Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
বাধা ঠেলে এগোচ্ছে ওরা

পড়ার খরচের অঙ্ক মিলছে না

জটিল অঙ্ক ওরা কষে ফেলে অনায়াসে। কিন্তু মাধ্যমিকে ভাল ফল করে একটা অঙ্ক কষতে বসে থমকে যেতে হয়েছে। সেটা উঁচু ক্লাসে পড়ার খরচের অঙ্ক।

শ্রীরূপ নেমো, গুরুচরণ মাহাতো এবং রাজু সাও

শ্রীরূপ নেমো, গুরুচরণ মাহাতো এবং রাজু সাও

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৭ ০১:৪২
Share: Save:

জটিল অঙ্ক ওরা কষে ফেলে অনায়াসে। কিন্তু মাধ্যমিকে ভাল ফল করে একটা অঙ্ক কষতে বসে থমকে যেতে হয়েছে। সেটা উঁচু ক্লাসে পড়ার খরচের অঙ্ক।

বিষ্ণুপুরের জয়পুর থানার রাজগ্রাম শশিভূষণ রাহা ইন্সটিটিউটনের ছাত্র শ্রীরূপ নেমো। বাড়ি জয়পুর থানার গেলিয়া গ্রামের দক্ষিণ পাড়ায়। এ বার মাধ্যমিকে ৬৫৫ পেয়েছে শ্রীরূপ। তবে চলার পথটা সহজ ছিল না। এখনও অবশ্য নেই। তবুও দমে যেতে নারাজ ছেলেটি। অ্যাসবেসটসের ছাউনি দেওয়া মাটির বাড়ির দাওয়ায় বসে সে বলে, ‘‘উঁচু ক্লাসে পড়ার খরচ কোথা থেকে আসবে জানি না। তবে এটা জানি, লড়াইটা কখনও ছাড়ব না।’’ শ্রীরূপের বাবা অশ্বিনী নেমো দিন মজুরি করে সংসার চালান। ছেলের জন্য গৃহশিক্ষক রাখার সাধ্য ছিল না তাঁর। শ্রীরূপের মা মালবিকাদেবী বলেন, ‘‘স্কুলের স্যারেরা না থাকলে হয়তো ওর পড়াশোনাটাই বন্ধ হয়ে যেত।’’ তাঁরা জানান, এমনও দিন গিয়েছে, যখন শুধু মুড়ি খেয়েই তিন কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে স্কুলে চলে যেত শ্রীরূপ। কিন্তু শ্রীরূপের স্বপ্নের আইআইটি আরও দূরে। তার জন্য অভাবের সঙ্গে লড়াইটাও আরও কঠিন। সেই ভাবনাতেই এক চিলতে ঘরের পরিবেশটা সাফল্যের পরেও থম মেরে রয়েছে।

ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। বিঘে তিনেক জমিতে চাষ করে বছরের কয়েকটা মাস সংসার চলে। তার পরে লড়াই। বাঁচার লড়াই, আর তার সঙ্গে পড়াশোনাটা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার লড়াই। এ ভাবেই জঙ্গলমহলের বাঘমুণ্ডির বাঁধডি গ্রামের গুরুচরণ মাহাতো এ বছর মাধ্যমিকে পেয়েছে ৬৫০। গুরুচরণের বাবা কৃষ্ণচন্দ্র মাহাতো নিজে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। ইচ্ছে, ছেলেটাকে লেখাপড়া করান। আর গুরুচরণের ইচ্ছে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। কিন্তু কী ভাবে তার খরচ জোগাড় করবেন তা জানেন না তাঁরা। গুরুচরণ বলে, ‘‘বন্ধুদের থেকে বই ধার করে মাধ্যমিকটা হল। কিন্তু পরের লড়াইটা অনেক কঠিন।’’

বাঘমুণ্ডিরই পাটাহেঁসল গ্রামে বাড়ি রাজু সাওয়ের। মাধ্যমিকে ৬৬৬ পেয়েছে রাজু। স্কুলের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর তারই। বাবা সুনীল সাও স্নাতক। সংসার চালাতে গামছা ফেরি করেন। রাজু চায় ডাক্তার হতে। সুনীলবাবুও চান ছেলে পড়াশোনা এত দূর পর্যন্ত চালিয়ে যাক, যাতে ভবিষ্যতটা নিজের হাতেই গড়তে পারে। কিন্তু সেই চড়াইয়ের পথ দুর্গমও। রাজু বলে, ‘‘ডাক্তার হতে চাই। কিন্তু খরচের কথা ভাবলে সেই স্বপ্নটাও বিলাসিতা মনে হয়।’’

তবে লড়াই যতই কঠিন হোক, দাঁতে দাঁত চেপে যুঝতে প্রস্তুত ওরা।

অন্য বিষয়গুলি:

family Talent future study
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE