Advertisement
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Raghunathpur

নির্জন ঘরে দুই ঝলসানো দেহ

পুলিশের ধারণা, দেহ দু’টি সীতাডাঙা এলাকার ওই বাড়ির বাসিন্দা দুই অবিবাহিত বোন, লক্ষ্মী মাঝি (৬২) ও তাঁর বোন আরতি মাঝির (৩৭)।

সেই ঘর। ছবি: সঙ্গীত নাগ

সেই ঘর। ছবি: সঙ্গীত নাগ

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল 
শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২০ ০৪:৪৭
Share: Save:

জঙ্গলে ঘেরা নির্জন এলাকায় কাঁচা-পাকা একটি বাড়ি। সেখান থেকেই শনিবার রাতে পুরুলিয়া জেলার রঘুনাথপুর থানার পুলিশ ঝলসে যাওয়া দু’টি দেহ উদ্ধার করেছে। পুলিশের ধারণা, দেহ দু’টি সীতাডাঙা এলাকার ওই বাড়ির বাসিন্দা দুই অবিবাহিত বোন, লক্ষ্মী মাঝি (৬২) ও তাঁর বোন আরতি মাঝির (৩৭)।

যদিও মৃতাদের ভাই শশাঙ্ক মাঝির বক্তব্য, ‘‘দেহগুলি পুরোপুরি ঝলসে গিয়েছে। কোনও ভাবেই বোঝা যাচ্ছে না, সেগুলি দিদি ও বোনের কি না।’’ আগুন লাগার কারণ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। পুলিশ দেহ দু’টি ময়না-তদন্তের জন্য পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে। আজ, সোমবার শনাক্তকরণের পরেই দেহ দু’টি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগান।

পুলিশ সূত্রে খবর, লছমনপুর ও মহারাজনগর গ্রামের মাঝে থাকা সীতাডাঙা এলাকায় ওই বাড়িতে আগুন লাগার খবর পাওয়া গিয়েছিল শনিবার রাত ন’টা নাগাদ।

যদিও মৃতাদের পরিবারের দাবি, সম্ভবত আগুন লাগে শুক্রবার রাতের দিকে। পেশায় রেলকর্মী বর্ধমানের বাসিন্দা শশাঙ্কবাবু জানান, শুক্রবার রাতে দিদি ও বোনের মোবাইলে বার পঁচিশ ফোন করার পরেও কেউ ফোন ধরেননি। শনিবার সকালেও ফোন করার পরে ফোন বন্ধ থাকায় দুপুরের দিকে এক বন্ধুকে পাঠিয়েছিলেন বাড়িতে। তার পরেই বাড়িতে আগুন লাগার খবর জানতে পারেন তিনি। রাতের দিকে আর এক বন্ধু মারফত ঘটনাটি রঘুনাথপুর থানায় জানান তিনি।

শশাঙ্কবাবু জানান, বাড়িটি তৈরি করেছিলেন তাঁর বাবা। মা মঙ্গলীদেবীর সঙ্গে বাড়িতে থাকতেন লক্ষ্মী ও আরতিদেবী। গত ১৭ জানুয়ারি মৃত্যু হয় মঙ্গলীদেবীর। তার পরে থেকে দুই বোনই বাড়িতে থাকতেন। লক্ষ্মীদেবী চোরপাহাড়ি পঞ্চায়েতের লোহাট গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী ছিলেন।

ঘটনা নিয়ে সন্দেহ কেন? শশাঙ্কবাবু জানান, শুক্রবার বিকেলে দিদি কাজ থেকে ফেরার পরে তাঁর সঙ্গে এক বার কথা হয়েছিল। পরে রাত সাড়ে আটটা নাগাদ তাঁকে আবার ফোন করলেও কেউ ফোন ধরেনি। শশাঙ্কবাবুর কথায়, ‘‘প্রতি দিন রাতে এক বার করে দিদি ও বোনের সঙ্গে কথা হত। শুক্রবার রাতে দিদি ফোন না ধরায় বোনকে ফোন করি। সেও ফোন ধরেনি। তার পরে অন্তত পঁচিশ বার ফোন করেছি দু’জনের মোবাইলে। বারবার ফোন বেজে গেলেও কেউ ধরেনি।” তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ঘরের প্রায় সব কিছুই পুড়ে গিয়েছে। মোবাইলগুলিও আগুনে নষ্ট হয়েছে। তা হলে ফোনে রিং হল কী করে?”

একই সঙ্গে দু’জন সুস্থ মহিলার আগুনে পুড়ে মৃত্যু হল, অথচ তাঁরা কেউ বাইরে বেরনোর চেষ্টা করলেন না কেন, সেই প্রশ্নও ভাবাচ্ছে শশাঙ্কবাবুকে। তিনি আরও বলেন, ‘‘শনিবার রাতের দিকে পৌঁছে দেখেছিলাম ঘরের দরজা খোলা আছে। তা হলে কেন দিদি বা বোন কেউই বাইরে বেরোতে পারল না?” তাঁর দাবি, বাড়ির পেছন দিকের একটি দরজা সচরাচর বন্ধই থাকে। সেই দরজাটি খোলা অবস্থায় ছিল।

সীতাডাঙা এলাকাটি লছমনপুর ও মহারাজনগর গ্রাম দু’টির মাঝে। দুই গ্রাম থেকেই এলাকাটির দূরত্ব কমবেশি দু’কিলোমিটার। এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, ওই অংশে ওই একটি বাড়িই রয়েছে। পুলিশের ধারণা, জঙ্গলঘেরা এলাকা হওয়ায় আগুন লাগার ঘটনা বুঝে উঠতে পারেননি গ্রামের লোকজনেরা। জেলা পুলিশের এক কর্তাও জানান, সম্ভবত শুক্রবার রাতের দিকে আগুন লেগেছিল। সে দিন রাতে তুমুল বৃষ্টিও হয়েছে। বৃষ্টির জলে আগুন কিছুটা হলেও নিভে যাওয়ায় কিছু বুঝতে পারেনি পাশের দুই গ্রামের লোকজন। লছমনপুর গ্রামের বাসিন্দা শ্যামাপদ হাঁসদাও বলেন,‘‘ওই জায়গায় লোকজনের যাতায়াত কার্যত নেই। আগুন লাগার ঘটনা আমরা কিছুই বুঝতে পারিনি।”

শনিবার রাতে দেহ দু’টি উদ্ধারের পরে বাড়িতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। রবিবার এলাকায় যান এসডিপিও (রঘুনাথপুর) দুর্বার বন্দ্যোপাধ্যায়। দুপুরের দিকে গিয়েছিলেন পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগানও।

তিনি বলেন, ‘‘অনেক সময়ই শটসার্কিট হয়ে আগুন লাগে। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছিল, তা জানতে ফরেনসিক তদন্ত হবে।” মৃতাদের পরিবারের তরফে বিষয়টি স্বাভাবিক নয়, এমন দাবি প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বলেন,‘‘কেউ কোনও

অভিযোগ করেননি।”

অন্য বিষয়গুলি:

Raghunathpur Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy