বিষ্ণুপুরের বড় কালীতলা মোড়ে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র।
পুরভোটের প্রার্থিতালিকা প্রকাশের পরে, তৃণমূলের অন্দরে অসন্তোষ চলছেই। কয়েকটি ওয়ার্ডে প্রার্থী বদলের দাবিতে শনিবার রঘুনাথপুর শহরে এটিম ময়দানের পাশে দলের শহর কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন ওয়ার্ডগুলির শতাধিক কর্মী-সমর্থক। যার প্রেক্ষিতে জেলা সভাপতিকে কয়েকটি ওয়ার্ডে প্রার্থী বদলের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের রঘুনাথপুর শহরের সভাপতি বিষ্ণুচরণ মেহেতা।
তাঁর কথায়, “বিধানসভা নির্বাচনে যাঁরা দলের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন, তাঁদের একাংশকে প্রার্থী করা হয়েছে। তাতে অনেকের ক্ষোভ বেড়েছে। যে সব ওয়ার্ডে প্রার্থীদের নিয়ে ওয়ার্ড কমিটিগুলি ঘোরতর আপত্তি জানিয়েছে, সেগুলিতে প্রার্থী বদলের প্রস্তাব দিয়েছি জেলা সভাপতিকে।” যদিও কোন কোন ওয়ার্ডে প্রার্থী বদলের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা জানাতে চাননি তিনি।
প্রার্থী বদলের প্রস্তাব পেয়েছেন জানিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ”সেই প্রস্তাব রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়েছি। রাজ্যই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।” তাঁর সংযোজন, ”তবে দলের স্পষ্ট নির্দেশ, যে-ই প্রার্থী হন না কেন, তাঁকে জেতাতে দলের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।”
দলীয় সূত্রে জানা যায়, রঘুনাথপুরে প্রার্থিতালিকায় পুরনো ও নতুনদের মধ্যে সমন্বয় রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডে যেমন প্রাক্তন কাউন্সিলর সুলেখা দাসের বদলে সুশান্তশেখর দাসকে প্রার্থী করা হয়েছে। তবে নতুন প্রার্থীকে নিয়েও আপত্তি রয়েছে ওয়ার্ডের কর্মীদের একাংশে। এ ছাড়া, ১,৫,৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থীরা ‘বহিরাগত’ বলে আপত্তি উঠেছে।
আবার, শহর সভাপতি বিষ্ণুচরণ মেহেতাকে প্রার্থী করা হয়েছে ১১ নম্বর ওয়ার্ডে, যা তাঁর বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে বলে দাবি। কাছের কোনও ওয়ার্ড থেকে তাই তাঁকে প্রার্থী করার দাবি তুলেছেন অনুগামীরা। তবে বিষ্ণু বলছেন, ”নিজের ওয়ার্ড ১৩ নম্বর মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হয়েছে। তবে শহর সভাপতি হিসাবে শহরের সমস্ত ওয়ার্ডই আমার দায়িত্বে। দল যে ওয়ার্ডে প্রার্থী করেছে, সেখান থেকেই নির্বাচনে লড়ব।”
এলাকার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের পর্যবেক্ষণ, প্রার্থী নিয়ে কর্মী-সমর্থকদের ক্ষোভ দ্রুত মেটানো না গেলে শহরে পুরবোর্ড দখলের লড়াইয়ে কিছুটা হলেও সমস্যায় পড়তে পারে শাসকদল। রঘুনাথপুরের বিজেপি বিধায়ক বিবেকানন্দ বাউড়ির মন্তব্য, ”তৃণমূলের অন্দরে কোন্দলের সুবিধা পেতেই পারেন আমাদের প্রার্থীরা। তবে আমরা সেই বিষয়টিকে ধর্তব্যের মধ্যে রাখছি না। তৃণমূল গত ১৫ বছর পুরসভায় ক্ষমতায় থেকেও শহরের সার্বিক উন্নয়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। বিধানসভা ভোটের নিরিখে পুরসভার তেরোটি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১টিতে এগিয়ে থাকা তার প্রমাণ। পুরভোটে ফল আরও ভাল হবে।”
প্রার্থী বদলের দাবিতে রবিবার পথে নামেন বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুরের তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের একাংশ। বাঁকুড়ার রবীন্দ্রসরণি এলাকায় পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানো হয়। বিক্ষোভকারীদের দাবি, উন্নয়নের স্বার্থে বিদায়ী কাউন্সিলর অনন্যা রায় চক্রবর্তীকে প্রার্থী করতে হবে। অবরোধের জেরে এলাকায় সাময়িক যানজট তৈরি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরোধ তুলে দেয়। তৃণমূলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দিব্যেন্দু সিংহ মহাপাত্র বলেন, “প্রার্থিতালিকা নিয়ে কর্মীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়েছি।”
বিষ্ণুপুরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কর্মী-সমর্থকেরাও এ দিন বড় কালীতলা মোড়ে অবরোধ করেন। কিছু ক্ষণ যানজট হয়। পরে অবশ্য পুলিশ গিয়ে অবরোধ তুলে দেয়। বিক্ষোভকারীদের দাবি, ‘চাপিয়ে দেওয়া’ প্রার্থীকে তাঁরা মানবেন না। যে কেউ প্রার্থী হতে পারেন, কিন্তু রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কহীন প্রার্থীকে বদল করতেই হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy