ওই কিশোরের বাবা পেশায় সরকারি কর্মী। তিনি দাবি করেন, ‘‘আমার অনুপস্থিতিতে মোটরবাইক নিয়ে টিউশুনে গিয়েছিল ছেলে। দুর্ঘটনার খবর পেয়েই ছুটে এসেছি।” ছেলেটির মাথায় হেলমেট ছিল না কেন? ওই সরকারি কর্মী বলেন, ‘‘মাঝেমধ্যে ছেলে মোটরবাইক নিয়ে বার হয় জানি। নিষেধও করেছি। তবে এ বার ঠিক করেছি, প্রাপ্তবয়স্ক না হলে ওকে মোটরবাইকে হাত দিতে দেব না। হেলমেট ছাড়া তো নয়ই।”

কয়েকবছর আগে বিষ্ণুপুরের দুই নাবালকের মোটরবাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পরে বেপরোয়া বাইক ছোটানোর প্রবণতা কিছুটা কমেছিল। বাসিন্দাদের অভিযোগ, তবে পুলিশ প্রশাসনের ‘ঢিলেঢালা’ মনোভাবে শহরে ফের অপ্রাপ্তবয়স্কদের বাইক চালানো যেমন বেড়েছে, তেমনই রেষারেষিও বেড়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা কল্যাণ মিত্র, বাসব চট্টোপাধ্যায়, প্রদীপ দত্তের মতে, ‘‘কলেজ রোডের ঠাসা ভিড়ে বাইক নিয়ে তো প্রতিযোগিতা চলে। পথচারীরা শিউরে উঠে রাস্তা ছেড়ে দেন।’’

স্কুল কর্তৃপক্ষও পুলিশের সক্রিয়তা দাবি করছেন। বিষ্ণুপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক জীবনানন্দ মুখোপাধ্যায় বলেন, “ট্র্যাফিক আইন নিয়ে সচেতনতা রাস্তার থেকে স্কুলে বেশি করা প্রয়োজন। দ্রুতবেগে যে সব কমবয়সি ছেলেমেয়ে বাইক চালাচ্ছে, তাদের আটক করুক পুলিশ। খবর দেওয়া হোক বাড়ির সঙ্গে স্কুলকেও। প্রার্থনার সময়ে নিয়মভঙ্গকারীর কথা সকলকে জানাব। তাতে তাদের লজ্জাবোধ বাড়বে। বাইক চালানোর প্রবণতা বন্ধ হবে।’’

কৃত্তিবাস মুখার্জী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ পাত্র মনে করেন, ‘‘বয়ঃসন্ধির সময়ে বিচারবুদ্ধির থেকে অনেকে আবেগের বশে চলে। তাদের হাতে বাইক পড়াটা তাই বিপজ্জনক। মাঝেমধ্যেই রাস্তাঘাটে নাবালকদের মোটরবাইকের ধাক্কায় বয়স্কেরা আহত হচ্ছেন। একের ভুলে অন্যের সাজা কেন হবে? বাবা-মায়েরও সচেতন হওয়া খুবই জরুরি।’’ এসডিপিও বলেন, ‘‘সমস্ত পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলে স্কুলে স্কুলে আমরা ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’-এর উপরে সচেতনতা শিবির করব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Bike Accident Accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy