নবদম্পতি। বিয়ের পরে দুই আত্মসমর্পণকারী মাওবাদী। ছবি: সুজিত মাহাতো।
বরের পরনে গরদের পাঞ্জাবি-ধুতি, মাথায় পাগড়ি। পাশে হলুদ বেনারসি ও সোনালি চেলিতে সাজানো কনে। নবদম্পতিকে আশীর্বাদ করতে হাজির জেলা সভাধিপতি, জেলাশাসক, পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে, জেলার তাবড় ব্যক্তিত্বরা। প্রভাবশালী বা বিশিষ্ট কারও অনুষ্ঠান নয়, প্রশাসনিক কর্তারা এসেছিলেন দুই আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীর বিয়েতে।
বৃহস্পতিবার রাতে পুরুলিয়ার পুলিশ লাইনে বিয়ে করলেন মাওবাদীদের অযোধ্যা স্কোয়াডের দুই প্রাক্তন সদস্য --হেমন্ত হেমব্রম ও চম্পা হেমব্রম। বরকর্তাও এক প্রাক্তন মাওবাদী ঘেনারাম কুমার। বিয়ের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন আত্মসমর্পণ করা আরও অনেক মাওবাদীই। তাঁদের সঙ্গেই ধামসা-মাদল বাজিয়ে নাচলেন পুলিশ কর্মীরা।
মেনুতে লুচি, চানা মশলা, রুই মাছের কালিয়া, পাঁঠার মাংস, রসগোল্লা, আইসক্রিম কিছুই বাদ পড়ল না। নবদম্পতি যৌতুক পেলেন খাট-বিছানা, আলমারি, ব্যাগ। সব আয়োজনই করল জেলা পুলিশ। এমনকী, নবদম্পতির জন্য পুলিশ লাইনে ট্রানজিট ক্যাম্পে একটি কোয়ার্টারও বরাদ্দ করেন জেলার পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার।
অযোধ্যা পাহাড়তলির প্রত্যন্ত গ্রাম তানাসির যুবক হেমন্ত স্কুলের পাঠ নেননি। তবে আগ্নেয়াস্ত্র চালাতে তুখোড় বলেই পুলিশের দাবি। তৃণমূল কর্মী খুন করা থেকে যৌথবাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে জড়ানোর মতো বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। বলরামপুরের ঘাটবেড়া-কেরোয়া এলাকার মাহিলিটাঁড় গ্রামের চম্পার বিরুদ্ধে অবশ্য বড় কোনও নাশকতায় যুক্ত থাকার অভিযোগ নেই। ২০১২-র জুলাইয়ে চম্পা আত্মসমর্পণ করেন। হেমন্ত ও ঘেনারাম চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ধরা দেন।
ঘেনারাম বলেন, “অযোধ্যা স্কোয়াডে হেমন্ত ও চম্পার মধ্যে সামান্য পরিচয়ের বেশি কিছু ছিল না। এই ট্রানজিট ক্যাম্পে এসেই ওদের মধ্যে কথাবার্তা ও ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। বলতে পারেন আমি একের মনের কথা অন্যের কাছে বয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজটা করেছি।” ঘেনারামই পুলিশ সুপারের কাছে দুই প্রাক্তন সহকর্মীর বিয়ের প্রস্তাব দেন। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, ট্রানজিট ক্যাম্পে মাওবাদীদের বিয়ে দেওয়ার নজির নেই। তাই তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অনুমতি চান। বুধবার সে সম্মতি আসতেই তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। খবর দেওয়া হয় দুই পরিবারকে। হেমন্তর বাবা বুধি হেমব্রম বলেন, “জঙ্গলে থাকলে এত দিনে ওদের কী হত কে জানে। আজ ওরা ঘর বাঁধল দেখে শান্তি পেলাম।” চম্পার পরিবারের কাউকে অবশ্য অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি।
হেমন্ত বলেন, “চম্পা হোমগার্ডের কাজ পেয়েছে। আমিও কিছু একটা কাজ পেলে ভাল হয়। আর ও পথে যাব না।” পাশে থাকা নববধূ চম্পা লাজুক হেসে ঘাড় কাত করে স্বামীর কথাতেই যেন সম্মতি দিলেন। জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী তাঁদের আশীর্বাদ করেন। জেলা সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো বলেন, “সমাজের মূলস্রোতে ফেরাতে ওঁদের পাশে প্রশাসন রয়েছে।”
অনুষ্ঠানের আনন্দে পুলিশকর্মীদের সঙ্গে মেতেছিলেন ট্রানজিট ক্যাম্পের আবাসিক প্রাক্তন মাওবাদী করণ কৈবর্ত্য, ভজহরি মাহাতো, দুর্যোধন রাজোয়াড়, আকরি সহিসরাও। তাঁরা বললেন, “জঙ্গল-জীবনে একটা বিশ্বাস নিয়ে পথ চলতাম, তখন বুঝিনি অন্য পথে হাঁটলেও আনন্দ কম হয় না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy