থিকথিকে: পুরুলিয়া শহরের দুলমি এলাকায় তৃণমূলের জেলা কার্যালয় দ্বারোদ্ঘাটনের অনুষ্ঠান উপলক্ষে দলের কর্মী-সমর্থকদের ভিড়। বজায় রইল না সামাজিক দূরত্ব। ছবি: সুজিত মাহাতো
সমাজিক দূরত্বের বিধি ‘উড়িয়ে’ পুরুলিয়ার দুলমিতে তৃণমূলের নতুন জেলা কার্যালয়ের দরজা খুলল বৃহস্পতিবার। বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর অভিযোগ, এ দিনের ভিড় করোনা-সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা অনেকটাই বাড়িয়ে দিল। তবে তৃণমূলের নেতাদের দাবি, কর্মী-সমর্থকেরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেছেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় না থাকার ব্যাপারে দলের জেলার মুখপাত্র নবেন্দু মাহালি বলেন, ‘‘নতুন কার্যালয় নিয়ে কর্মীদেরও একটা আবেগ রয়েছে। খবর জানার পরে অনেকেই এসেছেন। এই আবেগকে অস্বীকারও তো করতে পারি না।’’
পুরুলিয়া শহরের বিটি সরকার রোডে তৃণমূলের আগের জেলা কার্যালয়টি ছিল। বৃহস্পতিবার দুপুরে সেটি সরে গিয়েছে শহরের এক প্রান্তে, পুরুলিয়া-জামশেদপুর (৩২ নম্বর) জাতীয় সড়কের ধারে। দলীয় পতাকা উত্তোলন করে এ দিন নতুন কার্যালয়ের সূচনা করেন তৃণমূলের জেলা কমিটির চেয়ারম্যান তথা প্রাক্তন জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো এবং নবনিযুক্ত জেলা সভাপতি গুরুপদ টুডু। ছিলেন জেলার তিন কো-অর্ডিনেটর— সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, সুষেণচন্দ্র মাঝি ও মিনু বাউরি। আর ছিল কর্মী-সমর্থকদের থিকথিকে ভিড়।
কেপি সিংহদেও জেলা তৃণমূলের সভাপতি থাকাকালীন দলের জেলা কার্যালয় ছিল পুরুলিয়া শহরের বিটি সরকার রোডের জিলা স্কুল মোড়ে। ২০০৯ সালে শান্তিরাম মাহাতো জেলা সভাপতি হওয়ার পরে, তা সরে যায় বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া সীতারাম মাহাতো ভবনে। এগারো বছর পরে গুরুপদবাবু জেলা সভাপতির দায়িত্ব পেতেই আবার কার্যালয়ের জায়গা-বদল হল।
জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র নবেন্দু মাহালি বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘কোভিড-পরিস্থিতিতে ভিড় না করার কথা বলা হচ্ছে। পাশাপাশি, এতদিন যেখানে কার্যালয় ছিল, সেই বাড়ির উপরতলায় এবং পাশে প্রচুর মানুষজনের বসবাস রয়েছে। সেখানে জায়গাও কম ছিল। দলের বৈঠক করতে হত হোটেল ভাড়া নিয়ে। সব দিক ভেবেই কার্যালয়
সরানো হয়েছে।’’
কার্যালয় সরানোর কারণ হিসেবে কোভিড-পরিস্থিতিতে ভিড় এড়ানোর কথা বলেছেন নবেন্দুবাবু। এ দিকে, কার্যালয়ের উদ্বোধনেই ভিড় নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। জাতীয় সড়কের ধারেই একটি বাড়ির তিন তলায় তৃণমূলের নতুন কার্যালয়টি। সিঁড়ি বাড়ির পিছনের দিকে। সরু গলি দিয়ে যেতে হয় সেই পর্যন্ত। দু’জন পাশাপাশি গেলে ঠেসাঠেসি অবস্থা হয়। এ দিন কার্যালয়ের বাইরে জড়ো হয়েছিলেন প্রচুর কর্মী-সমর্থক। সিঁড়ি দিয়ে প্রচুর লোকজন ওঠার চেষ্টা করছিলেন। অনেকেরই ‘মাস্ক’ ঝুলছিল থুতনিতে। উপরে শান্তিরামবাবুকে বলতে শোনা গেল, ‘‘এখানে এ ভাবে ভিড় করবেন না। প্লিজ়, নীচে চলুন।’’
এই পরিস্থিতিতে রঘুনাথপুরের বিজেপি নেতা বিজয় গুঁই ও অশোক দাসের তৃণমূলে যোগদানের অনুষ্ঠান উপর থেকে নীচে নামিয়ে আনা হয়। অবস্থা দেখে কর্মী-সমর্থকদের কয়েকজন রাস্তার উল্টো দিকে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁদের এক জন বলেন, ‘‘দলের কর্মসূচি তো। আসতেই হবে। কিন্তু এই ভিড়ে উপরে ওঠা যথেষ্ট ঝুঁকির। কে বলতে পারে, ভিড়ের মধ্যে কেউ সংক্রমিত নয়?’’
পুরুলিয়ায় ক্রমেই বাড়ছে করোনা-সংক্রমণ। এ পর্যন্ত এক দিনে জেলায় সর্বাধিক আক্রান্ত হয়েছেন গত সোমবার। ৫৪ জন। বুধবার রাত পর্যন্ত জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪৪৭ জন। এমন একটা পরিস্থিতিতে এই ভিড় সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি অনেকেটাই বাড়িয়ে দিল বলে অভিযোগ করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগরবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূল মুখে সতর্কতার বুলি আওড়ায়। কিন্তু নিজেরাই এ ভাবে ভিড় করে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়িয়ে দিল। আর আমরা কয়েক জন কর্মী নিয়ে কিছু করতে গেলেই পুলিশ-প্রশাসন দিয়ে রোখার চেষ্টা করছে। ওদের না আছে কোনও নীতিবোধ, না আছে মানুষের জন্য সহমর্মিতা।’’ জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র নবেন্দুবাবুর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘আমরা এ দিন ব্লক থেকে কর্মীদের আসার জন্য বলিইনি। বললে এই ভিড় জনসভার চেহারা নিত। তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা দায়িত্ববান। তাঁদের বলা হয়েছিল, অবশ্যই যেন মাস্ক পরে থাকেন। সবাই সে কথা মেনে চলেছেন।’’
এ দিন জাতীয় সড়কে ওই এলাকায় মোতায়েন ছিল পুলিশ। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘রাস্তায় যাতে জটলা না হতে পারে, তা আমরা দেখেছি।’’ জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘করোনার সংক্রমণ ছড়ানো ঠেকাতে আমরা লাগাতার সবাইকে সতর্ক করে চলেছি। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy