Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
TMC

তৃণমূল কর্মীকে পিটিয়ে খুনের নালিশ, উত্তেজনা 

উদ্ধার করে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করার জন্য পাঠায়। 

সোমবার, রদিপুর গ্রামে ভাঙচুরের পরে। নিজস্ব চিত্র

সোমবার, রদিপুর গ্রামে ভাঙচুরের পরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২০ ০৭:৫৭
Share: Save:

এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে খুন করার ঘটনায় রবিবার রাত থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে উঠল রামপুরহাট থানার রদিপুর গ্রাম। পুলিশ জানায়, মৃত যুবকের নাম মধুসূধন ঘোষ (৪১)। বাড়ি

রদিপুর গ্রামের ঘোষপাড়া। স্থানীয় সূত্রের খবর, রবিবার রাতে ওই যুবককে গ্রামের লেটপাড়ার একটি ক্লাবের বারান্দায় মৃত অবস্থায় দেখতে পেয়ে বাসিন্দাদের একাংশ পুলিশে খবর দেন। পুলিশ দেহ

উদ্ধার করে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করার জন্য পাঠায়।

নিহত ব্যক্তি এলাকার সক্রিয় তৃণমূলকর্মী ছিলেন। ফলে, এই ঘটনায় রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। গ্রামের তৃণমূলকর্মীদের দাবি, সিপিএমের লোকজন মধুসূধনকে পরিকল্পিত ভাবে খুন করেছে। সিপিএম নেত্বত্বের দাবি, এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। বরং মিথ্যা অভিযোগে তৃণমূলের লোকজনই সিপিএম কর্মীদের

খড়ের পালুইয়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে এবং ২০-২৫টি বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্ব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

গ্রামে উত্তেজনা থাকার জন্য রবিবার রাত থেকে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। মৃতের ছেলে কৃষ্ণজীবন ঘোষের অভিযোগের ভিত্তিতে

পুলিশ রাজু লেট, জিতু লেট, ভোলানাথ লেট-সহ জনা ১৫ গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে খুনের মামলা শুরু করেছে। কয়েক জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

বছর উনিশের তরুণ কৃষ্ণজীবন জানান, তাঁর বাবা দুধ ও ছানা বিক্রি করতেন। রবিবার তিনি লেটপাড়ায় দুধ সংগ্রহ করতে বেরিয়েছিলেন। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ গ্রামের কয়েক জন কৃষ্ণজীবনকে জানান, তাঁর বাবাকে লেটপাড়ার বাসিন্দাদের কয়েক জন ক্লাবে আটকে রেখে মারধর করছে। ওই তরুণের অভিযোগ, ‘‘আমি এলাকায় পৌঁছলে লেটপাড়ার কিছু বাসিন্দা আমাকে বলে, ‘তোর বাবা পাড়ায় এসে রোজ অশান্তি বাধায়। আমরা এর বিচার চাই। তোদের পাড়ার নেতাদের ডেকে নিয়ে আয়।’ আমি পাড়ায় চলে আসি। তার মধ্যেই ওরা লোহার রড, শাবল দিয়ে পিটিয়ে বাবাকে মেরে ফেলে।’’ রবিবার দুপুরে মধুসূদনের সঙ্গে ছিলেন গ্রামের বাসিন্দা প্রকাশ মণ্ডল। তাঁর দাবি, ‘‘রবিবার সন্ধ্যায় লেটপাড়ার সিপিএমের কিছু ছেলে আমাদের ঘিরে ধরে। পরে আমাকে ধাক্কা দিয়ে বাড়ি চলে যেতে বলে। ভয়ে বাড়ি চলে আসি। পরে খবর পাই, মধুদাকে মেরে ফেলা হয়েছে।’’

সোমবার দুপুরে গ্রামে গিয়ে দেখা যায় লেটপাড়ার মনসাতলার কাছে একটি ক্লাবের সামনে পুলিশ মোতায়েন করা আছে। পাড়ার অধিকাংশ বাড়িই পুরুষশূন্য। কোনও কোনও বাড়িতে কেউই নেই। তালা ঝুলানো বাড়িগুলির পাশে গরু-ছাগল বাঁধা। লেটপাড়ার ভিতরে ১০-১৫টি বাড়িতে ভাঙচুর চালানোর চিহ্ন স্পষ্ট। এক জনের বাড়ির সামনে একটি টোটোর কাচ ভাঙা। এক মহিলা জানালেন, ঘোষপাড়া থেকে তৃণমূলের ছেলেরা টোটো ভেঙে দিয়েছে। আর বৃদ্ধার দাবি, ‘‘মধুসূধনের সঙ্গে লেটপাড়ার এক মহিলার সম্পর্ক নিয়ে লেটপাড়ায় গণ্ডগোল ছিল বেশ কয়েক মাস ধরেই। রবিবার সন্ধ্যা থেকে মধুসূদন পাড়ায় ঢুকে গালিগালাজ করছিল। এর প্রতিবাদে পাড়ার ছেলেরা ওকে ধরে। ক্লাবের কাছে হইচই চলছিল। তার পরে কী হয়েছে আমার জানা নেই।’’

রদিপুর গ্রামেরই বাসিন্দা, তৃণমূলের বনহাট অঞ্চলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, ‘‘আমি রবিবার সন্ধ্যায় বাড়ি ছিলাম না। রাতে বাড়ি ফিরে এসে শুনি মধুসূধনকে লেটপাড়ার সিপিএম কর্মীরা

পিটিয়ে খুন করেছে।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘মধুসূদন অন্যায় করে থাকলে পুলিশ-প্রশাসন আছে। তাই বলে পরিকল্পিত ভাবে আইন হাতে তুলে গণপ্রহার করে মেরে ফেলা হবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা দোষীদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’’

সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সঞ্জীব বর্মনের দাবি, ‘‘এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা খুনের রাজনীতির বিরুদ্ধে। যা ঘটেছে, তার নিন্দা করছি। দোষীদের শাস্তি হোক। কিন্তু, যে ভাবে সিপিএম কর্মীদের বাড়ি ভাঙচুর, খড়ের পালুইয়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে, নিরীহকে মারধর করা হয়েছে—সেটারও প্রতিবাদ করছি। আমরা চাই পুলিশ গ্রামে শান্তি ফিরিয়ে নিয়ে আসুক।

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Politics Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy