প্রতীকী ছবি।
প্রকাশ্য সভায় দাঁড়িয়ে থানার ওসি-র উর্দি খুলে নেওয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের খয়রাশোল ব্লক সভাপতি দীপক ঘোষের বিরুদ্ধে।
খয়রাশোলের কাঁকরতলা থানা এলাকার বাবুইজোড়ে শনিবার বিকেলের ঘটনা। স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই এলাকায় একটি আদিবাসী সম্মেলন ছিল। অভিযোগ, সেই সভাতেই কাঁকরতলা থানার ওসি-র উর্দি খুলে নেওয়ার হুমকি দেন দীপকবাবু। তাঁর চাকরি ‘খেয়ে’ নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন।
ওই ঘটনার পরপরই রবিবার কাঁকরতলা থানারই মুন্দিরা গ্রামে বিজেপির কয়েক জন নেতাকর্মীকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ ওঠে শাসকদলের বিরুদ্ধে। বিজেপির নালিশ, হামলায় জখম হন কিসান মোর্চার জেলা সভাপতি সহ তিন জন। তাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
কী বলেছিলেন দীপকবাবু? স্থানীয় সূত্রে খবর, সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে ওসি-কে উদ্দেশ করে তিনি বলেন— ‘‘আমার ছেলেরা আপনার থানায় গিয়ে বঞ্চিত হলে আপনার কোট-প্যান্ট আমি খুলে নেব। যদি আমার এলাকায় আর কোনও বডি (খুন) পড়ে তা হলে আপনার চাকরিই আমি
খেয়ে নেব।’’ ওই মঞ্চে তখন উপস্থিত ছিলেন দুবরাজপুরের বিধায়ক নরেশচন্দ্র বাউরিও।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ এখনও করা হয়নি। জেলার পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, ‘‘ঠিক কী হয়েছে আমার জানা নেই। তবে এমন হয়ে থাকলে পুলিশের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ করা হবে।’’ অন্য দিকে বিজেপি নেতা-কর্মীদের উপরে হামলার ঘটনায় পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হবে বলে জানিয়েছেন দলের জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়।
বিজেপির অভিযোগ, সংগঠনের শক্তি বাড়ানোর বিষয়ে রবিবার সকালে দলের জনাপনেরো নেতাকর্মীর সঙ্গে হজরতপুর পঞ্চায়েতের মুন্দিরা গ্রামের একটি বাড়িতে বৈঠক করছিলেন কিসান মোর্চার সভাপতি শান্তনু মণ্ডল। অভিযোগ, তখনই অতর্কিতে আক্রমণ চালাক শাসকদলের লোকেরা। তিন জন গুরুতর জখম হন। হাত ভাঙে শান্তনুবাবুর। তাঁদের গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। আক্রমণের পিছনে ওই ব্লকের শাসকদলের শীর্ষনেতাদের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ বিজেপির। রামকৃষ্ণবাবুর নালিশ, ‘‘মারধর করেই থেমে থাকেনি তৃণমূল। জখমদের ঘণ্টাখানেক খয়রাশোলের দলীয় কার্যালয়ে বাসিয়ে রাখা হয়েছিল।’’
কেন হুমকি ওসিকে, কেন বিজেপির নেতাকর্মীদের মারধর?
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে খয়রাশোলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ বারবারই উঠেছে। সম্প্রতি ব্লক কার্যকরী সভাপতি থেকে ব্লক সভাপতি হয়েছেন দীপকবাবু। একই সঙ্গে ‘বিপক্ষ’ গোষ্ঠীর নেতা উজ্জ্বল হক কাদেরীকে ব্লক কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার পরেই সংঘাত আরও বেড়েছে।
কাঁকরতলায় পর পর দু’টি ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে দাবি তৃণমূলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর নেতাদের একাংশের। তাঁদের কথায়, ‘‘শাসকদলের পোশাক পরে খয়রাশোলে এমন কিছু মানুষ রয়েছেন, যাঁরা সব সময় দলের ক্ষতি চান।’’ তাঁদের অভিযোগ, গত রবিবার খয়রাশোলের হজরতপুরের প্রভাবশালী নেতা স্বপন সেনকে খুনের ছক কষা হয়েছিল। মোটরবাইকে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তাঁকে মারতে এসেছিল তিন জন। পুলিশ তাড়া করায় মোটরবাইক ফেলে পালায় দুষ্কৃতীরা। কিন্তু মোটরবাইক উদ্ধার করা হলেও এখনও
কাউকে ধরেনি পুলিশ।
পুলিশ অবশ্য এ কথা মানতে নারাজ। জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘এক জন অভিযুক্তকে ধাওয়া করা হয়েছিল। মোটরবাইক ফেলে সে পালায়। ঘটনাচক্রে সে বিপক্ষ গোষ্ঠীরই লোক।’’
দীপকবাবু বলছেন, ‘‘আমি ঠিক কী বলেছি মনে নেই। তবে কাঁকরতলা থানার ওসি নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করছেন না। স্বপন সেনকে খুনের ছকে কাউকে এখনও ধরা হয়নি। এর আগেও খয়রাশোলে অনেক প্রাণ গিয়েছে। তাঁকে নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতে বলা হয়েছে। ক্ষোভে মুখ ফসকে কিছু কথা বেরিয়ে গিয়ে থাকতে পারে।’’ এ দিন বিজেপির উপর হামলার প্রসঙ্গে দীপকবাবু বলেন, ‘‘মারপিট হয়েছে খবর পেয়েই আমি নিজে গিয়ে বিষয়টি সামলেছি। শুশ্রূষা করা হয়েছে তাঁদের। তবে বিজেপির তরফে অভিযোগ করা হলে পাল্টা অভিযোগ হবে।’’
এ নিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘পুলিশের উর্দি খুলে নেওয়ার কথা বলা অন্যায়। এটা আমি সমর্থন করি না। তবে ওখানকার ওসি-র ভূমিকাও ঠিক নয়।’’ আর বিধায়ক নরেশবাবু বলেছেন, ‘‘আমি মঞ্চে ছিলাম ঠিকই, কিন্তু উনি কী বলেছেন শুনিনি। আমি তখন অন্য জনের সঙ্গে কথা বলছিলাম। তবে এ কথা বলে থাকলে ভুল করেছেন।’’
স্বপনবাবু বলেন, ‘‘আমার উপরে হামলার ছক কষা হয়েছে, সে কথা জেনে দলের কর্মীরা সতর্ক রয়েছেন। রবিবার সকালে কয়েক জন ‘অপরিচিত’ লোক দেখে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়েছিল। ওঁদের সঙ্গে কোনও পতাকা, ফেস্টুন ছিল না। কোথা থেকে কেন ওঁরা এখানে এসেছেন তা জানতে গিয়ে একটু ধাক্কাধাক্কি হয়েছে মাত্র। বিজেপির লোক জানার পরেই ওঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’’ বিজেপির এক স্থানীয় নেতা অবশ্য বলেন, ‘‘বাজে কথা। সংগঠন বাড়াতে দেবে না বলেই আক্রমণ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy