বুধবার রাতে ১৪ নম্বর জাতীয় সড়কের এই ভোল্লা ক্যানাল মোড়েই বাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। রাস্তার ধারে পড়ে আছে বাইকের ভাঙা অংশ। (ডান দিকে), শোকার্ত পরিজন রামপুরহাট মেডিক্যালে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
মহরমের রাতে শোক ছড়িয়ে পড়ল তিন গ্রামে। মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন তিন গ্রামের ৫ জন। গুরুতর আহত আরও দু’জন।
পুলিশ জানিয়েছে, সাত জন হতাহতের মধ্যে ছ’জনই ছিলেন দু’টি মোটরবাইকে সওয়ার। বুধবার রাতে ১৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে, রামপুরহাট থানার কাবিলপুর ও ভোল্লা ক্যানাল মোড়ের মাঝামাঝি দুই বাইকের সজোরে মুখোমুখি ধাক্কা লাগে। তাতেই প্রাণ যায় তিন নাবালক-সহ ৫ জনের। দুই আহতের মধ্যে এক জন রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অন্য জনকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, মৃত মিসবাউল হক (১৬) ও রহমতুল্লা শেখ (১৭) মাড়গ্রাম থানার যশহরি গ্রামের বাসিন্দা। দু’জনেই স্থানীয় একডালা হাইস্কুলের ছাত্র ছিল। মিসবাউল নবম শ্রেণি, রহমতুল্লা পড়ত দশম শ্রেণিতে। মৃত বাকি তিন জনের মধ্যে নাসিম শেখ (২৩) ও আরিফ মহম্মদের (১৭) বাড়ি পাইকর থানার করমজি গ্রামে। মৃত পঞ্চম জনের নাম সামসুল হক (২৪)। মাড়গ্রাম থানার প্রতাপপুর গ্রামে তাঁর বাড়ি। এই তিন জনই পেশায় রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতেন মুম্বইয়ে। আরিফ ছিল সামসুলের ভাগ্নে। আর নাসিম ছিলেন আরিফ ও সামসুলের বন্ধু।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মহরম উৎসবের জন্য নাসিম, আরিফ ও সামসুল দিন কয়েক আগে মুম্বই থেকে নিজেদের গ্রামের বাড়িতে ফিরেছিলেন। মহরমের দিন বিকেলে তিন জনেই একটি মোটরবাইকে চেপে মাড়গ্রামে, সামসুলের দিদির বাড়িতে যান। সামসুলের দিদি দিলরুবা বিবি বলেন, ‘‘ভাই ও আরিফ এবং তাদের বন্ধু নাসিম, তিন জনেই আমার বাড়িতে খাওয়াদাওয়া সেরে রাত সাড়ে আটটা নাগাদ মাড়গ্রাম থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল। পরে শুনি, ফেরার পথে দুর্ঘটনা ঘটেছে।’’
অন্য দিকে, যশহরি গ্রামের বাসিন্দা স্কুলছাত্র মিসবাউল ও রহমতুল্লা রামপুরহাটে মহরমের শোভাযাত্রা দেখার জন্য বুধবার বিকেল ৫টা নাগাদ গ্রাম থেকে বেরিয়েছিল। তাদের সঙ্গী ছিল যশহরি গ্রামেই মাসির বাড়িতে আসা মাড়গ্রামের সরফুলা গ্রামের বাসিন্দা, স্থানীয় অনন্তপুর কানাইপুর হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র কাইফ শেখ। মিসবাউলের বাবা পেশায় চাষি ফজলুল হক ছেলেকে হারিয়ে আক্ষেপ করছেন, কেন তিনি নিজের মোটরবাইকের চাবি দিলেন তাকে। ফজলুলের কথায়, ‘‘ছেলেকে কোনও দিন একা মোটরবাইক চালাতে দিতাম না। মহরম দেখার জন্য বন্ধুদের সঙ্গে রামপুরহাটে যাওয়ার বায়না করছিল মিসবাউল। তাই ওকে বাইকের চাবি দিই। তার পরিণতি যে এমন হবে, সেটা কি ভাবতে পেরেছিলাম!’’
যশহরি গ্রামের মৃত আর এক নাবালক রহমতুল্লা শেখের বাবা, পেশায় চাষি গিয়াসউদ্দিন শেখ বলেন, ‘‘ছেলে বলেছিল, বন্ধুদের সঙ্গে মহরম দেখতে রামপুরহাট যাবে। মহরমের দিন যাচ্ছে দেখে আমিও মানা করিনি। এই ভাবে যে ছেলেকে হারাতে হবে, ভাবতে পারিনি।’’ মিসবাউল ও রহমতুল্লার সঙ্গে একই বাইকে ছিল সুরফুলা গ্রামের বাসিন্দা, নবম শ্রেণির ছাত্র কাইফ শেখ। সে রামপুরহাট মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন। কাইফ বলে, ‘‘মিসবাউল বাইক চালাচ্ছিল। রহমতুল্লা ছিল মাঝে। আমি পিছনে বসে ছিলাম। মিসবাউল খুব জোরে চালাচ্ছিল। আমি ওকে বারণ করেছিলাম। কিন্তু, শোনেনি। ভোল্লা ক্যানাল পেরনোর পরে কী ভাবে কী হয়েছে, বলতে পারব না।’’
ওই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন যশহরি গ্রামের রিপন শেখ। তিনি বর্ধমান মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন। রিপনের আত্মীয় কুতুবউদ্দিন শেখ জানান, দু’টি বাইকের ধাক্কা লাগার পরে পিছনে থাকা আর একটি বাইক একটি গাড়িতে ধাক্কা মারে। তাতে রিপনের আঘাত লাগে। তিনি বলেন, ‘‘চিকিৎসার পরে রিপন আপাতত সুস্থ আছে। তবে চোখের সামনে ওই ঘটনা দেখে সে আতঙ্কে আছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy