সমাবেশ: পুরুলিয়া ট্যাক্সিস্ট্যান্ডে ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতিসভায় মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। নিজস্ব চিত্র
লোকসভা ভোটে দুই কেন্দ্রে পরাজয়, কয়েকটি পঞ্চায়েতের সদস্যদের দলবদল ও কাটমানি-বিতর্ক—এই সব ঘটনায় জেরবার বাঁকুড়া জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। এই পরিস্থিতিতে ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতিতে দল কতটা ঝাঁপায় তার উপর নজর রাখছিলেন জেলা রাজনীতির ওঠাপড়ার নিয়মিত পর্যবেক্ষকেরা। তাঁদের মতে, এ বার একুশের প্রস্তুতিতে বাঁকুড়ায় সেই উন্মাদনায় যেন কিছুটা ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যদিও তা মানতে নারাজ জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, প্রতিবারেই মতোই এ বারও জেলা থেকে রেকর্ড কর্মী নিয়ে তাঁরা ধর্মতলায় যাচ্ছেন।
তবে দলের নিচুতলার কর্মী থেকে জেলা নেতৃত্বের একাংশ মানছেন, ২১ জুলাই নিয়ে এত দিন কার্যত এক মাস আগে থেকেই জেলা জুড়ে সাজ সাজ রব পড়ে যেত। রাজ্যনেতারা জেলায় এসে একাধিক ছোট-বড় সভা করতেন। জেলা জুড়ে একুশের প্রচারে পোস্টার, ব্যানার বা দেওয়াল লিখন শুরু হয়ে যেত। বাস ‘বুক’ করাকে কেন্দ্র করে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যেত নেতাদের মধ্যে। এ বার যেন কিছুটা তাল-কাটা লাগছে দলের কর্মীদের মধ্যে।
জেলার এক তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতি শুরু করা নিয়ে কয়েক সপ্তাহ আগে পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনও বার্তা দলীয় ভাবে দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি কলকাতায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করে শহিদ দিবসের প্রস্তুতি শুরু করতে বলেন। তারপর থেকেই তোড়জোড় শুরু হয়েছে।’’
২১ জুলাইকে সামনে রেখে এ বার জেলা তৃণমূলের পক্ষ থেকে বড় কোনও সভার আয়োজন করা না হলেও জনসংযোগ যাত্রা কর্মসূচিতে শহিদ দিবসের প্রচার চালানো হয়েছে। এমনই দাবি করে তৃণমূলের বাঁকুড়া সংসদীয় জেলা সভাপতি শুভাশিস বটব্যাল ও বিষ্ণুপুর সংসদীয় জেলা সভাপতি শ্যামল সাঁতরা জানান, জেলার প্রত্যেকটি ব্লক ও অঞ্চলে জনসংযোগ কর্মসূচির মাধ্যমে ২১ জুলাইয়ের প্রচার করা হয়েছে। শহিদ দিবসের প্রচারে লক্ষাধিক ব্যানার ও ফেস্টুন তৈরি হয়েছে দুই সংসদীয় জেলাতেই। দেওয়াল লিখন করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে দলের কর্মীদের।’’
তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, জেলা নেতৃত্ব প্রায় ২০০টি বাস কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য ‘বুক’ করেছে। এ ছাড়া প্রতি ব্লক থেকে নেতারা ব্যক্তিগত উদ্যোগেও বাস ভাড়া করছেন। ট্রেনেও কর্মীদের নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
যদিও জেলা বাস মালিক সমিতি জানাচ্ছে, এই জেলায় ৪০০-র বেশি বেসরকারি বাস চলাচল করে। ২১ জুলাইয়ের অনেক আগেই প্রায় সমস্ত বাস ভাড়া নেওয়া হত। সভার আগের দিন থেকেই রাস্তায় বাস উধাও হয়ে যেত। ওই সমিতি জানাচ্ছে, বাস ভাড়ার ব্যাপারে এ বার তৃণমূল নেতৃত্বে তাদের সঙ্গে সে ভাবে যোগাযোগ করেনি। মঙ্গলবার পর্যন্ত তিনটি বাস সমিতির মাধ্যমে ভাড়া করা হয়েছে। ব্যক্তিগত ভাবে মালিকদের কাছ থেকে সমাবেশের জন্য কত বাস ভাড়া নেওয়া হয়েছে, তার খবর অবশ্য সমিতির কাছে নেই।
জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য দাবি করছেন, ২০ জুলাই বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর ও দুর্গাপুর থেকে বহু তৃণমূল কর্মী ট্রেনে চড়ে সমাবেশে যাবেন। শুভাশিসবাবু বলেন, “বাঁকুড়া সংসদীয় জেলা থেকে আমরা অন্তত আট হাজার কর্মী নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছি। জেলায় বাস কম রয়েছে। তাই চাহিদা মত বাস না পাওয়াতেই ট্রেনে কর্মীদের নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
শ্যামলবাবুও জানান, বিষ্ণুপুর সংসদীয় জেলা থেকে অন্তত দশ হাজার তৃণমূল কর্মী ট্রেনে ও বাসে যাবেন। তবে, অন্যবারের তুলনায় এ বারের লক্ষ্যামাত্রা কম বলেই মনে করছেন দলের প্রবীণ নেতা-কর্মীরা।
বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্রের দাবি, “কাটমানি নিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়ার ভয়ে বহু তৃণমূল নেতা বাড়ি থেকেই বেরোতে ভয় পাচ্ছেন, তাঁরা কলকাতায় যাবেন কী ভাবে?’’
তা অবশ্য মানতে নারাজ শুভাশিসবাবু ও শ্যামলবাবুরা। তাঁদের দু’জনেরই দাবি, “মোটেও না। কাটমানি নিয়ে বিজেপিই উস্কানি দিয়ে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। অন্যবারের তুলনায় এ বার অনেক বেশি তৃণমূল কর্মী কলকাতায় যাবেন। মানুষের মধ্যে উদ্দীপনা বরং আরও বেশি। আমরা বিভিন্ন ব্লক ও অঞ্চলে মিছিল করতে গিয়ে তা টের পেয়েছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy