Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
পঞ্চায়েত সমিতি

দ্বন্দ্বের ‘আঁচ’ কাজে, দাবি

জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, ‘‘আমাকে সামনাসামনি ওই পঞ্চায়েত সমিতির ব্যাপারে কেউ কিছু জানাননি। দফতরে কেউ আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন কি না জানা নেই।’’

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝালদা শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৫৭
Share: Save:

ঝালদা পুরসভার পরে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের আঁচ পড়ল এ বার ঝালদা ১ পঞ্চায়েত সমিতিতেও। পুরভবন মাঝে মধ্যেই তপ্ত হয় প্রাক্তন পুরপ্রধান ও বর্তমান পুরপ্রধানের বিবাদে। এ বার ঝালদা ১ পঞ্চায়েত সমিতি সরগরম সভাপতি বনাম সহ-সভাপতির ‘লড়াইয়ে’।

পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির পাশ থেকে সদস্যদের অনেকে সরে যাওয়ায় তিনি সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছেন বলে দাবি সহ-সভাপতির। তাঁর অভিযোগ, সে জন্য সভাপতি সাধারণ সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের গৃহীত সিদ্ধান্তে স্বাক্ষর করছেন না। এতে ওই এলাকার উন্নয়নও থমকে গিয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ। এই প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসনের কাছে সহ-সভাপতির স্বাক্ষরকে মান্যতা দেওয়ার আর্জি জানান সহ-সভাপতি ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সদস্যেরা। জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে সাড়া না পেয়ে, শেষে তাঁরা ২২ জন কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। যদিও সভাপতি তাঁর বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ মানতে চাননি।

জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, ‘‘আমাকে সামনাসামনি ওই পঞ্চায়েত সমিতির ব্যাপারে কেউ কিছু জানাননি। দফতরে কেউ আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন কি না জানা নেই।’’ তিনি জানান, সভাপতির উপস্থিতিতে সহ-সভাপতি আলাদা ভাবে কাজ চালাতে পারেন না। রাজ্যের মন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোও বলেন, ‘‘কেউ ইচ্ছা করলেই পঞ্চায়েত সমিতি চালাতে পারেন না। বিধি মেনে কাজ হয়। দলগত ভাবে সমস্যাটি দেখা হচ্ছে।’’

সভাপতির তরফের আইনজীবী ললিত মাহাতো বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত আইন মোতাবেক, সমিতিতে সভাপতি থাকলে সহ-সভাপতি স্বাক্ষর করার অধিকার চাইতে পারেন না। সভাপতি অসুস্থ হলে বা কোনও কারণে দীর্ঘদিন সমিতির বাইরে থাকলে, বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে সরকারি বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’’ সহ সভাপতির পক্ষের আইনজীবী সৌম্য মজুমদার বলেন, ‘‘মামলাটা আদালতে শুধু দায়ের করা হয়েছে। এখনও শুনানি হয় নি।’’

ব্লক তৃণমূল সূত্রে খবর, ওই দু’জনের মনোমালিন্য নতুন নয়। তাহলে দল কেন সামাল দিচ্ছে না? তৃণমূলের ঝালদা ১ ব্লক তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি জগদীশ মাহাতোর দাবি, আজ, শনিবার জেলা তৃণমূলের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।

২২টি আসনের ঝালদা ১ পঞ্চায়েত সমিতিতে নির্বাচনে কংগ্রেস পায় আটটি, বিজেপি সাতটি, তৃণমূল পাঁচ এবং সিপিএম দু’টি আসন। পরে বিজেপি এবং সিপিএমের জয়ী সদস্যদের নিয়ে সমিতির বোর্ড গঠন করে তৃণমূল। সভাপতি হন তৃণমূলের বীণা মাহাতো, সহ-সভাপতি হন ওই দলেরই শেখ সুলেমান।

অভিযোগ, গোড়ায় সব কিছু ঠিকঠাক চললেও কিছুদিনের মধ্যেই সভাপতি ও সহ-সভাপতির মধ্যে ‘সমস্যা’ শুরু হয়। সূত্রের খবর, বিজেপির পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যেরা সভাপতির পক্ষ নেন। অন্য দিকে, কংগ্রেস এবং সিপিএম থেকে জয়ী সদস্যেরা সহ-সভাপতির পাশে দাঁড়ান। তৃণমূলের সদস্যেরা দু’পক্ষের মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যান।

পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যেরা ছাড়াও পঞ্চায়েত সমিতি এলাকার সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, জেলা পরিষদ সদস্য, বিধায়ক ও সাংসদ সমিতির সাধারণ সভার সদস্য হন। সেই হিসেবে ঝালদা ১ পঞ্চায়েত সমিতিতে সংখ্যাটা ৩৬। তাঁদের মধ্যে ২৪ জনই তাঁর দিকে রয়েছেন বলে দাবি সহ-সভাপতি শেখ সুলেমানের। তাঁর দাবি, ‘‘সাধারণ সভায় সভাপতি সংখ্যালঘু হয়ে পড়ায় তিনি পঞ্চায়েত সমিতিতে নিয়মিত আসছেন না। কোনও সরকারি নথিতে সইও করতে চাইছেন না। এতে প্রকল্পের কাজ থমকে রয়েছে। তাই আমার স্বাক্ষরকে মান্যতা দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসন ও আদালতে আর্জি জানিয়েছি।’’

সেই দাবি মানতে নারাজ সভাপতি বীণা মাহাতো। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘আমাকে কাঠের পুতুল বানিয়ে পঞ্চায়েত সমিতি পরিচালনা করতে চেয়েছিলেন সহ-সভাপতি। কিন্তু আমি কিছু কাজের প্রতিবাদ করায় তিনি নানা সমস্যা তৈরি করছেন। আমাকে না জানিয়ে নিয়ম ভেঙে সাধারণ সভা ডাকা হচ্ছে। এটা চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়। আমি দলের সমস্ত স্তরে বিষয়টি জানিয়েছি।’’ বিডিও (ঝালদা ১) রাজকুমার বিশ্বাস বলেন, ‘‘বিষয়টি আদালতের বিবেচনাধীন। তাই কোনও মন্তব্য করব না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Jhalda TMC Group Conflict
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy