অকুস্থল: চৌবেটা সেতুর কাছে পড়ে রয়েছে মোটরবাইক। নিজস্ব চিত্র
মেলা দেখতে বিষ্ণুপুরে এসেছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার তিন বাসিন্দা। রবিবার সকালে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে বিষ্ণুপুরের চৌবেটা চেকপোস্ট সংলগ্ন ‘বড়পুলে’র নীচে তাঁদের দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। মৃতদের নাম কার্তিক পাল (৫১), শ্যামল ঘোষ (৩৯) ও অরুণ পাল (৩৯)। সকলেই বাড়ি ছিল গড়বেতা থানার পানিকোটর অঞ্চলের কড়সা গ্রামে।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি মোটরবাইক। পুলিশের অনুমান, শনিবার গভীর রাতে মোটরবাইকে চেপে বাড়ি ফিরছিলেন তাঁরা। সেতুর কাছে বাইকের নিয়ন্ত্রণ হারান চালক। বাইকটি সেতুর প্রায় ৩০ ফুট নীচে পড়ে যায়। তাতেই মৃত্যু হয় তিন জনের। যদিও ঘটনার কোনও প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যায়নি। তদন্ত চলছে। দুর্ঘটনাস্থলের ১ কিলোমিটারের মধ্যে কোনও গ্রাম নেই। কখন দুর্ঘটনাটি ঘটেছে তা-ও জানা নেই পুলিশের।
রবিবার স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা রক্তাক্ত অবস্থায় তিন জনকে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ওই তিন জনকে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই তাঁদের মৃত ঘোষণা করা হয়। মোটরবাইক থেকে একটি ব্যাগ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ব্যাগে রান্না করা মাংস ছিল। পুলিশ জানিয়েছে, কার্তিক ও শ্যামল চাষবাস করতেন। অরুণ ছিলেন পেশায় দর্জি।
মৃতদের পরিবার সূত্র উদ্ধৃত করে পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার বেলা ৩টে নাগাদ বাইকে চড়ে তিন জন বিষ্ণুপুরে ‘ভাঙামেলা’ দেখতে এসেছিলেন। রাতে বাড়ি না ফেরায় কার্তিকবাবুর ছেলে অভয় বিষ্ণুপুরে তাঁর মামার বাড়িতে ফোন করে খোঁজ নেন। বিষ্ণুপুর হাসপাতাল ও থানায় যোগাযোগ করেন ওই তিন জনের পরিবারের সদস্যেরা। রবিবার সকালে তাঁদের কাছে খবর যায়, তিন জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে বিষ্ণুপুরে। বিষ্ণুপুর হাসপাতালে এসে তাঁরা দেহগুলি শনাক্ত করেন। ময়না-তদন্তের জন্য বিষ্ণুপুর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে দেহগুলি।
বিষ্ণুপুরের এসডিপিও প্রিয়ব্রত বক্সী বলেন, “প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, চালক মোটরবাইকের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিলেন। এর পরে বাইক-সহ তাঁরা সেতু থেকে পড়ে যান।’’ তবে অন্য কোনও গাড়ির ধাক্কায় তাঁদের মোটরবাইক রাস্তা থেকে ছিটকে গিয়েছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। শনিবার রাতে রাস্তায় ঘন কুয়াশা ছিল। এক পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘এটাও হতে পারে যে, দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় বাইক চালক রাস্তা দেখতে পাননি। সেতুর পাশের ঢালু রাস্তা দিয়ে সোজা বাইক আছড়ে পড়ে পাথরের উপরে। তাতেই মৃত্যু হয় তিন জনের।’’
অরুণের সন্তানের অন্নপ্রাসন হওয়ার কথা কয়েকদিন পরেই। তার আগেই এই ঘটনায় পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে। তাঁর দাদা সমিত পাল বলেন, ‘‘সামনেই সন্তানের মুখে ভাত অনুষ্ঠান। তাঁর আগেই ভাই চলে গেল।’’ কার্তিকবাবুর দাদা বিনয় বলেন, “দিনের বেলা দুর্ঘটনা ঘটলে হয়ত ওদের চিকিৎসা করানোর সুযোগ থাকত।’’ মৃত শ্যামলবাবুর দাদা অশোক বলেন, “রাতটা বিষ্ণুপুরে কাটিয়ে সকালে বাড়ি ফিরলে দুর্ঘটনা ঘটত না।’’
রমজান আলি, গৌতম দে, সেখ ইয়ামিনের মতো এলাকার অনেকের অভিযোগ, রাস্তাটি সংকীর্ণ হওয়ায় মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে। এসডিপিও বলেন, ‘‘গাড়ি চালকদের সতর্ক করতে সেতুর দু’পাশে বোর্ড দেওয়া হয়েছে। রাস্তায় হাম্পও তৈরি হয়েছে। রাতে পুলিশের টহলও চলে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy