২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে সুজাতা তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর সৌমিত্র এবং তিনি আলাদা থাকতে শুরু করেন। —ফাইল চিত্র।
বিবাহবিচ্ছেদের মামলায় আদালতে দাঁড়িয়ে স্বামী সৌমিত্র খাঁয়ের বিরুদ্ধে আবার বিস্ফোরক দাবি করলেন সুজাতা মণ্ডল। তৃণমূল নেত্রীর অভিযোগ, তাঁর স্বামী বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র তাঁকে দিনের পর দিন ঠকিয়েছেন। সুজাতার কথায়, “স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মাঝে অন্য নারীর আগমন ঘটলে এবং তা জানতে পারলে সেই স্বামীর সঙ্গে আর কত দিন থাকা যায়?”
শুক্রবার বিবাহবিচ্ছেদের মামলায় বাঁকুড়া জেলা আদালতে হাজিরা দেন সৌমিত্র এবং সুজাতা। আদালত থেকে চোখে জল নিয়ে বেরিয়ে যান সৌমিত্র । এর পর বিষ্ণুপুরের সাংসদের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ করেন সুজাতা। সৌমিত্র অবশ্য পুরো বিষয়টি ‘ব্যক্তিগত’ বলে এড়িয়ে গিয়েছেন।
সুজাতার অভিযোগ, তিনি প্রতারিত হয়েছেন। তাঁকে হুমকিও দিয়েছেন সৌমিত্র। তাঁর কথায়, “এত দিন পর্যন্ত আমার বোনের বিয়ে হয়নি। আমাকে হুমকি দেওয়া হয়, আমি যদি মুখ খুলি, তা হলে আমার বোনের বিয়ে ভেঙে দেওয়া হবে। তাই আমি এত দিন মুখ খুলিনি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমি আমার স্ত্রীর কর্তব্য করে গিয়েছি। আমি বুঝতে পারিনি যে, আমি যখন তাঁর হয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন তিনি (সৌমিত্র) উত্তরবঙ্গে গিয়ে অন্যের স্ত্রীর সঙ্গে ফুর্তি করে বেড়াচ্ছেন।”
২০১৬ সালের ১ জুলাই বাঁকুড়ার বড়জোড়ার বাসিন্দা সুজাতাকে বিয়ে করেন বিষ্ণুপুরের তৎকালীন তৃণমূল সাংসদ সৌমিত্র। দু’জনের মধ্যে প্রণয়ের সম্পর্ক ছিল। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের আগে সৌমিত্র তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। বিজেপি তাঁকে বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করে। তবে একটি মামলার প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে সৌমিত্র নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে প্রচারে যেতে পারেননি। তাঁর হয়ে প্রচার সামলান স্ত্রী সুজাতা।
নির্বাচনে জয়ের পর পুরো কৃতিত্বই স্ত্রীকে দিয়েছিলেন সৌমিত্র। কিন্তু বছর দুয়েকের মধ্যে ‘ছন্দপতন’। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে সুজাতা তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর তাঁরা আলাদা থাকতে শুরু করেন। বিবাহবিচ্ছেদের মামলা হয় আদালতে। পুরনো কথা টেনে সুজাতা বলেন, “আমি যে দিন রাত সাড়ে তিনটেয় বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলাম, সে দিন অনেকে অনেক কথা বলেছিলেন। কিন্তু সে দিন প্রাণে বেঁচে বেরিয়ে আসি। আমার বয়স অল্প। জীবন অনেকটা পড়ে আছে। আমার কিছু হয়ে গেলে আমার বাবা-মা শেষ হয়ে যাবে, এই সব ভেবে বেরিয়ে এসেছিলাম।”
এর পর সুজাতের সংযুক্তি, “সংসার আমি ভাঙতে চাইনি। সংসার হয় স্বামী-স্ত্রীর। সেখানে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর যদি স্বামী ঠকিয়ে যান স্ত্রীকে, যদি রাসলীলা করে বেড়ান, দিল্লির যমুনা অ্যাপার্টমেন্টে তাঁর সঙ্গে লিভ ইন করেন, তা হলে আমার সম্পর্ক ছেড়ে বেরিয়ে আসাটা কি খুব অপরাধ?’’ সুজাতা আরও বলেন, “আমি তাঁকে (সৌমিত্র) শুধরানোর অনেক চেষ্টা করেছি। চারিত্রিক ভাবে বদল করার চেষ্টা করেছিলাম। আমি ভাবতাম তিনি উত্তরবঙ্গে কাজে যাচ্ছেন। কিন্তু ভাবতে পারিনি তিনি সেখানে সংসার পেতে বসে আছেন! আমি সম্পূর্ণ ভাবে প্রতারিত হয়েছি। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস অকথ্য নির্যাতন সহ্য করেও আমি চেয়েছিলাম সংসারটা বাঁচিয়ে রাখতে। আর তা করতে গিয়েই আমি ঠকে গিয়েছি। ভেবেছিলাম সুদিন আসবে। কিন্তু সেই সুদিন আর আসেনি।”
সুজাতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে অবশ্য কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি সৌমিত্র। তিনি বলেন, “জীবন কখনও থেমে থাকে না। জীবন নদীর জলের মতো এগিয়ে যায়। আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে কে কী ভাবল বা কে কী বলল তাতে আমার কিছু যায় আসে না।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘তৃণমূলকে জঘন্যতম জায়গা বলে মনে করি। তাই সেখানে যে যাবে তাঁকেই আমি পছন্দ করি না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy