নিজস্ব চিত্র।
দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল!
আপাতত এই প্রবাদে ভরসা করেই সংগঠন ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন বীরভূমের সিপিএম নেতৃত্ব। আর তাই তৃণমূলের প্রবল দাপটে একের পর এক নেতা-কর্মীর দল ছাড়ার হিড়িকের মাঝেও সংশোধনের রাস্তা থেকে সরে আসতে নারাজ সিপিএম। গত কয়েক মাসে দলবিরোধী কাজে যুক্ত থাকার অভিযোগে শতাধিক নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করেছে তারা। আবার বিধানসভা ভোট চুকে গেলেও সূর্যকান্ত মিশ্র, মহম্মদ সেলিমের মতো মাথাদের জেলায় এনে সভা করিয়ে সংগঠন মজবুত রাখার বার্তাও সিপিএম নেতৃত্ব দিতে চাইছেন। দল বাঁচানোর এই রণকৌশলের অঙ্গ হিসেবেই আগামী সোমবার সিউড়িতে প্রকাশ্য জনসভায় যোগ দিতে এই প্রথম বীরভূমে আসছেন ত্রিপুরার বাম মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার।
ঘটনা হল, পালাবদলের পরে এক সময়ের লালদুর্গ বলে পরিচিত এই জেলায় ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়েছে বামেরা। তৃণমূলের নেতাদের কথায়, ‘‘ওরা এখন সাইনবোর্ডে পরিণত হয়েছে।’’ এমনকী, পঞ্চায়েতে জেতা দলীয় জনপ্রতিনিধিদেরও বামেরা বেশি দিন ধরে রাখতে পারেনি। এলাকার পুরনো নেতা-কর্মীরা অনেকেই এখন তৃণমূলের কাছে আশ্রয় নিয়েছেন। দীর্ঘ দিন ধরে দখলে থাকা দু’টি সংসদ কেন্দ্রই হাতছাড়া হয়েছে। রামচন্দ্র ডোমের মতো জেলার রাজনীতির দীর্ঘ দিনের খেলোয়াড় আনকোরা অনুপম হাজরার কাছে হেরে গিয়েছেন। লোকসভা ভোটের মতোই গত বিধানসভা ভোটেও দলের ভরাডুবি হয়েছে। মাত্র একটি কেন্দ্রে (নানুর) সিপিএমের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। সেই শ্যামলী প্রধানের জয়ের নেপথ্যে আবার তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বের বড় হাত রয়েছে বলে অনেকের মত।
এ দিকে, পরের পঞ্চায়েত ভোটের এক বছর আগে থাকতেই গোটা জেলাতে কার্যত বিরোধী-শূন্য করার রণকৌশল নিয়েছে শাসকদল। তারই সূত্রে পঞ্চায়েত সমিতি থেকে পঞ্চায়েত— বামেদের হাতছাড়া হয়ে তৃণমূলের দখলে এসেছে। এরই মাঝে আগামী পঞ্চায়েতে তৃণমূল ছাড়া আর কোনও দল থাকবে না বলেও হুঙ্কার ছেড়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। এমন বেগতিক পরিস্থিতিতে বিরোধী বামেরা কি আদৌ মনোনয়ন তুলতে বা জমা করতে পারবে? কলেজ ভোটের মতো ১৬-০ হয়ে ধরাশায়ী হবে না? যদিও এত সহজে শাসকদলকে ময়দান ছাড়তে নারাজ বামেরা। তারই সূত্রে যে সব অংশ দেহে ‘রোগ’ ছড়িয়ে দলকে দুর্বল করছে, তাদের ছাটাই করার কাজ শুরু হয়েছে সিপিএমের অন্দরে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদা বলছেন, ‘‘গত বিধানসভা ভোটের পর থেকে এখনও পর্যন্ত দলবিরোধী কাজে যুক্ত থাকা জেলার ১৩০ জন নেতা-কর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ওই প্রক্রিয়া এখনও চলছে।’’ এরই পাশাপাশি যুব, ছাত্র, মহিলাদের মধ্যে থেকে গত এক বছরে বহু নতুন মুখ দলে নাম লিখিয়েছেন। তাঁর দাবি, এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও বর্তমানে দলের সদস্য সংখ্যা ৭ হাজার ৪০০। জেলায় জনসংখ্যা এবং তৃণমূলের সদস্য সংখ্যার তুলনায় তা নেহাতই কম হলেও এখনও আশা দেখছেন ওই প্রবীণ বাম নেতা।
তাই এখনও যাঁরা দলের প্রতি আস্থা হারাননি, দলের যাঁরা সদ্য সদস্য হয়েছেন— তাঁদের মনোবল বাড়াতে মানিকবাবুকে প্রধান মুখ করে ওই জনসভার ডাক দিয়েছে সিপিএম। সভার প্রধান বিষয় যদিও চিটফান্ডে জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি। তবু আদতে সংগঠন চাঙা করাই বাম নেতৃত্বের প্রধান ভাবনা। তাই এখন থেকেই ওই সভার প্রচার শুরু হয়েছে জেলা জুড়ে। হোয়াটসঅ্যাপের গ্রুপে গ্রুপে দেওয়া হচ্ছে বার্তা। কিন্তু মানিকই কেন? দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রামচন্দ্র ডোম বলছেন, ‘‘উনি দেশের গুরুত্বপূর্ণ এক জন বাঙালি মুখ্যমন্ত্রী। দলের পলিটব্যুরো সদস্যও। বাম সরকার ত্রিপুরায় কেমন উন্নয়নের কাজ করছে এবং তৃণমূল সরকার এ রাজ্যে কীভাবে অরাজকতার তৈরি করেছে— সে কথাই উনি বীরভূমের মানুষের কাছে তুলে ধরবেন।’’
মানিকবাবুর এই বীরভূম আগমনকে যদিও কোনও গুরুত্ব দিতেই নারাজ তৃণমূল। জেলার তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের কটাক্ষ, ‘‘অন্য রাজ্য থেকে হায়ার করা নেতা এনে কোনও লাভ নেই। বীরভূমে বামেদের আর কোনও ভিতই নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy