ভয়ের বড় কারণ সুনসান রাস্তাও। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
নেহাতই ছিঁচকে চুরি, কিন্তু সেই চুরির দাপটই মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে বোলপুর – শান্তিনিকেতনের পুলিশ প্রশাসনের। পুজোর আগে থেকেই চুরি বেড়েছে বোলপুর – শান্তিনিকেতনে। কোথাও রান্না ঘরের জানালার শিক বেঁকিয়ে ঘরের ভিতরে ঢুকে সর্বস্ব লুট করে নিয়ে পালিয়েছে দুষ্কৃতীরা, আবার কোথাও গ্যাস কাটার দিয়ে বারান্দা বা জানলার গ্রিল কেটে ঘরে ঢুকে পুরো বাড়ি তছনচ করে জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়েছে বলে অভিযোগ। দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে বিছানার চাদরে সব পোঁটলা বেঁধে নিয়ে যাওয়ার নজিরও আছে কিছু। চুরির মূলে যে বাসিন্দাদের বাড়ি ছেড়ে দূরে থাকা তা মানছেন চুরি হওয়া বাড়ির মালিকেরাই। চোরের দল সেটা রেকি করেই চুরি করে বলে প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান।
বোলপুর, শান্তিনিকেতন এলাকায় বহু বাড়িতে বাসিন্দারা নিয়মিত বসবাস না করায় এবং দেখভাল বা নজরদারির পাশাপাশি পুলিশকে বাড়ি ফাঁকা রাখার তথ্য না জানানোর জন্যই চোরেরা সহজে সুযোগ পায় বলে জেলা পুলিশের আধিকারিকদের একাংশেরও বক্তব্য। অধিকাংশ চুরির ঘটনাতেই চোরের দল খবরাখবর নিয়েই চুরি করেছে বলেও পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে অনুমান। এদিকে চুরির ঘটনা বাড়তে থাকায় এখন ফাঁকা বাড়ি রেখে বাইরে কোথাও যেতে ভয় পাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বোলপুর অধ্যাপক কলোনির বাসিন্দা সুবীর রায়, শুভাশিস দাস, মিনতি দাসরা বলেন, ‘‘চারিদিকে যেভাবে চুরির ঘটনা ঘটে চলেছে তাতে বাড়ি ফাঁকা ছেড়ে যেতেই ভয় হচ্ছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’’ এবার পুজোর আগে থেকে এখনও পর্যন্ত যে হারে পরপর ফাঁকা বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটেছে বছর খানেক আগেও চিত্রটা এমন ছিল না বলে জানিয়েছেন শান্তিনিকেতনের বাসিন্দা রবি বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘দিনের পর দিন চুরি বেড়েই চলেছে শান্তিনিকেতনে। কিছুদিন আগে শান্তিনিকেতনের অবনপল্লিতে লোক না থাকায় পরপর তিনটি বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটেছে। দিন কয়েক আগে আমার বাড়ি থেকে দুটি সাইকেল চুরি হয়ে গিয়েছে। আমরা চাই এই সমস্ত এলাকায় পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানো হোক।’’
পুলিশের কাছে নথিভুক্ত হওয়া অভিযোগের সংখ্যা বলছে, গত ছ’মাসে শান্তিনিকেতন ও বোলপুর থানা এলাকা মিলিয়ে ৭টি বাড়ি ও একটি স্কুলে তিনবার চুরির ঘটনা ঘটেছে। প্রথমটি শান্তিনিকেতন থানা এলাকার রতনপল্লিতে কুলপ্রসাদ সেনের ফাঁকা বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটেছিল, এরপর একইভাবে গত ১-২ মাস আগে শান্তিনিকেতনের অবনপল্লির বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে ওই পাড়ার একটি বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটেছিল। এরপর ৯অক্টোবর শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লিতে জিতেন্দ্রনাথ দত্তগুপ্তের বাড়ির চৌহদ্দি থেকে চন্দন গাছ চুরির অভিযোগ উঠেছিল দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। গত ২২অক্টোবর শান্তিনিকেতনের সীমান্তপল্লিতে বিশ্বভারতীর অধ্যাপক বিশ্বজিৎ সাহু বাড়িতে না থাকার সুযোগে দরজার তালা গ্যাস কাটার দিয়ে কেটে বাড়ি থেকে বেশ কিছু টাকা, দামি সরঞ্জাম নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল দুষ্কৃতীরা।
একইভাবে বোলপুর শহরেও কয়েক মাসের মধ্যে একাধিক চুরির ঘটনা ঘটতে দেখা গিয়েছে। এরমধ্যে বোলপুরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কালীমোহনপল্লিতে অর্জুনলাল নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়ের পাঁচিল টপকে দুষ্কৃতীরা স্কুলের অফিসঘর ও ক্লাসঘরের তালা ভেঙে লক্ষাধিক টাকার জিনিসপত্র এবং মিড ডে মিলের চালডাল নিয়ে পালায়। গত ৯জুলাই বোলপুর পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের স্কুল বাগানে বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক কর্মী সুব্রত বিশ্বাসের বাড়ির দরজা ভেঙে জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে বাড়িটিতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। এরপর ৫সেপ্টেম্বর বোলপুরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কালিকাপুরে অসীম দাসের বাড়িতেও একইভাবে চুরি হয়। সেখানেও গেটের তালা গ্যাস কাটার দিয়ে কেটে বাড়ির মধ্যে ঢুকে সর্বস্ব লুট করে নিয়ে পালানোর অভিযোগ উঠেছিল দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। ঠিক তারপরে ১৭অক্টোবর দুর্গাপুজোর ছুটিতে বাইরে থাকায় চুরির ঘটনা ঘটেছিল বোলপুরের ৭নম্বর ওয়ার্ডের সবুজপল্লিতে প্রশান্ত দাসের বাড়িতে। বাড়ির পিছনের দিক দিয়ে দুষ্কৃতীরা ঢোকে। দরজার তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে সব জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়। এর বাইরেও ছিঁচকে চুরির অভিযোগ আছে বেশ কিছু, যা থানায় নথিভুক্ত হয়নি।
অধিকাংশ ঘটনাই একই ধরনের হওয়া সত্ত্বেও বেশিরভাগেরই কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। তা নিয়ে যেমন ক্ষোভ আছে তেমনই বাসিন্দাদের উদাসীনতার দিকটিও আছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy