Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪

সময় পার, খোলা মাঠে শৌচকর্ম

রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা ৭ ডিসেম্বর পার হয়ে গেলেও বাঁকুড়া জেলার তিনটি পুরসভা খোলা জায়গায় শৌচকর্ম বন্ধ করতে পারেনি। কোথায় সমস্যা? কী করছে পুরসভা? খোঁজ নিল আনন্দবাজারবাঁকুড়া শহরের নালায় অথবা খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করছেন অনেকেই।

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:২৮
Share: Save:

বেশির ভাগ বাড়িতেই শৌচাগার তৈরি করা হয়ে গিয়েছে। যেখানে জায়গার অভাব, সেখানে তৈরি করা হয়েছে সাধারণ শৌচাগার (কমিউনিটি ল্যাট্রিন)। তার পরেও বাঁকুড়া শহরের নালায় অথবা খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করছেন অনেকেই। এ সব বন্ধে এ বার স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও বিশেষ দল গড়ে নিয়মিত অভিযানে নামল বাঁকুড়া পুরসভা।

বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলেন, “এলাকায় বা বাড়িতে শৌচালয় থাকলেও পুরনো অভ্যাস মতো খোলা জায়গায় শৌচকর্মের অভ্যাস ছাড়তে পারছেন না অনেকে। তাঁদের সচেতন করতেই কাউন্সিলরের নেতৃত্বে বিশেষ দল ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের দিয়ে সচেতনতায় প্রচার চালানো হচ্ছে।”

খোলা জায়গায় শৌচমুক্তি নির্মূল করতে না পারা ৪২টি পুরসভাকে চিহ্নিত করে তালিকা তৈরি করেছিল রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। প্রশাসন সূত্রে খবর, সেই তালিকায় জেলার তিনটি পুরসভাই (বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর ও সোনামুখী) রয়েছে। এই পুরসভাগুলিকে ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মুক্ত এলাকায় শৌচকর্ম পুরোপুরি বন্ধ করতে পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। যদিও সেই নির্দিষ্ট দিনের মধ্যেও কাজ হয়নি। সম্প্রতি রাজ্য পুরনগরোন্নয়ন দফতরের কর্তারা বাঁকুড়ায় এসে জেলার তিনটি পুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে চলতি মাসের মধ্যেই মুক্ত এলাকায় শৌচকর্ম বন্ধ করা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন। তার পরেই এ নিয়ে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছে বাঁকুড়া পুরসভা।

পুরসভা সূত্রে খবর, শহরের ৬, ৭, ৮ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে ‘ট্রিগার টিম’ গড়ে সকালে অভিযান চালানো হচ্ছে নিয়মিত। এই বিশেষ দলে কাউন্সিলরেরা ছাড়া, পুরকর্মীরা রয়েছেন। জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরাও বিশেষ দলের সঙ্গে অভিযানে যাচ্ছেন। খোলা মাঠ বা নালার পাশে শৌচকর্ম করতে দেখলেই হুইসল বাজিয়ে সতর্ক করা হচ্ছে। শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডের একটি করে স্বনির্ভর গোষ্ঠীকেও দিয়েও খোলা জায়গায় শৌচকর্ম রুখতে নজরদারি চালানো হচ্ছে।

পুরপ্রধান জানান, ২০১১ সালের আর্থ-সামাজিক সমীক্ষা অনুযায়ী, বাঁকুড়া শহরে প্রায় সাড়ে আট হাজার পরিবারকে শৌচালয় বিহীন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ‘মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্প’-এর মাধ্যমে ওই পরিবারগুলির মধ্যে ৩, ৪০৭টি পরিবারকে শৌচালয় গড়ে দেওয়া হয়েছে।

তবে শহরে শৌচালয় গড়তে নেমে অপরিকল্পিত বস্তিগুলিতে এই কাজ করতে গিয়ে মুশকিলে পড়ে পুরসভা। বস্তির বেশির ভাগ বাসিন্দারই শৌচালয় গড়ার জন্য জায়গা নেই। সমস্যা মেটাতে যে পরিবারগুলি শৌচালয় তৈরির জন্য জায়গা দিতে পারছে না, তাঁদের জন্য ‘কমিউনিটি ল্যাট্রিন’ গড়ার সিদ্ধান্ত নেয় পুরসভা। বাঁকুড়া শহরে ৪৬টি ‘কমিউনিটি ল্যাট্রিন’ গড়া হয়েছে। আরও ৩০টি তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি, রাজ্যের কাছে ৩০০টি ‘বায়ো-টয়লেট’ চেয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে বাঁকুড়া পুরসভা। তবে প্রশাসনের একাংশের মতে ‘বায়ো-টয়লেট’ ব্যবহার ঠিক ভাবে জানা দরকার। তা ছাড়া, এই টয়লেট চালানো বেশ ব্যয় সাপেক্ষ। পুরপ্রধান অবশ্য বলেন, “বায়ো-টয়লেটগুলির খরচ উপভোক্তাদের মিলিত ভাবেই চালাতে হবে বলে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” রাজ্য থেকে অবশ্য বাঁকুড়াকে ‘বায়ো-টয়লেট’ দেওয়ার বিষয়ে এখনও আশ্বাস দেওয়া হয়নি বলে পুরসভা সূত্রে খবর।

এ দিকে মুক্ত এলাকায় শৌচকর্ম বন্ধ করতে বাঁকুড়া পুরসভার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। শহরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর নীলাদ্রীশেখর দানা বলেন, “আর্থ-সামাজিক সমীক্ষায় যতগুলি পরিবারকে শহরে শৌচালয়বিহীন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, তার অর্ধেক পরিবারেই এখনও শৌচালয় গড়তে পারেনি পুরসভা। তা হলে কী ভাবে বন্ধ হবে মুক্ত এলাকায় শৌচকর্ম?’’ মহাপ্রসাদবাবুর অবশ্য দাবি, “জনসমীক্ষায় যে পরিমাণ পরিবারে শৌচালয় নেই বলে উঠে এসেছিল, আদপে শহরে সংখ্যাটা অতটা নয়। মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে শৌচালয় গড়ার আবেদন যাঁরা করেছিলেন, তাঁদের সকলেরই গড়ে দেওয়া হয়েছে। হাউজ়িং ফর অল প্রকল্পের মাধ্যমেও বাড়ি ও শৌচালয় দু’টোই গড়ে দেওয়া হচ্ছে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy