সেয়ানে-সেয়ানে। নিজস্ব চিত্র।
পুরুলিয়া শহরের হরিপদ সাহিত্য মন্দিরের প্রেক্ষাগৃহে চলছিল জেলা তৃণমূলের সাধারণ সভা। বাইরের রোদে গুলতানি করছিলেন কিছু কর্মী ও নেতাদের গাড়ি চালকেরা। হঠাৎ বাধল তুলকালাম। পড়িমরি করে কর্মী, গাড়ি চালকেরা প্রেক্ষাগৃহ চত্বরে ঢুকে পড়লেন। কেউ কেউ মেন গেট আটকানোর চেষ্টাও করেন। কিন্তু লাভ হল না। দু’টি দশাসই ষাঁড় গুঁতোগুঁতি করতে করতে বীরবিক্রমে দরজা ঠেলে ঢুকে পড়ল প্রেক্ষাগৃহ চত্বরে। তাদের বাগে আনতে বৃহস্পতিবার বারবেলায় ত্রাহি ত্রাহি রব পড়ে গেল তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে।
আসন্ন বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি উপলক্ষে এ দিন তৃণমূলের ওই বৈঠক ডাকা হয়েছিল। সারা জেলা থেকে নেতারা এসেছিলেন। প্রেক্ষাগৃহ চত্বরে জেলার দুই মন্ত্রী ও সভাধিপতির তিনটি লালবাতি গাড়ি ও নেতা-কর্মীদের মোটবাইক রাখা ছিল। বিকেল ৩টের কিছুটা আগে হঠাৎ প্রেক্ষাগৃহের ঠিক বাইরে শোরগোল পড়ে যায়। দেখা যায়, তেমাথা রাস্তায় দু’টি ষাঁড়ের মধ্যে তুমুল লড়াই বেঁধেছে। পুরুলিয়া শহরের পথে এ দৃশ্য বিরল নয়। দূর থেকে অনেকেই তা দেখছিলেন। কিন্তু প্রেক্ষাগৃহের দরজার দিকে লড়াকু ষাঁড়েরা এগিয়ে আসতেই বিপত্তি।
দরজার বাইরে থাকা কর্মীরা ঝড়ের বেগে ভিতরে ঢুকে পড়েন। দরজা আঁটার চেষ্টা করেন কেউ কেউ। কিন্তু ঠেকাতে পারলে তো! শিঙে শিঙে ঠোকাঠুকি করতে করতে দু’টি ষাঁড় ঢুকে পড়ে চত্বরে। ভিড় ততক্ষণে অন্য প্রান্তে সরে গিয়েছে। লালবাতির দু’টি গাড়ির ফাঁকে ষাঁড়েদের লড়তে দেখে ক্ষতির আশঙ্কায় এক তৃণমূল কর্মী হাতের কাছে প্লাস্টিকের পাইপ নিয়ে বাড়ি মারার চেষ্টা করেন। কিন্তু শিঙে লাগতেই পাইপ ভেঙে গুঁড়িয়ে যায়।
হুড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রসেনজিৎ মাহাতো লম্বা একটা বাঁশ নিয়ে দুই ষাঁড়ের শিংয়ের ফাঁকে গুঁজে দেওয়ার চেষ্টা করলেন। আতঙ্কিত ভিড় থেকে কেউ কেউ নিদান দিলেন— ‘‘ষাঁড়গুলোর চোখে ঠান্ডা জল ছিটিয়ে দিন কেউ।’’ কেউ কেউ বোতল, মগ থেকে জল ছোড়েন। সুযোগ বুঝে কোনও রকমে ভিআইপি গাড়ির চালকেরা পড়িমরি করে গাড়ি নিয়ে সেখান থেকে সরে পড়েন।
চত্বর কিছুটা ফাঁকা হতে লড়াই আরও জমে যায়। তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের নেতা বিমলকান্ত মাহাতো-সহ কয়েক জন লাঠিসোঁটা জোগাড় করে ষাঁড় দু’টিকে পেটাতে শুরু করেন। তাতে আস্তে আস্তে লড়াকু দুই ষাঁড় দরজার দিকে এগিয়ে যায়। লড়াই ফিরে যায় রাস্তায়। প্রায় মিনিট পনেরোর ‘ঝড়’-এর পরে, হাঁফ ছাড়েন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। কিন্তু ততক্ষণে ষাঁড়েদের ধাক্কায় মাটিতে পড়ে ভেঙেচুরে গিয়েছিল বেশ কয়েকটি মোটরবাইক। যা দেখে কপাল চাপড়াতে শুরু করেন ক্ষতিগ্রস্ত তৃণমূল কর্মীরা।
বাইরে থেকে প্রেক্ষাগৃহে ঢুকতে ঢুকতে পুরুলিয়ার পুরপ্রশাসক মৃগাঙ্ক মাহাতো বলেন, ‘‘একটু বেরিয়েছিলাম। কিন্তু ষাঁড়েদের লড়াইয়ে আটকে পড়েছিলাম। শহরের রাস্তায় বেওয়ারিশ ষাঁড়েরা অনেক সময় লড়াই বাধায়। দেখি, ওদের নিয়ে কী করা যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy