(বাঁ দিকে) অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। (ডান দিকে) সায়নী ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র ।
গোমূত্র দিয়ে কুলকুচি করে এসে রায় দিতেন বিচারপতি! নাম না করে কলকাতা হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি তথা সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে এই বলেই আক্রমণ করলেন তৃণমূলের যুবনেত্রী সায়নী ঘোষ। নির্বাচনে নামলে প্রাক্তন বিচারপতির জামানত বাজেয়াপ্ত করানোর চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দিলেন অভিনেত্রী তথা রাজনৈতিক নেত্রী।
গত মঙ্গলবার বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর বিজেপিতে যোগদানের কথা ঘোষণা করেছিলেন অভিজিৎ। অভিজিতের সেই ঘোষণায় রাজ্য রাজনীতিতে আলোড়ন হয়। সরব হয় রাজ্যের শাসকদল। এর পর বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন অভিজিৎ। অভিজিতের বিরুদ্ধে বিচারপতির আসনে বসে রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এ বার সেই প্রসঙ্গেই অভিজিৎকে বিঁধলেন সায়নীও। তবে অভিজিতের নাম তিনি নেননি।
বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার হিন্দু হাইস্কুল মাঠে একটি রক্তদান শিবির এবং ‘জনগর্জন সভা’র প্রস্তুতি সভার ডাক দিয়েছিল যুব তৃণমূল। উপস্থিত ছিলেন সায়নী। সেখানেই কারও নামোল্লেখ না করে সায়নী বলেন, ‘‘এক জন বিচারকের চেয়ারে বসে এত দিন খুব বড় বড় কথা বলতেন। এখন বুঝতে পারছি তিনি যে রায়গুলি দিয়েছেন, তা গোমূত্র দিয়ে গার্গল (কুলকুচি) করে এসে দিয়েছেন। বিচারের বাণী আজ নীরবে নিভৃতে কাঁদছে। ধিক্কার জানাই। এত দিন আপনি মানুষের বিচার করতেন। এ বার মানুষ আপনার বিচার করবে।’’
প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে সায়নী আরও বলেন, ‘‘আসুন, নামুন মাঠে, খেলুন। তৃণমূলের ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। কারণ, তৃণমূল ৩৬৫ দিন মাঠেই থাকে। এই মাঠেই খেলা হবে। কত ধানে কত চাল বোঝা যাবে। বাংলার মানুষ জামানত বাজেয়াপ্ত করে লোটাকম্বল-সহ বিদায় করে দেবে। তৃণমূল গ্যালারিতে বসে থাকবে আর বাংলার মানুষ খেলবে।’’
ইতিমধ্যেই সায়নীর ‘কুলকুচি’ মন্তব্যের সমালোচনা করে সরব হয়েছে রাজ্যের পদ্মশিবির। বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুনীল রুদ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘সায়নী ঘোষের মুখে এই ধরনের নিম্নরুচির কথা নতুন নয়। এর আগেও তিনি নিজের বক্তব্যে নিম্নরুচির পরিচয় দিয়েছেন। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যখন বিচারক ছিলেন, তখন তিনি যে রায়গুলি দিয়েছেন, তা নিয়ে এ ভাবে প্রশ্ন তোলা যায় না। সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তিনি তখন রায় দিয়েছেন। এখন তিনি রাজনীতির ময়দানে এসেছেন। যে ভাবে তৃণমূলের সৌজন্যে বাংলার সর্বস্তরে দুর্নীতি হয়েছে, তাতে এই বাংলার মানুষ কাদের জামানত বাজেয়াপ্ত করবে, তা সময়ই বলবে।’’
উল্লেখ্য, গত বছরের জুনে সায়নীকে সিজিও কমপ্লেক্সে তলব করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ইডি। ইডি সূত্রে খবর ছিল, রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তের সূত্রেই ডেকে পাঠানো হয়েছিল অভিনেত্রী তথা রাজনৈতিক নেত্রীকে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর পাওয়া গিয়েছিল, ইডি দফতরে অভিনেত্রী-নেত্রীকে তাঁর সম্পত্তি এবং লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। সায়নীর সম্পত্তির হিসাব চাওয়ার প্রসঙ্গে অনেকেই তৎকালীন বিচারপতি অভিজিতের একটি মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে এনে সায়নীকে তলবের যোগসূত্র খুঁজে বার করার চেষ্টাও করেছিলেন। বিচারপতি থাকার সময় নিয়োগ মামলার শুনানিতে অভিজিৎ বলেছিলেন, ‘‘নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে এক অভিনেত্রীর নাম উঠে এসেছে। আমি শুনেছি, তিনি নাকি তিনটি ফ্ল্যাট ভেঙে একটা বড় ফ্ল্যাট পেয়েছেন। জানতে চাই, কে তিনি?’’ বিচারপতির এই মন্তব্য করেন গত বছরের ৩০ জানুয়ারি। তার দিন কয়েক আগে আবার ইডির একটি সূত্রে জানা গিয়েছিল, দক্ষিণ কলকাতার একটি আবাসনে এক যুবনেত্রীর জন্য তিনটি ফ্ল্যাট একসঙ্গে কিনে সেটিকে একটি বৃহৎ ফ্ল্যাটে পরিণত করা হয়েছে। সেই সময় অভিজিৎ মন্তব্য করেছিলেন, নিয়োগ দুর্নীতিতে এক অভিনেত্রীর নাম প্রকাশ্যে এসেছে বলে শুনেছেন তিনি। সেই অভিনেত্রী কে এবং তাঁর অভিনীত সিনেমাও তিনি দেখতে চান বলে জানিয়েছিলেন অভিজিৎ। এর কাছাকাছি সময়ে সায়নীকে সম্পত্তির নথি নিয়ে সিজিওতে হাজির হতে বলায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল, তবে কি ওই যুবনেত্রী এবং ওই অভিনেত্রী সায়নী? যদিও সেই অভিনেত্রী বা যুবনেত্রী কে? তা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেননি, বলেনি ইডিও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy